বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ০৯ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০

সহকারী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে লাখ টাকা নেয়ার অভিযোগ
মোঃ মঈনুল ইসলাম কাজল ॥

কর্তৃপক্ষের উদাসীনতায় শাহরাস্তি উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীতে অবস্থিত খিলাখাল ভাসমান সেচ প্রকল্প হুমকির মুখে আছে। এটি যথাসময়ে চালু না হওয়ায় প্রায় দেড় হাজার হেক্টর কৃষিজমিতে সেচ সঙ্কট তৈরি হয়েছে। ফলে শাহরাস্তি, কচুয়া, বরুড়া, লাকসাম, মনোহরগঞ্জ উপজেলার ৫০ হাজার কৃষক আসন্ন বোরো মৌসুমে ধান রোপণ নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে। এ নিয়ে কৃষকরা সেচ ম্যানেজারকে দায়ী করলেও প্রকল্প চালুতে বিএডিসি কর্মকর্তার অসহযোগিতা ও নগদ অর্থের দাবির কারণে পাম্প চালু হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন সেচ প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি) ১৯৯১ সালে চাঁদপুরের শাহরাস্তি ও কচুয়া, কুমিল্লার বরুড়া, লাকসাম ও মনোহরগঞ্জ উপজেলার কিছু অংশে ১ হাজার ৮শ’ ৫০ হেক্টর কৃষিজমিতে সেচের পানি সরবরাহের জন্যে শাহরাস্তি উপজেলায় ডাকাতিয়া নদীতে স্থাপন করে খিলাখাল ভাসমান সেচ প্রকল্প। আবাদি জমির পরিমাণ কমে যাওয়ায় বর্তমানে ওই প্রকল্পের অধীনে ১ হাজার ৫শ’ হেক্টর জমি রয়েছে। প্রতি বছর জানুয়ারির ১ম সপ্তাহে সেচ প্রকল্পটি চালু হলেও চলতি বছরে এখন পর্যন্ত প্রকল্পটি চালু হয়নি। ফলে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট এলাকায় পানি সঙ্কটে বোরো চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়েছেন কৃষকরা।

শাহরাস্তি উপজেলার রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়নের প্রসন্নপুর মাঠের কৃষক মোঃ জয়নাল আবেদীন জানান, খিলাখাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের ম্যানেজার পাম্প চালু না করায় আমরা ধান চাষ নিয়ে অনিশ্চয়তায় আছি। আশপাশের খাল ও পুকুরের পানি দিয়ে জমি প্রস্তুত করলেও চারা রোপণের পর পানি না পেলে জমি শুকিয়ে সেগুলো নষ্ট হয়ে যাবে।

একই মাঠের কৃষক মোঃ রবিউল হোসেন জানান, ইতোমধ্যে তারা বীজতলা থেকে চারা উঠিয়ে রেখেছেন, পানির অভাবে তা রোপণ করতে পারছেন না।

ওই ইউনিয়নের বিজয়পুর মাঠের কৃষক মোঃ হুমায়ুন কবীর জানান, পৌষ মাসের শেষের দিকে এসেও পানির অভাবে ধান রোপণ করতে পারছেন না তিনি। সেচ প্রকল্পের পানি না এলে এবার হয়তো ধান চাষ করা সম্ভব হবে না।

সেচ প্রকল্পের বিজয়পুর শাখা স্কীমের সভাপতি মোঃ ফজলুর রহমান জানান, এখন পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সেচ চালু হয়নি। কেন্দ্রীয় সেচ থেকে আমরা শাখা স্কীমের মাধ্যমে কৃষকদের পানি সরবরাহ করে থাকি। তিনি অভিযোগ করে বলেন, শাখা স্কীম পরিচালনা করার জন্যে একটি ডাবল লিফ্ট পাম্পের জন্যে জেলা সহকারী প্রকৌশলী আসিফ কামরুল আশ্রাফী তার কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা নিয়েছেন। তিনি গত ৪ মাসে পাম্প তো দূরের কথা, টাকার রসিদ পর্যন্ত দেননি।

সরজমিনে ডাকাতিয়া নদীর পাড়ে স্থাপিত খিলাখাল ভাসমান সেচ প্রকল্পের পাম্প সংলগ্ন নদীর পাড়ে গেলে দেখা যায়, অবহেলা ও অব্যবস্থাপনায় পানিতে অর্ধমগ্ন হয়ে আছে ২টি পাম্প। সেখানে কর্মরতরা জানান, পানিতে অর্ধেক ডুবে থাকা পাম্প ২টি বিএডিসি কর্মকর্তারা এসে নিয়ে যাওয়ার কথা। সাড়ে ১২ কিউসেক ডিজেল চালিত পাম্পটি ১০ বছর ধরে এখানেই পড়ে আছে। ৫ বছর আগে পাশর্^বর্তী চিতোষী সেচ প্রকল্প এলাকা থেকে ১০ কিউসেক ডিজেল চালিত আরেকটি পাম্প এখানে এনে রাখা হয়েছে, যা রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে পণ্টুনসহ নদীতে ডুবে যাচ্ছে। প্রকল্পের স্লুইচ গেটের অবস্থা খুব নাজুক। পানির চাপে তা বেশ ফাঁক হয়ে চুইয়ে পানি পড়ছে। সাড়ে ১২ কিউসেক বিদ্যুৎচালিত পাম্পটি পাশের ২টি পাম্প না সরানোর কারণে চালু করা সম্ভব হচ্ছে না। ইতোমধ্যে প্রায় ১০০টি সেকেন্ডারী পাম্প স্কীম ম্যানেজারদের জন্যে প্রস্তুত রাখার পরও কেন্দ্রীয় পাম্প চালু না হওয়ায় তা কাজে আসছে না।

মৌসুম শুরু হলেও এখন পর্যন্ত কেনো পাম্প চালুর উদ্যোগ নেয়া হয়নি জানতে চাইলে সেচ প্রকল্পের কেন্দ্রীয় ম্যানেজার ও রায়শ্রী দক্ষিণ ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান হাজী মোঃ আবু হানিফ জানান, বিএডিসির অসহযোগিতার কারণে পাম্প চালু অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। উপজেলা পর্যায়ে তাদের কোনো জনবল নেই বললেই চলে। জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী বারবার আমার কাছে টাকা দাবি করেন, অথচ বিএডিসি আমার কাছে কোনো টাকা পাবে না। গত বছর তিনি আমার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছেন, এ বছর আবার ২০ হাজার টাকা নিয়েছেন। কিন্তু পাম্প চালুর বিষয়ে কিছু বলছেন না। স্লুইচ গেইটটি যে কোনো সময় ভেঙ্গে সেচ প্রকল্প স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। এ ব্যাপারে বারবার মেরামতের কথা বললেও তিনি সাড়া দেননি।

আবু হানিফ আরো বলেন, বর্তমানে অচল ২টি পাম্প না সরালে সেচ শুরু করা সম্ভব হবে না। যা ডিসেম্বরে চালু করার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত চালু করা সম্ভব হয়নি। অকেজো হয়ে যাওয়া ৪টি মোটর বারবার ফেরত নেয়ার অনুরোধ করলেও তিনি সেটি ফেরত নিচ্ছেন না। অথচ বছর শেষে নষ্ট মেশিনের ভাড়া ঠিকই নিচ্ছেন। ওনার অনৈতিক দাবি পূরণ করতে পারছি না বলেই সেচ কার্যক্রম বন্ধের পথে।

চাঁদপুর জেলা বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী আসিফ কামরুল আশ্রাফী জানান, অচল পাম্পগুলো সরানোর দায়িত্ব সেচ ম্যানেজারের নিজের। সেগুলো তিনি নিজে নিয়েছেন, নিজ দায়িত্বে দাফতরিকভাবে ফেরত দিবেন। দুই বারে ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, টাকা দিয়ে থাকলে ম্যানেজার বৈধ ডকুমেন্ট দেখাক। এ প্রকল্প বাবদ বিএডিসি কর্তৃপক্ষ ম্যানেজারের কাছে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা পাবে। তিনি কৃষক থেকে ঠিকই টাকা নিচ্ছেন কিন্তু বিএডিসিকে পরিশোধ করছেন না। বিজয়পুর স্কীম ম্যানেজারের কাছ থেকে ডাবল লিফ্টিং পাম্প বাবদ ৫০ হাজার টাকা গ্রহণের বিষয়ে তিনি বলেন, এ সংক্রান্ত ডিমান্ড নোট পেয়েছেন। বিষয়টি নিয়ে ফজলু সাহেব কথা বললেই হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়