প্রকাশ : ০২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ২০:২৯
পদত্যাগের দাবি শিক্ষার্থীদের
হায়দারগঞ্জ কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষের বিরুদ্ধে বহু অনিয়মের অভিযোগ
লক্ষীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার হায়দারগঞ্জ তাহেরিয়া আর এম কামিল মাদ্রাসার প্রভাবশালী অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদারের পদত্যাগের দাবি তুলেছেন মাদ্রাসার বর্তমান ও
প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা।
১ সেপ্টেম্বর সোমবার শিক্ষার্থীরা ক্লাসে অংশগ্রহণ না করে মাথায় জাতীয় পতাকা বেঁধে হ্যান্ড মাইক নিয়ে মাদ্রাসার সামনে স্লোগান দিতে দিতে জড়ো হতে থাকেন। এমন সংবাদ বাজার এলাকা ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে বর্তমান সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একটা বড়ো অংশ যোগ দেন।
শিক্ষার্থীরা সবার সামনে মাইকে 'লেগেছে রে লেগেছে--রক্ত আগুন লেগেছে, দফা এক দাবি এক প্রিন্সিপালের পদত্যাগ' সহ আরও স্লোগানে স্লোগানে সারাদিন মাদ্রাসার সামনে অবস্থান নেন।
২ সেপ্টেম্বর পুনরায় সকাল নয়টা থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থী সহ মাদ্রাসার প্রাক্তন শিক্ষার্থীরাও আন্দোলন শুরু করেন। স্লোগানে স্লোগানে মাদ্রাসার আশপাশের এলাকায় থমথমে অবস্থা তৈরি হয়।এলাকার সংবাদকর্মীরা মাদ্রাসায় অধ্যক্ষের অফিস রুমে গিয়ে মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদারকে না পেয়ে তার মুঠোফোনে কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেন। কিন্তু অধ্যক্ষের মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। কোনোভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা হ্যান্ড মাইকে অধ্যক্ষ মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদারের ২০টি অনিয়ম প্রকাশ করেন। তাদের দাবি, একটা প্রতিষ্ঠানের প্রধান হয়ে এতো অপকর্ম করলে আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই আমরা আজ রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি।
মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের প্রকাশ করা অধ্যক্ষ আব্দুল আজিজ মজুমদারের কৃত অনিয়ম সমূহ হচ্ছে :
শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বিভিন্ন খাতে অতিরিক্ত টাকা গ্রহণ ও সরকারি টাকা সবাইকে না দেয়া;
অযৌক্তিকভাবে মেধাবী ছাত্রদের বহিষ্কার করা;
ব্যক্তিগত আক্রোশের কারণে অন্যায়ভাবে কয়েকজন ছাত্রের কেন্দ্রীয় পরীক্ষার রেজিস্ট্রেশন আটকে দেয়া; শিক্ষার্থীদের ওপর অমানবিক নির্যাতন এবং আহত করা; বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে ছাত্রদের বহিষ্কার করার হুমকি প্রদান ও মসজিদে দাঁড়িয়ে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করা; শিক্ষার্থীদের নিয়মতান্ত্রিক খেলাধুলায় হস্তক্ষেপ এবং এতদ্ সংক্রান্ত টাকাপয়সা আত্মসাৎ করা; সরকারি বই- বাণিজ্য করে হাজার হাজার টাকা আত্মসাৎ করা; প্রতিষ্ঠানের রেজাল্টের চরম অবনতি; প্রাক্তন এক শিক্ষার্থী অনিয়ম সংক্রান্ত যৌক্তিক আলোচনা করায় সেজো হুজুরের বরাত দিয়ে ঐ শিক্ষার্থী ও তার অভিভাবককে হুমকি প্রদান ও সামাজিকভাবে হেনস্তা করা;
শিক্ষক নিয়োগে সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারী আচরণ করা; করোনাকালীন সময়ে মাদ্রাসা ও ছাত্রাবাস বন্ধ থাকা সত্ত্বেও ছাত্রাবাসের ফান্ড থেকে টাকা আত্মসাৎ করা;
সম্মানিত শিক্ষকবৃন্দের সাথে অশালীন আচরণ ও তুচ্ছ কারণে শোকজ করা; সরকারি বেতন-ভাতার বাইরে মাদ্রাসা থেকে প্রদেয় শিক্ষকদের নির্ধারিত ৩২ মাসের বেতন বাকি রাখা; সরকার থেকে রি-ফান্ড করা শিক্ষার্থীদের প্রাপ্য টাকা সবাইকে না দেয়া; নিয়োগের পর থেকে সরকার ও মাদ্রাসা উভয় ফান্ড থেকে বাড়ি ভাড়া বাবদ টাকা গ্রহণ করা; মাদ্রাসা, মসজিদ, ছাত্রাবাস এবং মাদ্রাসা মার্কেটের আয়-ব্যয়ের সম্পূর্ণ হিসেব ইচ্ছাকৃতভাবে গোপন রাখা; প্রভাব খাটিয়ে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত মাদ্রাসায় কোনো অডিট কার্যক্রম করতে না দেয়া ও সম্পূর্ণ টাকাপয়সা নিজের খেয়ালখুশি মতো খরচ ও আত্মসাৎ করা; অভিভাবকদের সাথে পুরুষ-মহিলা নির্বিচারে খারাপ আচরণ এবং তাদেরকে জঘন্যভাবে অপমান করা; যে কোনো ঘটনায় নিজের ব্যর্থতাকে আড়াল করার জন্যে সীমাহীন মিথ্যাচার এবং প্রতারণার আশ্রয় নেয়া;
সম্মানিত সিনিয়র শিক্ষকদের হেয় করার জন্যে অপেশাদার আচরণ করা; ছাত্র, শিক্ষক ও অভিভাবক নির্বিশেষে সকলকে হুমকি ধমকি দিয়ে প্রতিষ্ঠানে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করা।শিক্ষার্থীরা বলেন, উপরোল্লিখিত কারণে আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা অধ্যক্ষ মাওলানা আবদুল আজিজ মজুমদারের নিঃশর্ত পদত্যাগ দাবি করছি।তাছাড়াও সঠিক তদন্ত হলে তার আরও গোপন অপকর্ম বেরিয়ে আসবে। যতদিন মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদার পদত্যাগ না করবেন, ততদিন পর্যন্ত আমরা ক্লাসে যাবো না।আমরা চাই আমাদের পাশে সবাই দাড়াবেন।
স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের পর্যবেক্ষণে উঠে আসে যে, হায়দারগঞ্জ বাজার এলাকার সাধারণ মানুষ, মাদ্রাসার শিক্ষক ও অভিভাবকদের শিক্ষার্থীদের পক্ষে মৌন সমর্থন রয়েছে।
মাদ্রাসার অভিভাবক সহ স্থানীয় বাজার ব্যবসায়ীরা বলেন,২০০৯ থেকে এই পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ছিলো।মোহাম্মদ আবদুল আজিজ মজুমদারও আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর পর নিয়োগ প্রাপ্ত হন।এই মাদ্রাসা অনেক সুনামের সাথে চলে আসছিলো, কিন্তু তিনি যোগদান করার পর সব আস্তে আস্তে এলোমেলো হতে শুরু করলো। শুনেছি বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় তিনি ছাত্র-ছাত্রীদের তালিকা করেছেন থানায় জমা দেওয়ার জন্যে। তাছাড়াও তার অনেক ছোট-বড় অপকর্মের কথা কম- বেশি সবাই জানে।
একজন শিক্ষক নাম- পরিচয় না দিয়ে বলেন, আসলে বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ ইসলামকে অনেক শ্রদ্ধা করে।সেই সাথে সাথে ইসলামের কথা বলা হুজুরদেরও প্রচুর পরিমাণ ভালোবাসে।সেই শ্রদ্ধা থেকেও অনেকে উনার অপকর্ম জানার পরও কিছু বলে না। কিন্তু, উনি যখন আওয়ামী লীগের প্রভাব, খারাপ আচরণ সহ সরাসরি যে কোনো ব্যাপারে হুমকি ধমকি দেন, তখন কিছু কিছু ব্যাপার প্রকাশ্যে চলে আসে। এলাকার বেশির ভাগ শিক্ষকও চান এই অধ্যক্ষ পদত্যাগ করুক।