বুধবার, ১৫ জানুয়ারি, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কুমিল্লা সীমান্তে পুকুরে দেয়াল নির্মাণ করছে বিএসএফ, সতর্ক অবস্থানে বিজিবি
  •   টিউলিপ সিদ্দিকের পদত্যাগের দাবির মধ্যে নতুন বিতর্ক
  •   স্বামী বিবেকানন্দের জন্মদিনে হাজীগঞ্জ রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের শীতকালীন ত্রাণসেবা
  •   খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য স্থিতিশীল, করা হবে বিশেষ কিছু পরীক্ষা
  •   সীমান্তে অস্থিরতা: পাগল বেশে ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ কারা?

প্রকাশ : ১৩ জুন ২০২৪, ০০:০০

খাদ্য উৎপাদন বাড়াতে ভূমিকা রাখছে কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া সেচ উন্নয়ন প্রকল্প

২৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের পাশাপাশি আমনে সম্পূরক সেচ

স্টাফ রিপোর্টার ॥
২৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের পাশাপাশি আমনে সম্পূরক সেচ

কুমিল্লার বুড়িচং উপজেলার রাজাপুর ইউনিয়নের কৃষক আতিকুল ইসলাম জানান, এক সময় এই এলাকায় জলাবদ্ধতা ছিল অভিশাপ। কচুরিপানা আর কোমর পানি ঠেলে জমিতে ফসল ফলাতে হতো। প্রায় সারা বছরই থাকত কচুরিপানা। চাষ করা যেত না। আমরা সেই অভিশাপ থেকে মুক্তি পেয়েছি। বিএডিসি খাল খনন করায় জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। এখন বিস্তীর্ণ এলাকাজুড়ে ধানের চাষ হচ্ছে।

ওই উপজেলা সদর, বাকশীমুল, ষোলনল ও রাজাপুর ইউনিয়নের বিশাল অংশের কৃষকের কাছে এক সময় ‘দুঃখের’ নাম ছিল পয়াতের জলা। সেখানকার তিন একর জমির মালিক আব্দুল হক। তিনি বলেন, ‘এ জমিতে আগে আউশ ধান চাষ করেছিলাম, সে ধান পানিতে তলিয়ে যেত। বর্ষায় খাল উপচে জমি পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় এক ছটাক ধানও ঘরে তুলতে পারেননি। কিন্ত এখন আর সে চিন্তা নেই।’

শুধু আতিকুল বা আব্দুল হকই না, ওই অঞলের ২৩ হাজার ৭২৫ হেক্টর জমিতে বোরো ফসলের পাশাপাশি আমনে সম্পূরক সেচ এবং শাক-সবজির জমিতে ভূ-উপরিস্থ পানি নির্ভর সেচ সুবিধা থাকার ফলে বছরে ১ লক্ষ ১৮ হাজার ৬২৩ মেট্রিক টন খাদ্য শস্য উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন ‘কুমিল্লা-চাঁদপুর-ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা সেচ এলাকা উন্নয়ন প্রকল্প’-এর মাধ্যমে ৩টি জেলার (কুমিল্লা, চাঁদপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া) ৩৪টি উপজেলার কৃষি ও কৃষকের জীবনমান উন্নয়নে প্রকল্পটি চলতি জুনে শেষ হয়েছে।

প্রকল্প এলাকার উপকারভোগীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রকল্পটি ইতোমধ্যে কৃষক পর্যায়ে বেশ সাড়া ফেলেছে। প্রকল্পের আওতায় কৃষকের চাহিদা অনুসারে বিভিন্ন ধরনের সেচযন্ত্র সরবরাহ ও ইউপিভিসি পাইপ দ্বরা ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা (বারিড পাইপ) নির্মাণের ফলে কৃষক পর্যায়ে সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে। অবকাঠামোসহ ভূ-গর্ভস্থ ড্রেনেজ পাইপ লাইন নির্মাণের ফলে কৃষিজমির জলাবদ্ধতা দূর হয়েছে। অনাবাদী ও এক ফসলি জমিগুলো দুই ও তিন ফসলি জমিতে পরিণত হয়েছে।

প্রকল্প এলাকার ভরাট হওয়া খালগুলো পুনঃখননের ফলে কৃষি জমির জলাবদ্ধতা দূর হওয়ার পাশাপাশি সেচের পানির ‘প্রাপ্যতা’ বেড়েছে। যাতে করে স্বল্প খরচে সেচ সুবিধা পাওয়া সম্ভব হচ্ছে। ফলে নির্বিঘ্নে রোপা আমনসহ পরে আলু, বেগুন, শিম, লাউ, বরবটি, শসা, তরমুজ, খিরা, বাঙ্গি, সরিষা ইত্যাদি বিভিন্ন ধরনের সবজি এবং তৈল ও মসলা জাতীয় ফসল আগাম উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

আগাম ফসল উৎপাদনের সুযোগ সৃষ্টি হওয়ায় কৃষকরা ভাল দাম পাওয়ার আশায় প্রতিটি জমিতে ধান চাষের পাশাপাশি লাভজনক শাক-সবজি উৎপাদনে আগ্রহী হচ্ছে।

প্রকল্প সূত্রে জানাগেছে, ২৪ সালের মে পর্যন্ত প্রকল্পটির আওতায় লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ৫০টি ১ কউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন সোলার এলএলপি স্থাপনসহ প্রতিটিতে ১০০০ মিটার করে মোট ৫০ কিমি ইউপিভিসি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা (ব্যারিড পাইপ) নির্মাণ করা হয়েছে। ১৬৯টি ১,২ ও ৫-কিউসেক ক্ষমতা সম্পন্ন বৈদ্যুতিক পাম্প মটর সরবরাহ করা হয়েছে যার প্রতিটিতে ১০০০মিটার/১২০০মিটার করে মোট ১৭৯ দশমিক ৮০ কিমি ইউপিভিসি ভু-গর্ভস্থ সেচনালা (বারিড পাইপ) নির্মাণ করা হয়।

৮৫টি ২ কিউসেক পুরাতন ফোর্সমোড গভীর নলকূপ স্কিমে প্রতিটিতে ১০০০ মিটার করে মোট ৮৫ কি.মি. ইউপিভিসি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা (ব্যারিড পাইপ) নির্মাণ, বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে স্থাপিত ২৫৩টি পুরাতন ২/৫-কিউসেক বৈদ্যুতিক এলএলপি/গণকূপ স্কিমে প্রতিটিতে ৪০০ মিটার করে মোট ১০১ দশমিক ২০ কিলোমিটার ইউপিভিসি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা (ব্যারিড পাইপ) বর্ধিত করা হয়ছে। অর্থাৎ, প্রকল্প এলাকার বিভিন্ন সেচযন্ত্রের স্কিমে পানি সাশ্রয়ী মোট ৪১৬ কিলোমিটার ইউপিভিসি ভূ-গর্ভস্থ সেচনালা (ব্যারিড পাইপ) নির্মাণ করা হয়েছে।

৩০টি সৌরশক্তি চালিত ডাগওয়েল স্থাপনসহ প্রতিটিতে ড্রিপ সেচ পদ্ধতির স্থাপন ৬৩০ কিলোমিটার সেচ ও নিষ্কাশনযোগ্য খাল পূন:খনন, ৪০ কিমি ফসল রক্ষা বাঁধ নির্মাণ, ফসলি জমির জলাবদ্ধতা দূরীকরণের জন্য ২৯কি.মি. অবকাঠামোসহ ভূগর্ভস্থ ড্রেনেজ পাইপ লাইন নির্মাণ করা হয়।

৩টি ওভারহেড ইউপিভিসি চ্যানেল (প্রতিটি ৮০ মিটার) নির্মাণ, ৬টি স্প্রিংকলার সেচ পদ্ধতির প্রদর্শনী প্লট স্থাপন ও এক হাজার ৪৩৪টি বিভিন্ন ধরনের সেচ অবকাঠামো (সেচের পানির নিয়ন্ত্রণ/ ধারক অবকাঠামো, বড়/মাঝারি/ ছোট স্ট্রাকচার ও কন্ডুইট/ওয়াটার পাস ইত্যাদি) নির্মাণ শতভাগ শেষ হয়েছে।

তাছাড়া আশুগঞ্জ উপজেলায় ইউনিট অফিস ও ট্রেনিং সেন্টারের নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে যার ইতোমধ্যে ৭০ শতাংশ কাজ সম্পাদন হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন উপজেলায় মোট ১০টি ইউনিট অফিস কাম ট্রেনিং সেন্টার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে যা সংশ্লিষ্ট উপজেলাসমূহে বিএডিসির ভাবমূর্তি বৃদ্ধি করেছে। বর্ণিত উন্নয়নমূলক কাজসমূহ বাস্তবায়নের ফলে প্রকল্প এলাকার এক ফসলি জমিকে দুই ও তিন ফসলি জমিতে রূপান্তরসহ মোট ২৭ হাজার ২২৭ হেক্টর জমিতে সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে এবং প্রায় ১ লাখ ২১ হাজার ১৩২ জন কৃষক প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে উপকৃত হচ্ছে।

প্রকল্প পরিচালক (পিডি) প্রকৌশলী মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রকল্পের কার্যক্রম বাস্তবায়নের মেয়াদ ৫ বছর হলেও মাত্র সাড়ে চার বছরেই মধ্যেই ডিপিপি/আরডিপিপি’র সংশোধিত লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী শতভাগ কাজ বাস্তবায়ন করা হয়েছে যা এ অঞ্চলের কৃষকদের জীবনমান ও আর্থ সামাজিক উন্নয়নের ভূমিকা রাখছে।’

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়