শুক্রবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড়ে 'আল্লাহু চত্বর'
  •   চাঁদপুর কণ্ঠৈর কলামিস্ট এএসএম শফিকুর রহমানের ইন্তেকাল
  •   নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের দায়িত্ব পেল সেনাবাহিনী
  •   জুলাই শহীদ স্মৃতি ফাউন্ডেশনে’ প্রধান উপদেষ্টার ১০০ কোটি টাকার অনুদান
  •   মেঘনায় নিখোঁজ দুই ভাইয়ের মরদেহ উদ্ধার

প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

চাঁদপুর কণ্ঠের মুখোমুখি ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ

জনগণের জন্যে মন থেকে ভালো কিছু করতে চাইলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সাহায্য করেন

চাঁদপুর কণ্ঠ রিপোর্ট ॥
জনগণের জন্যে মন থেকে ভালো কিছু করতে চাইলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সাহায্য করেন

‘নিজের নামে শাহজাদা’ এমন প্রবাদ বাক্যের অনুকূলে সরল পথে হাঁটা এক তরতাজা যুবকের নাম ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ। ডাকনাম রাসেল সরকার। গ্রামের বাড়ি তথা পৈত্রিক নিবাস তাঁর চাঁদপুরের নদীভাঙ্গন পীড়িত জনপদ হাইমচরে। মেঘনার গর্জন কানে তাঁর প্রতিনিয়ত আঘাত না করলেও হাইমচর-চাঁদপুর মনের ভেতরে দ্যোতনা সৃষ্টি করে প্রতিনিয়ত। তাই তো রাজধানীতে থেকেও সেই দ্যোতনার আত্যন্তিকতা প্রগাঢ়ভাবে অনুভব করতে গড়ে তুলেছেন ‘আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশন’। সময় ও সুযোগের সমন্বয়ে শুধু চাঁদপুর নয়, বৃহত্তর কুমিল্লার লোকজনকে একত্রিত করে ঢাকা ও অন্যত্র আয়োজন করেন কিছু কার্যক্রম।

এটা অস্বীকার করার জো নেই যে, ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহ তাঁর পরম শ্রদ্ধেয় বাবা আলহাজ্ব কায়কোবাদ চুন্নুর নামে নিজ এলাকায় আঞ্চলিক প্রবাদ অনুযায়ী ‘আধা’। কেননা তাঁর বাবা ‘চুন্নু সরকার’ ছিলেন ডাকসাইটে রাজনৈতিক নেতা, যিনি জেল-জুলুম সয়েও জনস্বার্থে নিজের প্রতিবাদী অবস্থান থেকে সরেননি একচুলও। তাই তো বারবার হয়েছেন জনপ্রতিনিধি। হাইমচর উপজেলা পরিষদের নির্বাচিত চেয়ারম্যান হয়েও তিনি মেঘনার করাল গ্রাস থেকে হাইমচরকে রক্ষায় আন্দোলনরত জনতার কাতারে একাত্ম হয়েছেন নির্দ্বিধায়। এজন্যে বরখাস্ত হয়েছেন, জেল খেটেছেন, উপনির্বাচনে জয়ী হয়ে চমক দেখিয়েছেন, যেটি পুরো দেশবাসীকে করেছিলো আলোড়িত। তাঁরই জ্যেষ্ঠপুত্র হামিদুল মিসবাহ ওরফে রাসেল সরকার। বাবার ন্যায় রাজনীতিতে সক্রিয় না থাকলেও অনেক বেশি যে রাজনৈতিক মনস্ক ও কল্যাণবুদ্ধ সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তাইতো ঢাকায় ঢাকা না থেকে নিজের প্রকৃত খোলস উন্মোচন করে চলছেন ' আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশনে'র ব্যানারে। গত ৮ মার্চ ২০২৪ শনিবার তিনি গান্ধী আশ্রম ট্রাস্টের সহযোগিতায় হাইমচরের দুর্গম চরাঞ্চল নীলকমল ইউনিয়নের সাহেববাজারে অনুষ্ঠিত মেডিকেল ক্যাম্পে সম্ভাব্য সকল পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করেন এবং ‘আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশনে’র চমৎকার লোগো অঙ্কিত টি-শার্টে সুসজ্জিত স্বেচ্ছাসেবক নিয়োগ দিয়ে শৃঙ্খলা বজায় ও চিকিৎসাসেবা কার্যক্রম নির্বিঘ্ন রাখেন। সর্বোপরি হৃদ্যতাপূর্ণ আতিথেয়তা প্রদর্শন করেন। যার ফলে মেডিকেল ক্যাম্প আয়োজক হিসেবে আগত রোটারী ক্লাব অব মুক্ত স্বদেশ ও চাঁদপুরের কর্মকর্তাসহ সদস্যরা চরাঞ্চলে আসতে দুর্গম পথ পাড়ি দেবার কষ্ট ভুলে যান।

ব্যারিস্টার হামিদুল মিসবাহর মুখোমুখি হয় চাঁদপুর কণ্ঠ কিছু প্রশ্ন নিয়ে। তিনি যেভাবে জবাব দিয়েছেন, সেভাবে তা পত্রস্থ করা হলো নিচে--

চাঁদপুর কণ্ঠ : চরম পেশাগত ব্যস্ততায় জনকল্যাণে কিছু করাটার তাগিদ অনুভব করেন মূলত কোন্ কারণে?

হামিদুল মিসবাহ : আমি সবসময় একটা কথা মনে রাখি, সেটা হলো, আমাকে আমার পরিবার ইংল্যান্ডে বার-এট-ল’ পড়তে পাঠানোর মূল উদ্দেশ্য আমার ব্যক্তিগত বা আমার পরিবারের নিজস্ব স্বার্থ বা ঐতিহ্যের কারণে নয়। বরং আমি যাতে বার-এট-ল’ পড়ে এসে আমার পেশাগত ও রাজনৈতিক দিক থেকে আমাদের এলাকার জনমানুষের কল্যাণের জন্যে ভূমিকা রাখতে পারি, সমাজের পিছিয়ে পড়া মানুষদের জন্যে একটা সহায়ক ভূমিকা পালন করতে পারি এবং তাদের আস্থা ও ভরসার স্থান হাতে পারি, যাতে করে তারা নিজেদেরকে কখনো অসহায় বা গুরুত্বহীন মনে না করে। এই কারণে আমি মনে করি, আমার অস্তিত্ব ব্যক্তিগত নয় বরং জনমানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। জনমানুষের ভোগান্তি যেটা দৃশ্যমান, সেটা আমাকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দেয়। সেদিক থেকেই জনকল্যাণকর কাজ করার তাগিদ আমাকে তাড়া করে ফিরে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : ‘আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশন’ গড়ার মূল উদ্দেশ্য কী? উদ্দেশ্য সাধনে অগ্রগতি কেমন?

হামিদুল মিসবাহ : আমরা চাঁদপুর ফাউন্ডেশনের যাত্রা খুব পুরানো নয়। উদ্দেশ্য জনমানুষের জন্যে কাজ করা। আমরা চাঁদপুর তরুণ প্রজন্ম, যুবক ও ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে কাজ করছে ও করবে। তাদের মধ্যে স্বেচ্ছাসেবী নেতৃত্বের বোধ, সচেতনতা, তথ্য প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান, উদ্ভাবনী বা সৃজনশীল শক্তি গড়ে তোলার মাধ্যমে কর্মসংস্থান গড়ে তোলা এবং সর্বোপরি বাংলাদেশের সর্ব পর্যায়ে চাঁদপুরের প্রতিনিধিত্ব বাড়ানো। আমরা চাঁদপুরের উদ্দেশ্য কয়েক মাসে বা বছরে পূরণ হবে না। এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া। চাঁদপুরের জনমানুষ যতো বেশি আমাদের কার্যক্রমের সাথে সম্পৃক্ত হবে, বা আমরা করতে পারবো, উদ্দেশ্য তত বেশি ও দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : বাবার ন্যায় রাজনীতিতে সক্রিয় হবার চিন্তাভাবনা আছে কি?

হামিদুল মিসবাহ : আমি রাজনীতিতে সবসময়ই সক্রিয়। আমি রাজনীতিকে ভিন্ন ভাবে দেখি ও অনুধাবন করি। রাজপথে থাকা যেমন একধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড যা দৃশ্যমান, আবার রাজপথে না থেকে, গতানুগতিকতার বাইরে এসেও রাষ্ট্র পরিচালনার বিভিন্ন বিষয়ে সরকারের নীতিগত উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করাও রাজনীতি, যা কম দৃশ্যমান। বর্তমান সরকারের উল্লেখযোগ্য একটি উদ্যোগ ছিলো 'ডিজিটাল বাংলাদেশ' বাস্তবায়ন, যার মূল স্তম্ভ ছিলো তথ্য প্রযুক্তি নীতিমালা ২০০৯। আমি ২০০৯ সালে এই নীতিমালা তৈরি করার জন্যে প্রফেসর জামিলুর রেজা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত ড্রাফটিং কমিটির ২০ সদস্যের একজন ছিলাম, এবং আমিই ছিলাম সর্বকনিষ্ঠ। সরকারের বর্তমান পদক্ষেপ স্মার্ট বাংলাদেশ উদ্যোগের সঙ্গেও আমাকে সংশ্লিষ্ট করা হয়েছে। এর বাইরেও বিগত ১৫ বছরে করা সরকারের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নে প্রণীত বিভিন্ন নীতি ও আইনি কাঠামো তৈরির সাথে আমি সম্পৃক্ত ছিলাম, যা রাজনীতিরই একটি অবিচ্ছেদ্য ও জরুরি অংশ। তবে আমার বাবার মতো রাজনীতি অবশ্যই করতে চাইবো জনমানুষের কল্যাণের কথা মাথায় রেখে। আমি মনে করি, রাজনীতি, যা মূলত নীতির রাজা, সুন্দর, সুশ্রী ও কলুষতা মুক্ত হয়ে করলে এর চেয়ে বেশি জনকল্যাণকর কিছু হতে পারে না। সময় ও সুযোগ সবার জন্যেই উন্মুক্ত।

চাঁদপুর কণ্ঠ : রাজনীতিতে সক্রিয় না থেকেও নিজ এলাকার জন্যে বিশেষ করে সাধারণ মানুষের জন্যে কাজ করতে সুবিধা কী, আর অসুবিধাটা কী?

হামিদুল মিসবাহ : রাজনীতিতে থেকে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে গেলে অনেক প্রটোকল মেনে করতে হয়। চাইলেই সব নিজ ইচ্ছামতো করা যায় না। কিন্তু মানুষের সমস্যা, কষ্ট প্রটোকল মেনে আসে না। তাই এগুলোর সমাধান প্রটোকলের কথা মাথায় রেখে দিতে হলে বড্ড দেরি হয়ে যায়। অনেক সমাধান আছে যা ব্যক্তিগত পর্যায় থেকে দেয়া যায়। চাইলেই যে কোনো দিন বা সময় জনকল্যাণকর কাজ করা যায়। এগুলো সুবিধার দিক। অসুবিধা হলো রাজনীতির বাইরে থেকে জনকল্যাণমূলক কাজ করতে গেলে অনেক প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। প্রশাসনিক সহযোগিতা, সঠিক লোকবল, অর্থের যোগান, জনগণের প্রত্যাশা অনুযায়ী প্রাপ্তি পূরণ করার সক্ষমতা সহ বিভিন্ন ধরনের প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। তবে জনগণের জন্যে মন থেকে ভালো কিছু করতে চাইলে স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা সাহায্য করেন। কোনো প্রতিবন্ধকতাই সমস্যা হয় না। অনেক কিছুই করা সম্ভব।

চাঁদপুর কণ্ঠ : জনস্বার্থে আপনার বাবার ব্যক্তিস্বার্থ জলাঞ্জলি ও ত্যাগ শিকার হাইমচরসহ সন্নিহিত জনপদে কিংবদন্তির ন্যায়। আপনার অনুভূতি কী?

হামিদুল মিসবাহ : আমি গর্বিত বোধ করি। বাবার কাজ আমাকে সাহস যোগায়, অনুপ্রাণিত করে। মনে করিয়ে দেয় আমি কে এবং আমাকে কী করতে হবে, বা জনমানুষের জন্যে আমার কী করা উচিত। আমার বাবার প্রতি মানুষের শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা আমাকে খুব আলোড়িত করে ও উৎসাহ যোগায়। আমার বাবার দর্শন ও জনমানুষের জন্যে ভাবনাই আমার পেশাগত বা রাজনৈতিক পথ কেমন হবে তা এঁকে দিয়েছে। আমি চাইলেই অন্য আট দশজন রাজনীতিক কী করছে বা করলো তা করতে পারি না, আমার বাবার আদর্শ ও আমার প্রাতিষ্ঠানিক ও সামাজিক শিক্ষা আমাকে সবসময় আমার অবস্থান ও করণীয় মনে করিয়ে দেয় যে, আমার পথচলা হবে জনগণের কল্যাণের জন্যে, তাদের আস্থা ও আশার আশ্রয়স্থল হয়ে থাকার জন্যে।

চাঁদপুর কণ্ঠ : আপনার বাবার কোনো চাওয়া বা ইচ্ছার কথা কি মনে পড়ে?

হাদিদুল মিসবাহ : আমি বার-এট-ল’ পাস করে দেশে ফিরে আসার পর আমার বাবা আমার সার্টিফিকেট দেখতে চান। আমি ওনার হাতে সার্ফিকেটটি দেই। তিনি তখন আমাকে বলেন, আমাকে একটা কথা দাও যে, আমাদের এলাকা থেকে কোনো মানুষ মামলা নিয়ে তোমার কাছে গেলে তুমি তাদের কাছ থেকে কোনো ফীস নিবে না, এটা আমার দাবি। সে কারণে আমি কখনও আমাদের এলাকার লোকজনদের কাছ থেকে কোনো ফীস নেই না। নিতে পারি না। কারণ, যাদের কাছ থেকে নিবো তারাতো আমার পরিবারেরই অংশ। যাদেরকে দেখে আমি বড় হয়েছি, যারা আমাকে বেড়ে উঠতে দেখেছে, আমি তাদের কাছ থেকে কীভাবে টাকা নেই, এটা আমি পারি না। কেউ যদি আমার বা আমাদের রাজনৈতিক নীতির বাইরের মানুষও হয়, সেও বিনা ফীসে আমার কাছ থেকে আইনী পায়। আমি প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১৫ জন মানুষকে বিনা ফীসে আইনী সহায়তা দিয়ে থাকি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়