শুক্রবার, ২২ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডারের পুত্রবধূ মাদকসহ যৌথ বাহিনীর হাতে আটক।
  •   মহাখালীতে ট্রেন থামিয়ে শিক্ষার্থীদের হামলা, শিশুসহ কয়েকজন রক্তাক্ত
  •   কমিটি নিয়ে দ্বন্দ্বের জেরে শিক্ষক লাঞ্ছনা ও ভাংচুরের ঘটনা গৃদকালিন্দিয়া কলেজে শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা ॥ পাঠদান স্থগিত
  •   চট্টগ্রামে মধ্যরাতে ছাত্রলীগের ঝটিকা মিছিল থেকে অর্থদাতাসহ দুজন গ্রেপ্তার।
  •   রাষ্ট্রীয় পদে আসীন হচ্ছেন খবরে আসামিপক্ষে শুনানি করলেন না সমাজী।

প্রকাশ : ২২ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৬

সৌরজগতের পরিচিতি

এসএম বাশার
সৌরজগতের পরিচিতি

আমরা জানি আমাদের সৌরজগতের সকল শক্তির উৎস হলো সূর্য, যা একটি মাঝারি আকারের নক্ষত্র, আর এ নক্ষত্রকে কেন্দ্র করে সৌরজগতের গ্রহ গুলো পরিক্রমন করছে।

সূর্য: এটি আমাদের সৌরজগতের একমাত্র তাঁরা, যার জন্ম আনুমানিক ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে হয়েছে। সে সময় না ছিলো পৃথিবী আর না সৌরজগতের অন্য কোন গ্রহ উপগ্রহ। আমরা এখন খালি চোখে যে উজ্জল জ্বলন্ত সূর্যকে দেখছি তা মূলত জ্বলে না, সূর্যের এ উজ্জলতা ও তাপ তৈরী হয় এর কোরের মধ্যে চলতে থাকা একটা বিশেষ প্রক্রিয়ার কারনে, যাকে বলা হয় (ঝঃবষষধৎ ঘঁপষবর ংুহঃযবংরং) এই প্রক্রিয়ায় সাধারনত এটমের নিউক্লিয়ার ফিউশন ঘটে।

সূর্যের জন্ম: আমরা এখন ৫ বিলিয়ন বছর অতীতে ফিরে যাবো, এটি এমন একটি সময় যখন আমাদের সৌরজগতের কোন অস্তিত্ব ছিলনা এই মহাবিশ্বে। তখন এটি ছিলো (গড়ষবপঁষধৎ পষড়ঁফ) অর্থাৎ এটা একটা ওহঃবৎংঃবষষধৎ ঈষড়ঁফ, যেখানে অধিকাংশটাই হাইড্রোজেন আর হিলিয়াম দিয়ে তৈরী, এটিকে আমরা ঝঃবষষধৎ ঘঁৎংবৎু নামে জেনে থাকি, আর এখানেই জন্ম নিবে আমাদের সূর্য।

মধ্যকর্ষ বলের কারনে এই গড়ষবপঁষধৎ ঈষড়ঁফ এর একটা ছোট অংশ ক্রমাগত আরো ছোট হতে থাকে, সময়ের সাথে সাথে যা একটি চ্যাপটা চৎড়ঃড় ঢ়ষধহবঃধৎু ফরংশ এ পরিনত হয়ে যাবে। একটা চৎড়ঃড় ঢ়ষধহবঃধৎু ফরংশ প্রধানত গন গ্যাস দ্বারা তৈরী, যা ক্রমাগত মধ্যকর্ষ বলের কারনে আরো গন হয়ে উঠে, একটা সময় এর কেন্দ্রে গ্যাভিটি এতোটাই বেড়ে যাবে যে এখানে শুরু হবে নিউক্লিয়ার ফিউশন, বাড়তে থাকবে তার উজ্জলতা, আর এটাই হবে আমাদের আজকের সূর্য।

বিজ্ঞানিদের ধারনা ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে একটি মাঝারি আকারের নীহারিকা থেকে আমাদের সূর্যের জন্ম, যা ৭৩% হাইড্রোজেন, ২৫% হিলিয়াম এবং ২% অন্যান্য গ্যাস নিয়ে গঠিত। সূর্যের ব্যাস ১৩ লক্ষ ৯২ হাজার কিলোমিটার। তিব্র চাপ ও তাপের কারনে সূর্যের কোরের তাপমাত্রা দেড় কোটি ডিগ্রি সেলসিয়াসের ও বেশি হয়ে থাকে। সূর্য ৮ লক্ষ ২৮ হাজার মাইল গতিতে অনবরত মিল্কিওয়ে ছায়পথকে কেন্দ্রে করে ঘুরছে, একবার মিল্কিওয়ে ছায়াপথকে ঘুরে আসতে সূর্যের সময় লাগে ২৩ কোটি বছর, যাকে বলা হয় এক গ্যালাক্টিক বছর। সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো সৌরজগতের মোট ভরের ৯৯.৮% ভর সূর্য তার নিজের কাছে রেখেছে।

গ্রহের জন্ম: ৪.৬ বিলিয়ন বছর পূর্বে একটা নতুন জন্মানো তাঁরা, যার চারদিকে ধূলা আর গ্যাস ঘুরে বেড়াচ্ছে, আর এখানে সূর্যের তিব্র তাপমাত্রা ঘটাতে চলছে অন্যরকম কিছু। সূর্যের তাপমাত্রায় সে সময় প্রচন্ড তিব্র পরিমানে ছিলো, এ তিব্র গরমের ফলে সূর্যের চারপাশে জমে থাকা সমস্ত গ্যাস (যা মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়ামের অংশ) বিস্ফোরণ হয়ে উড়ে যায়, আর গ্যাসের সাথে জমে থাকা ধূলিকনারা ও প্রচন্ড ধাক্কায় দুরে সরে যায়, এসকল ধূলিকনা মহাকর্ষ বলের প্রভাবে ধীরে ধীরে একত্রিত হতে থাকে, প্রথমে এরা পাথর খন্ডে পরিনত হয় এবং সময়ের অন্তরায় মহাকর্ষ বলের প্রভাবে পাথর খন্ড গুলো একত্রিত হতে হতে পাথুরে গ্রহে পরিনত হয়। সে ধূলি বা পাথর থেকে জন্মানো গ্রহ গুলোই হলো আজকের বুধ, শুক্র, পৃথিবী ও মঙ্গল। আর গ্যাস যেহুত ওজনে হালকা তাই বিস্ফোরণের পর ধূলিকনার তুলনায় সূর্য হতে আরো বেশি দুরত্বে সরে যায়, তবে তাদের এ সরে যাওয়ার বল সূর্যের গ্যাভিটি বলকে অতিক্রম করার মত যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো না, ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা এসব গ্যাসেরা মহাকর্ষ বলের প্রভাবে একত্রিত হতে থাকে, আর সে একত্রিত গ্যাসেরাই পরবর্তীতে পরিনত হয় বৃহস্পতি, শনি, ইউরেনাস, নেপচুনের মত দানবীয় গ্যাসীয় গ্রহে।

বুধ: সূর্যের সবচেয়ে নিকটতম গ্রহ হলো বুধ, যার দুরত্ব সূর্য থেকে ৫.৮ কোটি কিলোমিটার।

সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে বুধের সময় লাগে ৮৮ দিন, বুধের কোন উপগ্রহ নেই। বুধের ব্যাস ৪৮৭৯ কিলোমিটার। বুধের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪০৫ক্ক সেলসিয়াস. ও সর্বনিম্ন -১৭৫ক্ক সেলসিয়াস। বুধের মধ্যকর্ষ শক্তি পৃথিবীর মধ্যকর্ষ শক্তির ৩৮% মাত্র।

শুক্র: এটি হলো সূর্যের ২য় কাছাকাছি গ্রহ, সূর্য থেকে যার দুরত্ব ১০.৭ কোটি কিলোমিটার।

গ্রহটি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২২৪ দিন। এটি সৌরজগতের সবচেয়ে উষ্ণ ও আলোকিত গ্রহ, গ্রহটিকে আমরা লাল গ্রহ হিসাবে ও চিনে থাকি, দুরত্বের দিক থেকে যা পৃথিবীর সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এর তাপমাত্রা ৪৬২ক্ক সেলসিয়াস। শুক্র গ্রহের কোন উপগ্রহ নেই, এর ব্যাস ১২১০৪ কিলোমিটার।

পৃথিবী: সূর্যের সবচেয়ে সুন্দর নীল গ্রহটি হলো আমাদের এ পৃথিবী, যা এমন একটি দুরত্ব থেকে সূর্যকে পরিক্রমন করে যেখানে তাপ ও আলো প্রাণ টিকে থাকার জন্য সহনীয়। দুরত্বের অবস্থান থেকে সূর্যের তৃতীয় গ্রহ হলো পৃথিবী, সূর্য থেকে যার দুরত্ব ১৫ কোটি কিলোমিটার।

সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে পৃথিবীর সময় লাগে ৩৬৫ দিন, এবং ২৪ ঘন্টার কিছু কম সময়ের মধ্যে পৃথিবী নিজ অক্ষে একবার ঘুরে আসে। পৃথিবীর একমাত্র উপগ্রহ চাঁদ। পৃথিবীর ব্যাস ১২৭৪২ কিলোমিটার। গ্রহটির সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৫৯ক্ক সেলসিয়াস, ও সর্বনিম্ন -৮৯ক্ক সেলসিয়াস।

মঙ্গল: পৃথিবীর পর মঙ্গলই সৌরজগতের একমাত্র গ্রহ যা প্রাণের অস্তিত্ব থাকার মত সম্ভাবনাময়। বিজ্ঞানীদের ধারনা আজ থেকে বহু বছর পূর্বে মঙ্গলে পৃথিবীর মত সাগর নদী ছিলো, হয়তো সে সময় মঙ্গলে ও প্রাণের অস্তিত্ব বিদ্যমান ছিলো। সূর্য থেকে মঙ্গলের দুরত্ব ২২.৮ কোটি কিলোমিটার। সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে মঙ্গলের সময় লাগে ৬৬৭ দিন। মঙ্গলের ব্যাস ৬৭৭৯ কিলোমিটার। সৌরজগতের সবচেয়ে উচ্চতম পর্বত ঙষুসঢ়ঁং গড়হং মঙ্গলে অবস্থিত। মঙ্গলের উপগ্রহ দুটি। এই গ্রহের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৩৫ক্ক সেলসিয়াস. ও সর্বনিম্ন -১৪৩ক্ক সেলসিয়াস।

এস্টেরয়েড বেল্ট: মঙ্গল ও বৃহস্পতি গ্রহের মাঝখানে রয়েছে বিশাল ফাঁকা জায়গা, আর এ ফাঁকা জায়গায় রয়েছে অসংখ্য গ্রহানু বা এস্টেরয়েড, জ্যোতিবিজ্ঞানীদের ধারনা এ ফাঁকা জায়গাটিতে এক কিলোমিটার থেকে ও বড় সাইজের ১০ লাখের ও বেশি গ্রহানু আছে, আর যদি ছোট বড় সব গ্রহানুকে হিসাবে ধরা হয় তবে সংখ্যাটি কোটি ছাড়িয়ে যাবে, তাই জ্যোতিবিদরা এ ফাঁকা স্থানটির নাম দিয়েছে এস্টেরয়েড বেল্ট।

বৃহস্পতি: সৌরজগতের সবচেয়ে বড় দানবীয় গ্রহ হলো বৃহস্পতি, যা একটি সুবিশাল গ্যাস জায়ান্ট, এর বিশালতা এতোটাই বেশি যে আমাদের পৃথিবীর মত প্রায় ১০০০ গ্রহ বৃহস্পতির মধ্যে রেখে দেওয়া যাবে। সূর্য থেকে এর দুরত্ব ৭৭.৮ কোটি কিলোমিটার। এই গ্রহের ব্যাস ১৩৯৮২০ কিলোমিটার। সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে এর সময় লাগে ১২ বছর। নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় লাগে ০৯ ঘন্টা ৫৬ মিনিট। বৃহস্পতির মধ্যকর্ষ বল পৃথিবীর মধ্যকর্ষ বল থেকে ও আড়াই গুন বেশি। বৃহস্পতির ৬৭টি উপগ্রহ আছে, সবচেয়ে বড় উপগ্রহটি হলো গ্যানিমেড যা এখন পর্যন্ত আবিস্কৃত সৌরজগতের সবচেয়ে বড় উপগ্রহ হিসাবে পরিচিত।

শনি: সৌরজগতের ২য় বৃহত্তম গ্রহ হলো শনি গ্রহ, এর ব্যাস ১২০৫৩৬ কিলোমিটার। সূর্য থেকে শনির দুরত্ব ১৪৩.৭ কোটি কিলোমিটার। সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ২৯ বছর। নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় ১০ ঘন্টা ৪২ মিনিট। শনির গড় তাপমাত্রা -১৭৮ক্ক সেলসিয়াস। শনির উপগ্রহ ৮২ টি, এই গ্রহের চারদিকে বিশাল সুন্দর বলয় রয়েছে, যা হাজার বছর ধরে জ্যোতিবিদদের বিমোহিত করে রেখেছে।

ইউরেনাস: সূর্য থেকে ইউরেনাসের দুরত্ব ২৮৭ কোটি কিলোমিটার। এর ব্যাস ৫০৭২৪ কিলোমিটার। গ্রহটি সূর্যকে একবার ঘুরে আসতে সময় নেয় ৮৪ বছর, এবং নিজ অক্ষে একবার ঘুরে ১৭ ঘন্টা ২৪ মিনিটে।

এর গড় তাপমাত্রা -২০১ক্ক সেলসিয়াস, তাই এটিকে ধরা হয় সৌরজগতের সবচেয়ে শীতলতম গ্রহ হিসাবে। ইউরেনাসের উপগ্রহের সংখ্যা ২৭ টি।

নেপচুন: এটি দেখতে খুবই চমৎকার একটি গ্রহ, মিথেন ও হিলিয়াম গ্যাস বেশি থাকায় গ্রহটিকে নীল রঙে দেখা যায়। সূর্যের সবচেয়ে দূরবর্তী এ গ্রহটি সূর্য থেকে ৪৪৯.৭ কোটি কিলোমিটার দুরে। গ্রহটি নিজ অক্ষে একবার ঘুরতে সময় নেয় ১৬ ঘন্টা ০৬ মিনিট। সূর্যকে একবার পরিক্রমন করতে সময় লাগে ১৬৫ বছর। গ্রহটির ব্যাস ৪৯২৪৪ কিলোমিটার। গড় তাপমাত্রা -২০০ক্ক সেলসিয়াস। এ গ্রহের উপগ্রহের সংখ্যা ১৪ টি।

প্লুটো: এক সময় প্লুটোকে সৌরজগতের নবম গ্রহ হিসাবে ধরা হলেও ২০০৬ সালে জ্যোতিবিদরা প্লুটোকে গ্রহের তালিকা থেকে বাদ দিয়েছে। এটি সূর্যকে ২৪৮ বছরে একবার পরিক্রমন করে।

সৌরজগতের বিস্তৃতি আরো অনেক অনেক বিশাল, আরো বহু অজানা অবজেক্ট সৌরজগতে মানুষের দৃষ্টির আড়ালে লুকিয়ে আছে। হয়তো একদিন আমাদের জানার আগ্রহ ও আধুনিক গবেষণা যন্ত্র সৌরজগত নিয়ে আরো নতুন সব তথ্যের দুয়ার খুলে দিবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়