প্রকাশ : ২১ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
মাটিখেকোদের কবলে হাজীগঞ্জ
হাজীগঞ্জ উপজেলায় কৃষিজমির মাটি নির্বিঘ্নে বিক্রির মহোৎসব চলছে। কৃষিজমি সুরক্ষিত করতে প্রশাসন মাঝে মাঝে সরব হলেও স্থায়ী কোনো সুফল মেলেনি। ফলে আশঙ্কাজনক হারে হ্রাস পাচ্ছে কৃষিজমি, কমছে ফসল উৎপাদনও।
জানা যায়, মাটিখেকো ব্যবসায়ীরা সবকিছু ম্যানেজ করেই নির্বিঘ্নে মাটি কাটার কাজ করছে। অনেক মাটি ব্যবসায়ী স্থানীয় রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। তাই এ বিষয়ে কৃষকরা লিখিত অভিযোগ করতে সাহস পাচ্ছেন না। অন্যদিকে মৌখিকভাবে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করেও মিলছে না কোনো প্রতিকার।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফসলি জমিতে ভেক্যু বসিয়ে কাটা হচ্ছে মাটি। এসব মাটি ডাম্প ট্রাক দিয়ে ক্রেতার কাছে সরবরাহ করা হয়। এতে কৃষিজমির পাশাপাশি গ্রামীণ অবকাঠামো ও পাকা রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভুক্তভোগী জানান, স্থানীয় তহশিল অফিস ও উপজেলা ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এসব কাজ হচ্ছে। কেউ প্রতিবাদ করার সাহস পাচ্ছে না।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, মাটি ব্যবসায়ীরা কৃষকদের বেশি টাকার লোভ দেখিয়ে ফসলি জমির মাটি কিনছে। পরে ভেক্যু দিয়ে ওই মাটি কেটে বিক্রি করা হচ্ছে। এসব মাটি যাচ্ছে বিভিন্ন ভিটে-বাড়ি, পুকুর ভরাটে এবং ইটভাটায়।
স্থানীয় কৃষকরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে উপজেলাজুড়ে ফসলি কৃষিজমিতে ভেক্যু বসিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটি কাটার সময় অন্যের ফসলি জমির ওপর দিয়ে ট্রাক চলাচলের জন্য বানানো হয়েছে রাস্তা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকরা বাধা দিলে তাদেরকে হুমকি-ধমকি ও হয়রানি করা হচ্ছে।
হাজীগঞ্জ উপজেলার ৪নং কালচোঁ দক্ষিণ ইউনিয়নের প্যারাপুর গ্রামের কৃষক আব্দুর রশিদ ও করিম মিয়া বলেন, আমার পাশের জমির মালিক মাটি বিক্রি করেছেন। এ মাটি আমাদের ফসলি জমির উপর দিয়ে ভেক্যু ও ডাম্প ট্রাকযোগে নেয়া হচ্ছে। বাধা দিলে মাটি ব্যবসায়ীরা উল্টো বলে, ফসল তো নষ্ট হয়েছে। এখন জমির মাটি বিক্রি করে দেন।
৫নং সদর ইউনিয়নের মৈশাইদ গ্রামের কৃষক মোঃ আনোয়ার হোসেন বলেন, মাটিবোঝাই ভারী ট্রাক চলাচলের কারণে সড়ক নষ্ট হচ্ছে। এ সড়ক দিয়ে ট্রাক চলাচলে বাধা দেয়ায় আমাকে বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হয়।
মাটি ব্যবসায়ী শহিদ হোসেন বলেন, আমি কবরস্থানে মাটি দিচ্ছি। এক ফসলি জমি কিনে মাটি কাটছি। তিন ফসলি জমির মাটি কেউ বিক্রি করতে চাইলে আমি কিনি না। আমি জোর করে কারো জমিতে মাটি কাটি না।
হাজীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাপস শীল বলেন, জমির শ্রেণি পরিবর্তন করতে অনুমোদন লাগে। এছাড়া ছোট সড়ক দিয়ে ডাম্প ট্রাক চলাচলেও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। কৃষিজমি থেকে যারাই মাটি কাটার সঙ্গে জড়িত থাকুক না কেন, তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।