প্রকাশ : ০৫ আগস্ট ২০২৫, ১০:৫৮
বোরহান খান : প্রায় এক যুগ খেলেছেন ফুটবল ভলিবল ক্রিকেট

রাজনীতি এমনই এক বিষয়, যেখানে আসলে সবই সম্ভব। সে এক অন্যরকম আগ্রহের জায়গা। দেশের হয়ে ক্রীড়াজগতে অনন্য সম্মান এনে দেওয়া অনেক খেলোয়াড় তাই নিজেদের খেলোয়াড়ী জীবন শেষে ঘাঁটি গেঁড়েছেন রাজনীতির মাঠে। ব্যর্থ হয়েছেন সেটা ঠিক বলা যায় না। বরং সফলতার হারই বেশি। সেটার কারণ হতে পারে ‘ধৈর্য’, যেটা সাধারণ মানুষের চেয়ে একজন ক্রীড়াবিদের মধ্যেই বেশি। কারণ তাদেরকে যেমন খারাপ সময় পার করতে হয়েছে, তেমনই তারা জানেন কীভাবে ভালো সময় আসবে।
ইতিহাস বলছে, রাজনীতির মাঠে ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণ নেহাত কম নয়।
দীর্ঘকায় এবং মজবুত দেহের অধিকারী, চাঁদপুর ক্রীড়াঙ্গনের পরিচিত মুখ মো. বোরহান খান। ছিলেন ফুটবলার, ক্রিকেটার ও ভলিবল প্লেয়ার। এখন ক্রীড়া সংগঠক এবং রাজনৈতিক নেতা।ক্রীড়াঙ্গনের সঙ্গে যোগসূত্র দীর্ঘদিনের। স্কুল জীবন থেকে ফুটবল খেলা শুরু। নিজ এলাকা পুরাণবাজার ২ নং বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মধুসূদন হাই স্কুল টিমের হয়ে ফুটবল খেলা শুরু করেন। এরপর খেলেছেন চাঁদপুর সরকারি কলেজ টিমেও। ফুটবল ছাড়াও স্কুলজীবনে তিনি ভলিবল ও ক্রিকেট খেলেছেন।তার প্রথম খেলার মাঠ মধুসূদন হাই স্কুল মাঠ।
১৯৮৫ সাল থেকে ঢাকা জাতীয় দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লিগ খেলা শুরু করেন বোরহান খান। ফায়ার সার্ভিস ফুটবল টিমের নির্ভরযোগ্য ডিফেন্ডার ছিলেন তিনি। রক্ষণে উপস্থিতি মানেই প্রতিপক্ষের আক্রমণভাগের কাজটা কঠিন হয়ে পড়া। অবয়বে একটা কাঠিন্য, মাঠে সবাইকে একাট্টা করে রাখার সহজাত ক্ষমতাই চাঁদপুর ও ঢাকার মাঠে বোরহান খানকে অনেকের চেয়ে আলাদা করে চিনিয়েছে।
একজন ডিফেন্ডার হয়েও যে পরিচিতি লাভ করা যায়, বোরহান খান সেটা দেখিয়েছিলেন। দেখিয়েছিলেন শুধু ফুটবল খেলেই জয় করে নেওয়া যায় বহু মানুষের ভালোবাসা, শ্রদ্ধা।
মো. বোরহান খান। পিতা মরহুম আব্দুর রশিদ খান ও মাতা মরহুমা তাহেরা খাতুন। বড়ো ভাই জসিমউদ্দিন খান (বাবুল খান)। তিনিও চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গনে পরিচিত মুখ ও রাজনৈতিক নেতা। ব্যবসায়ী পরিবারের জন্ম হবার সুবাদে এবং তিন বোন দু ভাইয়ের সবার ছোট হওয়ায় পরিবারের কাছে বোরহান খানের কদর আলাদা। লেখাপড়ার পাশাপাশি ফুটবলকে খুব আপন করে নিয়েছেন অল্প সময়ে। পাঁচ ফুটের অধিক লম্বা, সুদর্শন চেহারা। চাঁদপুরের ফুটবল জগতে মাঠ কাঁপিয়ে ঢাকা ও চিটাগাংয়ে খেলেছেন অসংখ্য ফুটবল খেলা।
তিনি জানালেন, ক্রীড়াঙ্গন থেকে এখন রাজনীতিতে আছেন। ১৯৮৫ সালে খেলোয়াড়ি জীবন শুরু। ফায়ার সার্ভিস দলের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল। এই দলের অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন এক বছর। এরপর যাওয়া হয় প্রথম বিভাগ ফুটবল দল অগ্রণী ব্যাংকে। এখান থেকে ফরাশগঞ্জে যোগ দিয়ে প্রিমিয়ার লিগ খেলেন। প্রিমিয়ার লিগ তিন বছর খেলা হয়। এই ক্লাবের সহ-অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৯ সালে প্রথম জাতীয় দলে রক্ষণভাগের প্লেয়ার হিসেবে ডাক পান। ওই সময় অসুস্থ থাকায় জাতীয় দলে থাকা হয় নি। ফরাশগঞ্জ থেকে দলবদল করে চলে যান আরামবাগ ক্রীড়া সংঘে। তখন এই ক্লাবের সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন চাঁদপুর সদর আসনের সাবেক এমপি এসএ সুলতান টিটো। এই ক্লাবে থাকাবস্থায় ঢাকা মোহামেডান ক্লাবে ডাক পান। এসএ সুলতান টিটু’র অনুরোধে আরামবাগ ক্লাব ছেড়ে যাননি। আরামবাগ ক্লাবের হয়ে প্রেসিডেন্ট কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে তিনি ডান পায়ে আঘাত পান। দু বছর ফুটবলে আর জড়িত থাকা হয় নি। এই সময়ে চট্টগ্রাম লিগে মোহামেডানের হয়ে খেলেন। দু বছর চট্টগ্রাম লিগে মোহামেডান ক্লাবের হয়ে খেলার পর দ্বিতীয় বিভাগ থেকে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ হওয়ার জন্যে শান্তিনগর ক্লাব চ্যাম্পিয়ন ফাইট দেন। তখন বড়ো বাজেটে টিম গঠনে এ ক্লাবের দায়িত্ব নেন। বোরহান খানের হাত ধরে চ্যাম্পিয়ন হয় শান্তিনগর ক্লাব । তারপর আবার পায়ে ব্যথা। এ ব্যথার কারণে আর ফুটবল খেলা হয়ে উঠেনি। তবে ঢাকার মাঠ ছাড়া চাঁদপুরে এবং দেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য ফুটবল খেলেছেন তিনি। পাঁচ ফুটের বেশি লম্বা হবার কারণে মানানসই রক্ষণভাগের প্লেয়ার ছিলেন তিনি। প্রায় এক যুগ কাটিয়ে দেন ফুটবলের সাথে। এলাকার পুরাণবাজার ২ নং বালক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় টিম থেকে শুরু ফুটবল খেলা। তারপর আন্তঃ কলেজ টুর্নামেন্টে
চাঁদপুর সরকারি কলেজ থেকেও ফুটবল খেলেছেন। শেরে বাংলা কাপ, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী কাপ ফুটবল টুর্নামেন্টও খেলেছেন।
মো. বোরহান খানের খেলোয়াড়ি জীবন শেষে এখন সময় কাটছে স্ত্রী ও দুই মেয়ের সুখের সংসারের খোঁজখবর নিয়ে। পাশাপাশি নিজের ব্যবসা ও ক্রীড়া সংগঠকেরও দায়িত্ব পালন করছেন। মেয়ে দুজনের বিয়ে হয়ে গেছে। বড়ো মেয়ের নাম রাফিয়া ফেরদৌস সেমন, কানাডায় এমবিএ করার পাশাপাশি জব করছে। বড়ো মেয়ের জামাতা মেরিন ইঞ্জিনিয়ার। ছোট মেয়ে জেরিন খান ভুবন, বিবিএ পাস করে এখন সংসার করছে। ছোট মেয়ের জামাতা সিটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। বড়ো ভাই বাবুল খানও সাবেক ফুটবলার এবং ক্রীড়া সংগঠক।
লম্বা হবার কারণে বোরহান খান ভলিবল ও ক্রিকেট খেলাতেও দক্ষ হয়ে উঠেন। আন্তঃ কলেজ ভলিবল প্রতিযোগিতায় চট্টগ্রাম বিভাগ চ্যাম্পিয়ন হয় চাঁদপুর সরকারি কলেজ। এই কলেজ দলের তিনি মেইন ডাউন হিটার ছিলেন। পাড়ার ক্লাব নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের হয়েও চাঁদপুর স্টেডিয়ামে জেলা ক্রীড়া সংস্থা আয়োজিত প্রথম বিভাগ ক্রিকেট লিগ খেলেছেন। ক্রিকেটে চার-ছক্কা মারার রেকর্ড ছিলো তাঁর।এই
নিতাইগঞ্জ ক্রীড়া চক্রের সভাপতি এখন তিনি এবং সোনালী অতীত ক্লাব চাঁদপুরের সাংগঠনিক সম্পাদক। চাঁদপুর জেলা বিএনপির সাবেক প্রচার সম্পাদক এবং বর্তমান পৌর বিএনপির সম্মানিত সদস্য হিসেবে আছেন। ২০২৪ সালের ৫ আগস্টের আগে জুলাই আন্দোলনের সময় লড়াকু সৈনিক হিসেবে ঢাকার রাজপথে তাঁর সরব উপস্থিতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায়। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শের একজন নিবেদিতপ্রাণ সৈনিক বোরহান খান বলেন, চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থাকে সাবেক ফুটবলারসহ ক্রীড়া সংশ্লিষ্টদের সম্পৃক্ত করেই যেনো পরিচালনা করা হয়।