বুধবার, ১৯ মার্চ, ২০২৫  |   ২৬ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ১৮ মার্চ ২০২৫, ১৩:৩৯

ইতিহাসের পাতায় চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন

অনলাইন ডেস্ক
ইতিহাসের পাতায় চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন

চাঁদপুর জেলার ইতিহাস নিয়ে ২০১৬ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘চাঁদপুর পরিক্রমা : ইতিহাস ও ঐতিহ্য’-এর ৪৩৫ থেকে ৪৪৮ পৃষ্ঠায় ত্রয়োদশ অধ্যায়ে ‘চাঁদপুরের ক্রীড়াঙ্গন’ নিয়ে লিখা হয়েছে। ‘ক্রীড়াকণ্ঠে’র পাঠকদের জন্যে ধারাবাহিকভাবে নিচে তা পত্রস্থ করা হলে---

।। এক।।

খেলাধুলায় চাঁদপুরের রয়েছে গৌরবোজ্জ্বল অতীত। চাঁদপুর জেলার ক্রীড়াঙ্গন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বেশ আলোচিত। ক্রীড়াঙ্গনের ইতিহাস খুঁজতে গিয়ে দেখা যায়, স্বাধীনতাপূর্ব ও স্বাধীনতোত্তরকালে চাঁদপুরের বেশ ক’জন কৃতী সন্তান আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে কৃতিত্বপূর্ণ অবদান রেখেছেন। তাঁদের মধ্যে চাঁদপুরের রমেশ দত্ত ওরফে মনা দত্ত ১৯২২ সালে অবিভক্ত ভারতের বিখ্যাত ইস্ট বেঙ্গল ফুটবল টিমের খেলোয়াড় হিসেবে যথেষ্ট সুনাম কুড়িয়েছিলেন। তাঁর ছোট ভাই কালী দত্ত বা কে. দত্ত ১৯৩৮ সালে ভারতীয় বাছাই দলের খেলোয়াড় হিসেবে অস্ট্রেলিয়ায় খেলতে গিয়েছিলেন এবং অসাধারণ ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখিয়েছিলেন। চাঁদপুরের বিখ্যাত ফুটবল খেলোয়াড়দের মধ্যে ছিলেন রসময় সরকার, দেলোয়ার হোসেন, পি. রায় চৌধুরী, সন্তোষ দে, সুখমা মজুদার, নারায়ণ দত্ত, আবদুল লতিফ খান, মমতাজ উদ্দিন, নগেশ চক্রবর্তী, গদাধর প্রমুখ । পরবর্তীকালে আবুল ও মুকুল বাংলাদেশ জাতীয় দলের খেলোয়াড় হিসেবে দীর্ঘদিন খেলে দেশের জন্যে সুনাম বয়ে আনেন। মহিলা দৌড়বিদ হিসেবে রোকেয়া বেগম খুকী চাঁদপুরের গৌরব বৃদ্ধি করেছিলেন।

চাঁদপুরের বিখ্যাত সাঁতারুদের মধ্যে ছিলেন ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী আব্দুল মালেক, জাতীয় পুরস্কারপ্রাপ্ত সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী, নিতাই পাল প্রমুখ। পরবর্তীকালে রফিক, সালাম, মিন্টু, সাত্তার, ফাতেমা, তপনসহ আরো অনেকে সাঁতারে সুনাম অর্জন করেন।

আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন সাঁতারু প্রয়াত অরুণ কুমার নন্দী ও ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী সাঁতারু মরহুম আব্দুল মালেক জাতীয় ও অন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখেন। এছাড়া ফুটবল, ক্রিকেট, বাস্কেটবল, ভলিবল এবং অ্যাথলেটিক্সে চাঁদপুরের অনেক খেলোয়াড় আন্তর্জাতিক ও জাতীয় পর্যায়ে অবদান রেখেছেন। বিশেষ করে ফরিদগঞ্জের প্রতিবন্ধী হাফসা ও মিন্টু আন্তর্জাতিক পর্যায়ে জাপানে হ্যান্ডি ম্যারাথন প্রতিযোগিতায় প্রথম ও দ্বিতীয় হয়ে বাংলাদেশের সুনাম বয়ে আনেন।

অঙ্গনভিত্তিক চাঁদপুরের ক্রীড়াবিদদের উল্লেখযোগ্য অবদান এবং ক্রীড়া বিকাশে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ নিম্নে তুলে ধরা হলো।

সাঁতার

বিখ্যাত ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী মরহুম আব্দুল মালেক চাঁদপুরের গৌরব। ছোটকাল থেকেই সাঁতারে ছিল তাঁর বিরাট আগ্রহ। তিনি ১৯৫৩ সাল থেকে সাঁতারে অংশগ্রহণ করে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত জাতীয় পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে গেছেন। সাঁতারু মালেক ১৯৫৫ সালে ৬ষ্ঠ পাকিস্তান অলিম্পিক গেইমসে সাঁতারে দুটি স্বর্ণ ও একটি রৌপ্য পদক লাভ করেন। পাকিস্তান জাতীয় ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় সাঁতারে স্বর্ণপদক অর্জন করেন তিনি। জয়ের অদম্য নেশা সাঁতারু আব্দুল মালেককে উজ্জীবিত করে তোলে। কাঙ্ক্ষিত জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছাতে নিজেকে পূর্ণরূপে প্রস্তুত করেন তিনি। তিনি ১৯৫৮ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিত এশিয়া অলিম্পিক সাঁতারে অংশগ্রহণ করেন এবং ১৯৫৯ সালে ঢাকা জাতীয় সুইমিং পুলে ৬০ (ষাট) মাইল সাঁতার কেটে জাতীয় রেকর্ড সৃষ্টি করেন। একই বছর সপ্তম পাকিস্তান অলিম্পিক গেইমসে সাঁতারে উপর্যুপরি তিনি কৃতিত্বের স্বীকৃতিস্বরূপ স্বর্ণপদক প্রাপ্ত হন। জনাব মালেক ১৯৬২ সালে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে ইতালিতে ‘কেপরী-নেপলস’ ৩৩ মাইল বিশ্ব দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় বিশ্বে ৪র্থ এবং এশিয়ার মধ্যে প্রথম স্থান দখল করেন। ইংলিশ চ্যানেল ক্রসিং কমিটি’র উদ্যোগে ১৯৬৪ সালে নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর, ১৯৬৫ সালে দাউদকান্দি-নারায়ণগঞ্জ এবং ঐ বছরেই নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে তিনটি প্রতিযোগিতাতেই প্রথম স্থান অধিকার করার গৌরব অর্জন করেন।

প্রয়াত সাঁতারু অরুণ কুমার নন্দী চাঁদপুর সদর উপজেলার বাগাদীতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি ১৯৫২ সাল থেকে সাঁতার প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে প্রতিটি ক্ষেত্রে কৃতিত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। বিশেষ করে ১৯৬২ সালে ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার প্রতিযোগিতায় তিনি দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৬৩ সালে ভারতের কলকাতায় অনুষ্ঠিত ক্লাব সুইমিং প্রতিযোগিতায় রিলেতে প্রথম এবং ৪০০ মিটারে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। তিনি ১৯৬৪ সালে চাঁদপুর পৌরসভা লেকে সাঁতারু আব্দুল মালেকের সাথে অবিরাম সাঁতার কেটে ৩০ মাইল অতিক্রম করেন। ঐ সাঁতারে সাঁতারু আব্দুল মালেক অতিক্রম করেছিলেন ৩৫ মাইল। জনাব নন্দী ১৯৬৫ সালে চ্যানেল ক্রসিং কমিটির উদ্যোগে আয়োজিত নারায়ণগঞ্জ-চাঁদপুর দূরপাল্লা সাঁতার প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেন। তিনি ১৯৬৭-৬৮ সালে ফরিদপুর, কুমিল্লা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, নোয়াখালী, ফেনী, বরিশাল ও চাঁদপুরে অবিরাম সাঁতার কেটে কৃতিত্ব দেখান। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে অর্থাৎ ১৯৭১ সালে কলকাতার বৌ-বাজার সুইমিং ক্লাব ও চাঁদপুর সম্মিলনীর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত অবিরাম সাঁতারে ৯০ ঘণ্টা ৫ মিনিট সাঁতার কেটে বিশ্ব রেকর্ড সৃষ্টি করেন এবং ‘সন্তরণশ্রী’ উপাধিতে ভূষিত হন। জনাব নন্দী ১৯৭৪ সালে ঢাকার মিরপুর থেকে চাঁদপুর পর্যন্ত মোট ১১০ কি. মি. দূরপাল্লার সাঁতারে এশিয়ার সমস্ত দূরপাল্লা সাঁতারের রেকর্ড ভঙ্গ করেন।

পরবর্তীতে রফিক, সালাম, মিন্টু, ফাতেমা, তপনসহ আরো অনেকে সাঁতারে চাঁদপুরের জন্যে সুনাম অর্জন করেছেন। সাম্প্রতিককালে আল-আমিন, সেলিম বেপারী, সেন্টু লোধ, মতলবের সাকিব খান প্রমুখ সাঁতারুগণ জাতীয় পর্যায়ে দৃষ্টান্ত রেখেছেন। (চলবে)

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়