বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৫ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   থানা থেকে লুট হওয়া ৫৭৬টি বুলেট উদ্ধার
  •   অদৃশ্য রহস্যজনক আগুনে পুড়ছে ঘরবাড়ি : আতঙ্কে গ্রামবাসী
  •   বাশার আল আসাদের পতন: ৫৪ বছরের স্বৈরশাসনের অবসান
  •   ভারতকে কাঁদিয়ে যুব এশিয়া কাপের শিরোপা বাংলাদেশের
  •   প্রাথমিকে পোষ্য কোটা বাদ, মেধার ভিত্তিতে ৯৩ শতাংশ শিক্ষক নিয়োগ

প্রকাশ : ১০ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৩০

ক্রীড়াকণ্ঠের সাথে আলাপচারিতায় কোচ ও ক্রীড়া সংগঠক মোদাচ্ছের হোসেন

বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেলে জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করবো

চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম
বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেলে জেলার ঐতিহ্য ধরে রাখার চেষ্টা করবো

ছোটবেলাতেই খেলাধুলায় জড়িয়ে পড়েছেন। ফুটবল ও ক্রিকেটসহ বিভিন্ন ইভেন্টের খেলাধুলার সাথে এখনও জড়িত রয়েছেন। খেলাধুলার পাশাপাশি ফুটবল ও ক্রিকেটের জন্যে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের মাধ্যমে বিভিন্ন ক্যাটাগরির কোচিংও করেছেন। নিজের এলাকার খেলোয়াড়দের সুবিধাসহ এলাকায় এবং জেলা শহরে খেলোয়াড় তৈরি করার জন্যে একাডেমীও করেছেন। প্রাইমারি স্কুলের ৩য় শ্রেণি থেকে শুরু করা খেলাধুলা এখনও চলমান রেখেছেন। তিনি হলেন চাঁদপুর জেলা শহরের ক্রীড়াঙ্গনসহ ঢাকাতে পরিচিত নাম মোহাম্মদ মোদাচ্ছের হোসেন, পিতা মোহাম্মদ আছমত আলী পাটোয়ারী ও মাতা মেহেরুন নিসা। ৬ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে তিনি সবার ছোট। তাদের গ্রামের বাড়ি মতলব দক্ষিণ উপজেলার তুষপুর গ্রামে। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তার স্ত্রীর নাম সাদিয়া আইরিন তমা। তাঁর একমাত্র সন্তানের নাম ফাতিমা উমাইরা। তাঁর পড়াশোনার হাতেখড়ি হয় মতলব মডেল প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে। সেখান থেকে পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়া শেষে ভর্তি হন মতলবগঞ্জ জে বি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। এরপর উচ্চ মাধ্যমিক ও গ্রাজুয়েশন ঢাকা কলেজ (বাউবি) করেন। খেলাধুলার পাশাপাশি গণমাধ্যমকর্মী হিসেবে রয়েছে তাঁর পরিচিতি। তিনি মতলব প্রেসক্লাবের ক্রীড়া সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। পাশাপাশি ব্যবসা এবং ১ম শ্রেণীর ঠিকাদার হিসেবেও কাজ করেন। তাঁর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম মতলব স্পোর্টস এন্ড টেলিকম। তিনি প্রতিষ্ঠাতা, মতলব সূর্য রায় স্পোর্টিং ক্লাব, মতলব ফুটবল একাডেমী এবং মতলব ক্রিকেট একাডেমী। ফুটবলে ঢাকা ফুটবল লীগ, ক্রিকেটে ঢাকা ক্রিকেট লীগে খেলার পাশাপাশি বর্তমানে মিরপুর সিটি ক্লাব ক্রিকেট একাডেমির সিনিয়র কোচের দায়িত্ব পালন করছেন। চাঁদপুর জেলা দলের হয়েও খেলেছেন ফুটবল ও ক্রিকেট। চাঁদপুর সোনালি অতীত ক্লাবের সদস্য হিসেবে খেলছেন বিভিন্ন মাঠে। ফুটবলে গোলরক্ষক এবং ক্রিকেটে বোলার, ব্যাটসম্যান এবং উইকেটরক্ষকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায় তাঁকে। মতলব সোনালি অতীত ক্লাবের সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বে রয়েছেন। এছাড়াও সিটি ক্লাব ক্রিকেট একাডেমী মিরপুরের সিনিয়র কোচ হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

ক্রীড়াকণ্ঠের প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে তিনি তুলে ধরেন তাঁর খেলোয়াড়ি জীবনসহ চাঁদপুর জেলার ক্রিকেট দল ও বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের দায়িত্ব নেয়ার বিষয়গুলো, সেসব পাঠকদের কাছে তুলে ধরা হলো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আসসালামু আলাইকুম, কেমন আছেন?

মোদাচ্ছের হোসেন : ওয়ালাইকুম আস সালাম, জ্বি আপনাদের দোয়ায় ভালো আছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : খেলাধুলা কখন থেকে শুরু হয়?

মোদাচ্ছের হোসেন : আমি যখন ক্লাস থ্রিতে পড়ি তখন থেকে খেলাধুলার সাথে জড়িয়ে পড়ি। আমাদের বাড়ির পাশে স্কুল মাঠে বড়োভাইরা যখন খেলাধুলা করতেন, তখন তাদের দেখেই মূলত খেলায় আগ্রহ তৈরি হয়।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ছোটবেলায় এলাকায় কাদের সাথে খেলতেন?

মোদাচ্ছের হোসেন : ছোটবেলায় স্বপন, হুমায়ুন, কায়সারসহ আরো কয়েকজনের সাথে খেলাধুলা করতাম। এদের মধ্যে অনেকেই এখন খেলাধুলা করছেন এবং ক্রীড়া সংগঠকের দায়িত্ব পালন করছেন। আমি ফুটবল খেলা আগে শুরু করি। আমি সাবেক ফুটবলার মেজবাহ উদ্দিন মেজোভাইয়ের কাছে ফুটবল প্রশিক্ষণ নিতাম।

ক্রীড়াকণ্ঠ : হাইস্কুলের পর কোনো খেলাধুলায় অংশগ্রহণ করা হয়েছিল কিনা?

মোদাচ্ছের হোসেন : মাধ্যমিক স্কুলে পড়াবস্থায় অ্যাথলেটিক্স, হকি, হ্যান্ডবল এবং ফুটবল খেলায় স্কুলের হয়ে জেলা এবং বিভাগীয় পর্যায়ে খেলেছি। ১৯৯৬ সালে ঐতিহ্যবাহী বাবুরহাট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে একটি ফুটবল টুর্নামেন্টে খেলার মাধ্যমে আমার প্রতিযোগিতামূলক খেলার সূচনা হয়। তারপর নিয়মিতভাবে জেলার বিভিন্ন স্থানে টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করি। বড়োভাইদের ক্রিকেট খেলা দেখে ভালো লাগতো। তাই ফুটবল খেলার পাশাপাশি ক্রিকেট খেলাও শুরু করি। ক্রিকেট খেলায়ও বিভিন্ন টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করতাম।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ক্রিকেটে প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ শুরু হয় কবে থেকে?

মোদাচ্ছের হোসেন : ১৯৯৮ সালে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে মতলব ক্রিকেট একাদশ বনাম চাঁদপুর ক্রিকেট দলের মধ্যে অনুষ্ঠিত খেলার মাধ্যমে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলা শুরু করি। স্কুলে লেখাপড়া করাবস্থায় স্কুল দলের হয়ে একই সাথে ক্রিকেট, ফুটবল, হকি, হ্যান্ডবল এবং অ্যাথলেটিক্স সহ বিভিন্ন খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। কারণ স্কুলে তখন ফুটবল, ক্রিকেট সহ অন্যান্য খেলায় অংশগ্রহণের জন্যে পর্যাপ্ত খেলোয়াড় ছিলো না, আমি সহ আমার অন্য বন্ধুরা ঘুরেফিরে সব খেলায় অংশগ্রহণ করতাম। এমনও হয়েছে স্কুল দলের হয়ে জেলা স্টেডিয়ামে সকালে হকি অথবা ক্রিকেট আর বিকেলে ফুটবল খেলেছি। বিভাগীয় পর্যায়ে যেয়েও সকালে হ্যান্ডবল/হকি আবার বিকেলে ফুটবল খেলতে হতো।

ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলা ক্রিকেট দলের হয়ে খেলা শুরু করেন কবে?

মোদাচ্ছের হোসেন : ২০০১ সালে চাঁদপুর জেলা সিনিয়র ক্রিকেট দলের হয়ে কুমিল্লা স্টেডিয়ামে অংশগ্রহণ করি। তাছাড়া ২০১১ সালে আন্তঃজেলা ক্লাব কাপ ক্রিকেট টুর্নামেন্টে খেলি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর স্টেডিয়ামে ফুটবল লীগে কোন্ কোন্ দলের হয়ে খেলেছেন?

মোদাচ্ছের হোসেন : আমি জেলা ফুটবল লীগে ভাই ভাই স্পোর্টিং ক্লাব, বিষ্ণুদী ক্লাব, পূর্ব শ্রীরামদি ক্লাব এবং নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্রের হয়ে খেলেছি। তাছাড়া ক্লাব কাপ ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলেছি এবং ক্রিকেট লীগে নাজিরপাড়া ক্রীড়া চক্র, পাইনিয়র ক্লাব, পূর্ব শ্রীরামদী ক্লাব, আবাহনী ক্রীড়া চক্রের হয়ে লীগ খেলেছি। বিভিন্ন ফুটবল ও ক্রিকেট টুর্নামেন্টে নিয়মিত অংশগ্রহণ করেছি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় অসংখ্য টুর্নামেন্টে খেলেছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : ঢাকায় কীভাবে খেলার সুযোগ পেয়েছেন এবং কোচ হিসেবে কোথায় কোচিং করেন?

মোদাচ্ছের হোসেন : ২০০৩-২০০৪ সালে ঢাকাতে মিরপুর সিটি ক্লাবে ফুটবল খেলার সুযোগ আসে। তারপর ঢাকা তৃতীয় বিভাগ ফুটবল লীগ, ঢাকা দ্বিতীয় বিভাগ ফুটবল লীগ এবং ঢাকা প্রথম বিভাগ ফুটবল লীগে অংশগ্রহণ করি। ঢাকার লীগ ফুটবলের পাশাপাশি কর্পোরেট ক্রিকেট খেলা নিয়মিত খেলতে থাকি। সেই ধারাবাহিকতায় লেভেল (এ) অ এবং লেভেল (ওয়ান) ১ ক্রিকেট কোচেস কোর্স বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) থেকে সম্পন্ন করি। এছাড়া ক্রিকেট কোচেস সেমিনার এবং ট্রেনিং ডিজাইন এন্ড এক্সিকিউশনের ওপর ট্রেনিং নিয়েছি।

ক্রীড়াকণ্ঠ : আপনার মতলব ক্রিকেট একাডেমি?

মোদাচ্ছের হোসেন : আমি খেলোয়াড় থাকাবস্থায় চিন্তা করতাম মাদকমুক্ত সমাজ গড়তে লেখাপড়ার পাশাপাশি খেলাধুলা খুবই গুরুত্বপূর্ণ, সে চিন্তা থেকে ১৯৯৪ সালে মতলব সূর্য তরুণ স্পোর্টিং ক্লাব প্রতিষ্ঠা করি। এই ক্লাব প্রতিষ্ঠার পর থেকেই মতলবে খেলাধুলার ব্যাপক প্রসার লাভ করে। মতলব সূর্য তরুণ স্পোর্টিং ক্লাব চাঁদপুর জেলার অন্যতম সেরা ক্লাবের মধ্যে স্থান করে নেয়। তারপর আমি ক্লাবের কার্যক্রম আরো গতিশীল করতে ও বিস্তৃতি লাভের জন্যে ২০১৩ সালে মতলব ক্রিকেট একাডেমি এবং ২০১৫ সালে মতলব ফুটবল একাডেমি প্রতিষ্ঠা করি। ক্রিকেট একাডেমি প্রতিষ্ঠার পর থেকে একাডেমির খেলোয়াড়রা জেলার বিভিন্ন বয়সভিত্তিক দলে খেলার সুযোগ লাভ করতে থাকে এবং বিভাগীয় দলেও সুযোগ করে নেয়।

মতলব ফুটবল একাডেমি থেকেও অনেক খেলোয়াড় দেশের বিভিন্ন স্থানে সম্মানের সাথে খেলেছে এবং খেলছে।

ক্রীড়াকণ্ঠ : চাঁদপুর জেলার ক্রিকেটারদের নিয়ে আপনার লক্ষ্য এবং খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

মোদচ্ছের হোসেন : দেশের খেলাধুলায় বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ জেলা চাঁদপুর । এই জেলার খেলোয়াড়দের মান অনেক অনেক ভালো। আমি চাঁদপুর জেলার বয়সভিত্তিক ক্রিকেট দলের দায়িত্ব পেলে চাঁদপুর জেলার ঐতিহ্য ধরে রেখে খেলোয়াড়দের আরো চৌকষ করে তুলে জাতীয় পর্যায়ে নেয়ার জন্যে সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাবো। আমি চাইবো এই জেলা থেকে আরো অনেক খেলোয়াড় যেন জাতীয় দলে খেলে দেশের সম্মান বৃদ্ধি করতে সহায়তা করে এবং বাংলাদেশকে পৃথিবীর অন্যতম শক্তিশালী ক্রিকেট-দেশে পরিণত করতে পারে। জেলার উদীয়মান খেলোয়াড়দের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, তোমরা সততা, নিষ্ঠা,আন্তরিকতার সাথে সুশৃংঙ্খল জীবন-যাপন করে সঠিকভাবে পরিশ্রম করবা, বড়োদেরকে সম্মান এবং ছোটদেরকে স্নেহ করবা। বাবা-মা এবং ওস্তাদ /কোচদের কথা অবশ্যই অবশ্যই মেনে চলবা।

আমি চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্তদেরকে জেলা লীগগুলো নিয়মিতভাবে চালানোর জন্যে বিশেষভাবে অনুরোধ জানাচ্ছি এবং বেশি বেশি টুর্নামেন্ট করার জন্যে অনুরোধ করছি। কারণ যত বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক খেলা হবে, তত প্রতিভাবান খেলোয়াড় উঠে আসবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়