প্রকাশ : ০১ ডিসেম্বর ২০২১, ১২:৪৬
ফরিদগঞ্জে দলীয় কোন্দল না মিটলে ইউপি নির্বাচনে ক্রোধের আগুনে ঘি পড়বে
ফরিদগঞ্জের ১৩টি ইউনিয়নের আসন্ন ইউপি নির্বাচেন তফসিল ঘোষণার পর নির্বাচনী প্রস্তুতি নিয়ে বিএনপি চুপচাপ থাকলেও আওয়ামীলীগের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ বিরাজ করছে।
আজ বুধবার থেকে মনোনয়নপত্র বিক্রি শুরু হয়েছে। এই ১৩টি ইউপি চেয়ারম্যান পদে এবার শতাধিক সম্ভাব্য প্রাথী দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে দৌড়ঝ্পঁ শুরু করেছে।
তবে স্থানীয় অনেকে বলছে, দলের ভেতরে নেতাকমীৃদের কোন্দল না মিটলে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে ক্রোধের আগুনে ঘি পড়বে।
খোজ নিয়ে জানা যায়, সরকার দলীয় প্রভাবশালী ৩ নেতার অনুসারী প্রার্থীরা তিনটি ূগ্রুপে বিভক্ত । প্রভাবশালী এই তিন নেতা হলেন যথাক্রমে বর্তমান এমপি মুক্তিযোদ্ধা মুহাম্মদ শফিকুর রহমান, সাবেক এমপি ডঃ শামছুল হক ভুইয়া ও উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান।
গ্রহণযোগ্য প্রার্থী দলীয় প্রতীক নৌকা না পেলে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করার সম্ভাবনা বেশী বলে অনেকেই মনে করছে। এ ৩ নেতার অনুসারী নেতাকর্মীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে নৌকার জয় নিশ্চিত করতে কঠিন পরিস্থিতির মোকাবেলা করতে হবে।
গত ইউপি নির্বাচনে ১১নং চরদুখিয়া ইউনিয়নে তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু ছিলেন নৌকা প্রতীকধারী প্রার্থী ।
দলীয় অন্তকোন্দলের কারনে বিগত ইউপি নির্বাচনে উপজেলার ২নং বালিথুবা, ,১০ নং গোবিন্দপুর, ৪ নং সুবিদপুর ও ১১ নং চরদুখিয়া ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থীর পরাজয় হয়েছিল। শুধু তাই নয়, ১১ নং ইউনিযনে বিএনপির ৩ জন প্রার্থী থাকরেও আওয়ামীলীগের একমাত্র প্রার্থী তোফাজ্জল হোসেন বাচ্চু সেই সময়ে ধানের শীষের প্রার্থী বাছির আহাম্মদের কাছে পরাজিত হয়েছিলেন।
এদিকে উক্ত নির্বাচন নিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের মধ্যে চুপচাপ নীরবতা দেখা গেলেও আওয়ামীলীগের মধ্যে নির্বাচনী উত্তাপ দেখা যায় সব ইউনিয়নে। খোদ আওয়াম লীগেই ১৩ ইউপি চেয়ারম্যান পদে মোট ১শ ১১ জন প্রার্থী তাদের জীবন বৃত্তান্ত (সিবি) জমা দিয়েছে বলে দলীয় সুত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। যে হারে দলীয় মনোনয়ন ক্রয় করার হিড়িক পড়েছে তাতে করে প্রার্থী সংখ্যা আরো বাড়তে পারে বলে অনেকই মনে করছেণ॥
দলীয় প্রতীক নৌকা পেতে প্রার্থীরা বিভিন্ন নেতার কাছে নানাহ তদবির আর দৌড়ঝাঁপ শুরু করছে। আবার কেউকেউ নিজেকে ইউপি চেয়ারম্যাস পদে নিজের প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে বিভিন্ন এলাকায় প্রচার প্রচারনার পাশাপাশি উঠোন বৈঠক করে নিজেদের অবস্থান তৈরী করছেন। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীরাও চুপেচাপে বিভিন্ন প্রচারনা অব্যহত রেখেছে।
এবার নৌকা প্রতীক না পেলেও স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে জয় নিশ্চিতের জন্য উক্ত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে জোড়ালো ভাবেই মাঠে প্রচারনা চালাচ্ছে। অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে সরকার দলীয় তিন গ্রুপের নেতাকর্মীরা ছাড় দিবে না কেউ কাউকে। অপরদিকে বিএনপি এই নির্বাচনে কেন্দ্রীয় ভাবে কোন নির্দেশনা পায়নি বলে বিএনপির একাধিক নেতাকর্মী জানিয়েছে। তবে পরিবেশ পরিস্থিতি বুঝে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির প্রার্থীরা প্রতিটি ইউনিয়নেই প্রতিদ্বন্ধীতা করার সম্ভাবনা রয়েছে বলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বিএনপির বেশ কয়জন প্রার্থী জানিয়েছেন। দলীয় নেতাকর্মী ও প্রার্থীদের সাথে কথা বলে জানা গেছে,আসন্ন ইউপি নির্বাচনে তিন নেতার অনুসারী প্রার্থী রয়েছে। প্রত্যেক নেতাই চাইবেন তার পছন্দের ব্যক্তিটি নৌকা প্রতীক নিশ্চিত করতে নানা তৎপরতা চালাবেন এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু দলীয় অন্তকোন্দলের কারনে আসন্ন ইউপি নির্বাচনে এবার দলীয় প্রতীকের লড়াইয়ের চেয়ে এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের আশায় শক্তি প্রদর্শনের লড়াই হিসেবে প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই সরকার দলীয় বিদ্রোহী প্রার্থী নির্বাচনে লড়বেন বলে অনেকটাই নিশ্চিত হওয়া গেছে।
গত অক্টোবর মাসে উপজেলা আওয়ামীলীগের উদ্যেগে ১৩টি ইউনিয়নে বর্ধিত সভা করে তৃনমূলের নেতাকর্মীদের প্রস্তাব সমর্থনের মাধ্যমে প্রার্থী তালিকা নির্ধারন করা হয়েছে। এসব বর্ধিত সভায় উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা আবুল খায়ের পাটওয়ারী, সাধারন সম্পাদক , সাবেক উপজেলা আবু সাহেদ সরকার বর্তমান উপজেলা চেয়ারম্যান এডভোকেট জাহিদুল ইসলামসহ স্থানীয় নেতাকর্মীরা বর্ধিত সভা সম্পন্ন করেছেন। তবে ওই বর্ধিত সভায় ফরিদগঞ্জের এমপি শফিকুর রহমানের অনুসারী সম্ভাব্য চেয়ারম্যান প্রার্থীরা অংশ গ্রহন না করলেও ১৩টি ইউনিয়নে সম্ভাব্য প্রার্থীর নামের তালিকা জেলা আওয়ামীলীগের কাছে জমা দিয়েছে বলে একটি সুত্র জানিয়েছে।
এমন অবস্থায় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তিন নেতার অনুসারী সম্ভাব্য প্রার্থীরা ঐক্যবদ্ধ না হলে ১৩টি ইউপি নির্বাচনে ব্যাপক আকারে হানাহানির আশংকা করছেন অনেকেই।
নাম প্রকাশে অচিচ্ছুক কয়জন চেয়ারম্যান প্রার্থী বলেছেন, ফরিদগঞ্জে আওয়ামীলীগের ৩ নেতার অনুসারী ৩টি পৃথক গ্রুপের অন্তকোন্দলের কারনে প্রার্থী ও নেতাকর্মীরা আছে বিপাকে। এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে ওই তিন প্রভাবশালী নেতা চাইবেন তার পছন্দের ব্যক্তিটিই নৌকা প্রতীক পাক। যে কারনে এবার প্রায় প্রতিটি ইউনিয়নেই বিদ্রোহী প্রার্থী হিেেসবে জয় নিশ্চিত করতে আঁটঘাঁট বেঁধে মাঠে নামার সকল প্রস্তুতি নিচ্ছেন। গত ইউপি নির্বাচনে যারা নৌকা প্রতীক না পেয়ে বিদ্রোহী প্রার্থী ছিলেন। এবারও সেই প্রার্থীরা নৌকা প্রতীক পেতে তাদের নাম প্রস্তাব করেছে।
তবে দলের নেতাকর্মী ও ভোটারগন জানান, এবারের নির্বাচনে গ্রহন যোগ্য ব্যক্তি দলীয় প্রতীক না পেলে ভোটারগনই গ্রহনযোগ্য ব্যক্তির জয় নিশ্চিত করতে মাঠে থাকবে। প্রতীকের চেয়ে এবার প্রার্থীর ব্যক্তি ইমেজ ও গ্রহনযোগ্যতাই ভোটারদের কাছে বেশী প্রাধান্য পাবে।
উপজেলা চেয়ারম্যান, জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি এ্যাডভোকেট জাহিদুল ইসলাম রোমান এ সংবাদদাতাকে বলেন, আমার ব্যক্তিগত পছন্দের কোন প্রার্থী নেই । তবে জননেত্রী শেখ হাসিনা যাকেই দলীয় প্রতীক নৌকা দিবে , সেই নৌকার জয় নিশ্চিত করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হবে বলে আমার বিশ^াস রয়েছে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা মেয়র আবুল খায়ের পাটওয়ারী ও সাধারন সম্পাদক , সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাহেদ সরকার বলেন,কে কোন নেতার অনুসারী তা আমাদের কাছে কোন বিবেচ্য বিষয় নয়। নেত্রী যাকেই নৌকা প্রতীক দেবে তার জয় নিশ্চিত করতে উপজেলা আওয়ামীলীগ আন্তরিক ভাবেই কাজ করবে।