প্রকাশ : ৩১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০০:৪৫
সংবিধান : জাতীয় ঐক্যের ভিত্তি, নয় বিভেদের উপকরণ

একটি জাতির রাজনৈতিক ও সামাজিক জীবনের মূল ভিত্তি হলো সংবিধান। এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনার বহিঃপ্রকাশ। সংবিধান নিয়ে যে কোনো পরিবর্তন বা সিদ্ধান্ত হতে হবে জাতীয় ঐক্যের ভিত্তিতে, যেন তা সর্বস্তরের জনগণের প্রতিনিধিত্ব করে। তবে সম্প্রতি সংবিধান নিয়ে কিছু বিতর্কিত বক্তব্য ও কার্যক্রম জাতির সামনে উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
|আরো খবর
মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত সংবিধানকে 'শহীদের রক্ত দিয়ে লেখা দলিল' বলা হয়। এটি জাতির ইতিহাস, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে। কিন্তু আজ যারা সংবিধানকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চান, তারা কীভাবে এতো বড় দুঃসাহস দেখান? সংবিধানকে কবর দেওয়ার যে প্রস্তাব বা প্রচেষ্টা, তা কেবল একটি স্বৈরাচারী শাসনব্যবস্থার দ্বার উন্মুক্ত করতে পারে। একাত্তরের রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ যারা দেখেনি, তাদের এই ঐতিহাসিক দলিলের গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হওয়াই স্বাভাবিক।
জুলাই বিপ্লব বনাম মুক্তিযুদ্ধ : দুই প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গিজুলাই বিপ্লবের প্রজন্ম যারা একাত্তরের স্বাধীনতা যুদ্ধ দেখেনি, তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা মূল্যায়ন করতে কীভাবে সক্ষম হবে? একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ শুধু মুক্তিযোদ্ধাদের নয়, এটি ছিলো সারা দেশের মানুষের লড়াই। সাধারণ জনগণ যেভাবে মুক্তিযোদ্ধাদের সহযোগিতা করেছে, আশ্রয় দিয়েছে, তাদের রক্ষা করেছে—এই সব কাহিনী আজকের প্রজন্মের জানা নেই। মুক্তিযোদ্ধাদের পেছনে সেই সাধারণ জনগণও ছিলেন একেকজন অপ্রকাশিত মুক্তিযোদ্ধা।
মুক্তিযোদ্ধাদের বিভক্তি এবং জাতীয় চেতনার অবক্ষয়গত ১৬ বছরে মুক্তিযুদ্ধকে বিতর্কিত করার যে প্রক্রিয়া চলেছে, তা জাতির জন্যে লজ্জাজনক। ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মানিত করা হয়েছে। মুক্তিযোদ্ধাদের অনুদানের নামে প্রহসন এবং লুটপাটের ইতিহাস জাতির জন্যে লজ্জার। এতে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার মূলে আঘাত করা হয়েছে এবং জাতিকে বিভক্ত করা হয়েছে।
একাত্তরের ঐক্যের গুরুত্ব এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটএকাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিলো জাতীয় ঐক্যের উদাহরণ। জামাতে ইসলামী এবং রাজাকার বাহিনীর মতো কয়েকটি বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠী ছাড়া সারা দেশের জনগণ মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে ছিলো। কিন্তু আজ সেই ঐক্য ভেঙ্গে ক্ষমতা দখলের রাজনীতি চলছে। জাতীয় চেতনাকে দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
সংবিধানের সুরক্ষা জাতীয় দায়িত্বসংবিধান কেবল একটি আইনি দলিল নয়, এটি জাতীয় ঐক্যের প্রতীক। একে কবর দেওয়ার যে কোনো প্রচেষ্টা জাতির স্বাধীনতা এবং গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে প্রশ্নবিদ্ধ না করে, জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে। একাত্তরের মতোই একটি শক্তিশালী জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলা এখন সময়ের দাবি।
জাতি আজ ইতিহাসের এক সংকটময় মুহূর্তে দাঁড়িয়ে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ভিত্তিতে সংবিধানের সুরক্ষা এবং জাতীয় ঐক্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠাই আমাদের একমাত্র পথ।