প্রকাশ : ১৩ জানুয়ারি ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুরে বিএনপির সমাবেশ মহাসমাবেশে পরিণত
এ সরকার কোনো মানবিক সরকার নয়, দানবীয় সরকার
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন
‘আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কেবল বাংলাদেশের জনগণই নয়, বিশ^ সোচ্চার হয়েছে। এই দলটি আর বেশিদিন ক্ষমতায় থাকতে পারবে না। তাই যার যার অবস্থান থেকে প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানাচ্ছি।’ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)র স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন চাঁদপুরের মহাসমাবেশে এই আহ্বান জানান।
|আরো খবর
তিনি বলেন, বিদেশে বেগম খালেদা জিয়ার চিকিৎসার জন্যে আইন কোনো বাধা নয়, বাধা হচ্ছে সরকার। সাজা মওকুফ সরকারের যে নির্বাহী আদেশে হয়েছে, সেই নির্বাহী আদেশ সংশোধন করলেই সমস্যার সমাধান হয়। বেগম খালেদা জিয়ার পূর্ণ মুক্তি দাবি করেন দলটির সিনিয়র এই নেতা।
গতকাল ১২ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে চাঁদপুর শহরের জেএম সেনগুপ্ত রোডস্থ মুনিরা ভবন প্রাঙ্গণে বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তি ও সুচিকিৎসার জন্যে বিদেশে পাঠানোর দাবিতে চাঁদপুর জেলা বিএনপি আয়োজিত বিশাল জনসমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বাংলাদেশের তিন তিনবারের প্রধানমন্ত্রী হাসপাতালে দুরারোগ্য রোগে ভুগছেন। চিকিৎসকরা বলে দিয়েছেন তাঁর চিকিৎসা বাংলাদেশে নেই। বিদেশে চিকিৎসা নেয়ার জন্যে তারা সরকারের কাছে দাবি করেছে। বেগম খালেদা জিয়াকে যে প্রশাসনিক অর্ডারের মাধ্যমে সাময়িক সাজা মওকুফ করা হয়েছে, সেই ধারার মধ্যে আছে মওকুফ শর্তহীন অথবা শর্ত যুক্তভাবে দেয়া যাবে। অর্থাৎ যে শর্ত দিয়ে দেয়া হয়েছে যাতে বেগম খালেদা জিয়া বিদেশে যেতে না পারে। আমাদের দাবি সেই শর্তযুক্ত সংশোধন করে শর্তহীন করে দিলেই আমাদের নেত্রী বিদেশে গিয়ে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারে। কিন্তু এ সরকার স্বৈরাচারী সরকার। এ সরকার কোনো মানবিক সরকার নয়, দানবীয় সরকার। সেজন্যে সারা বাংলাদেশের মানুষ যে আওয়াজ তুলেছে সরকার তারা কর্ণপাত করছে না। সাজা মওকুফের সরকারের নির্বাহী যে আদেশে হয়েছে, সেই নির্বাহী আদেশ সংশোধন করলেই সমস্যার সমাধান হয়। তিনি বলেন, সারা বাংলাদেশে আওয়াজ উঠেছে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিতে হবে এবং তাঁকে বিদেশে যাওয়ার জন্যে যে শর্ত আছে তা তুলে দিতে হবে। চাঁদপুরের মানুষও খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবিতে আজকের বিশাল সমাবেশে উপস্থিত হয়েছে। যেহেতু সরকার কোনো গণতান্ত্রিক সরকার নয়, জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয় নাই, সেজন্যে তারা জনগণের দাবিকে কোনোরূপ ভ্রুক্ষেপ করছে না। তারা জনগণের সরকার নয়, তারা দিনের ভোট রাতে চুরি করেছে। শুধু ভোট চোর নয়, তারা ভোট ডাকাত। তারা স্বৈরাচারী কায়দায় ক্ষমতায় টিকে আছে।
তিনি বলেন, স্বৈরাচারী সরকারের অপশাসন, গণতন্ত্রকে হত্যা, মানবাধিকার লঙ্ঘন, মানুষের অধিকার কেড়ে নেয়ার ব্যাপারে আজকে কেবল বাংলাদেশের জনগণ নয়, সারা বিশ^ সোচ্চার হয়ে উঠেছে। আপনারা শুনেছেন আমেরিকায় সারাবিশে^র ১৪১টি দেশের একটি গণতান্ত্রিক সামিট হয়েছে। সেখানে বাংলাদেশ আমন্ত্রণ পায় নাই। আজকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত বাংলাদেশে গণতন্ত্র নেই। এটা দেশের জন্যে লজ্জার। লাখো মুক্তিযোদ্ধার রক্তের বিনিময়ে আমাদের এই দেশ। আওয়ামী লীগ বারবার গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে। স্বাধীনতার পরে এই সরকার ক্ষমতায় ছিল। বাকশাল কায়েম করে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিলো।
খালেদা জিয়াকে গায়ের জোরে সরকারের নির্দেশে একটি ভুয়া মামলায় সাজা দেয়া হয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, বেগম জিয়া নাকি এতিমের কোটি কোটি টাকা মেরে খেয়েছেন। অথচ ওই দুই কোটি টাকা এখনো ব্যাংকে। সেই টাকা এখন বেড়ে আট কোটি টাকার বেশি হয়েছে। যদি ব্যাংক থেকে একটি টাকাও উত্তোলন না হয়ে থাকে, তাহলে তিনি কীভাবে এতিমের টাকা মেরে খেলেন? অর্থাৎ এই অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা।
প্রশাসনের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আপনারা প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা। আপনারা এদেশের জনগণের সেবক, জনগণের টাকায় আপনাদের বেতন হয়, আপনাদের চাকরি পার্মানেন্ট। আওয়ামী লীগ সরকার গায়ের জোরে এতোদিন ক্ষমতায় থাকুক না কেনো এখনমাত্র সময়ের ব্যাপার। আওয়ামী লীগ থাকবে না, আপনারা থাকবেন। তাই এখনো সময় আছে এই স্বৈরাচার, মিথ্যাবাদী, বিদেশে বাংলাদেশকে যারা অপমান বদনাম করেছে তাদের পক্ষ দয়া করে ত্যাগ করুন। জনগণের কাতারে দাঁড়ান, যেখানে অন্যায় হয় অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ান।
খন্দকার মোশাররফ আরো বলেন, চাঁদপুরের সমাবেশ রায় দিয়েছে- অনতিবিলম্বে বেগম খালেদা জিয়াকে পূর্ণ মুক্তি দেন, বিদেশে চিকিৎসার জন্যে সকল বাধা তুলে দেন, না হলে সরকার পতনের আন্দোলনের জন্য এই চাঁদপুরও প্রস্তুত।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সালাম। তিনি সরকার পতনের আন্দোলনে চাঁদপুরবাসীকে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
চাঁদপুর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক শেখ ফরিদ আহমেদ মানিকের সভাপতিত্বে এবং সিনিঃ যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডঃ সলিম উল্লাহ সেলিম, যুগ্ম আহ্বায়ক দেওয়ান মোঃ সফিকুজ্জামান ও মুনীর চৌধুরীর যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে আরো বক্তব্য রাখেন কেন্দ্রীয় বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, কুমিল্লা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মোঃ মোস্তাক মিয়া, কেন্দ্রীয় নেতা ও মুন্সিগঞ্জ জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কামরুজ্জামান রতন, কৃষক দল কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক শহিদুল ইমলাম বাবুল, তাঁতীদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি আবুল কালাম আজাদ দুলাল খান, কেন্দ্রীয় নেত্রী ও সাবেক এমপি রাশেদা বেগম হীরা, কেন্দ্রীয় যুবদলের সহ-সভাপতি মুরতাজুল করিম বাদরু, কেন্দ্রীয় মৎস্যজীবী দলের সদস্য সচিব আব্দুর রহিম, যুবদল কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সভাপতি জাকির হোসেন ও কেন্দ্রীয় ছাত্রদলের যুগ্ম সম্পাদক মাহবুব মিয়া।
এছাড়া চাঁদপুর জেলা, উপজেলা ও পৌর বিএনপি নেতৃবৃন্দের মধ্যে বক্তব্য রাখেন- জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মাহবুব আনোয়ার বাবলু, বিএনপি নেতা জসিম উদ্দিন খান বাবুল, জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান গাজী, সেলিমুছ সালাম, চাঁদপুর পৌর বিএনপির সভাপতি আক্তার হোসেন মাঝি, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ হারুনুর রশিদ, ফরিদগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সভাপতি শরীফ মোঃ ইউনুছ, মতলব উত্তর উপজেলা বিএনপি সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক জিতু, হাজীগঞ্জ উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ইমাম হোসেন হাজী, মতলব দক্ষিণ উপজেলা বিএনপির সভাপতি এনামুল হক বাদল, চাঁদপুর সদর উপজেলা বিএনটির সভাপতি শাহজালাল মিশন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডঃ জাহাঙ্গীর হোসেন খান, হাইমচর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আমিন উল্লাহ বেপারী প্রমুখ।
সাবেক এমপি লায়ন হারুনুর রশিদ, বিএনপির কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার মমিনুল হক, মোতাহের হোসেন পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনের বিপুল সংখ্যক নেতৃবৃন্দ মঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন।
সমাবেশকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর শহরের সকল ওয়ার্ড, পাড়া-মহল্লা, বিভিন্ন উপজেলা ও শহরের আশপাশের ইউনিয়ন থেকে হাজার হাজার নেতা-কর্মীর সমাগম ঘটে এই সমাবেশে। মঞ্চেও ছিল নেতার ভিড়।
সুবিশাল এলাকা জুড়ে মনিরা ভবন প্রাঙ্গণে বিএনপির নেতা-কর্মীদের উপস্থিতিতে সমাবেশস্থল জনস্রোতে পরিণত হয়। সমাবেশস্থল ছাড়িয়ে মানুষ সামনের রাস্তায় ছড়িয়ে পড়ে।
বিএনপির এই সমাবেশকে কেন্দ্র করে চাঁদপুর শহর বেলা ১২টার পর থেকে মিছিলের শহরে পরিণত হয়। ‘মুক্তি মুক্তি চাই, খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ প্ল্যাকার্ড ফেস্টুন আর নেতা-কর্মীদের স্লোগানে স্লোগানে মুখরিত ছিলো শহরের রাজপথ ও সমাবেশস্থল। এদিকে সমাবেশের কারণে শহরে ব্যাপক যানজটের সৃষ্টি হয়।