বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২২ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

বিদগ্ধ বাংলা

বিমল কান্তি দাশ
বিদগ্ধ বাংলা

প্রাক-ঐতিহাসিক যুগের সভ্য বাংলা আজকের ডিজিটাল যুগে এসে কতোটুকু সভ্য হতে পেরেছে তা আমাদের দৈনন্দিন জীবনের রুটিন পর্যালোচনা করলেই প্রত্যক্ষ প্রতিভাত হয়ে উঠে। সভ্যতার সূচনালগ্ন থেকেই মানুষের দৃঢ় প্রতীতি ছিল যে, আইন তার আপন গতিতেই চলতে থাকে। সময়ের আধুনিকায়নের অগ্রগতি আর মানব চরিত্রের বিকৃতি অধঃগতি সমানুপাতিক। বাংলাদেশে যেভাবে আইনের ব্যত্যয় এবং অজ্ঞাত অপশক্তির অনাকাঙ্ক্ষিত প্রশ্রয় আর মাদকের নিত্যনতুন স্পটের উদয়, তাতে সর্বস্তরের নাগরিক আজ নিরাশ্রয়। মাদকসেবী মাদক বিক্রেতা সুনির্দিষ্ট স্পটে ঘাপটি মেরে বসে থাকা ছিনতাইকারী দল রাতের বাংলাদেশটাকে করেছে ভয়ংকর অনিরাপদ। এসব সমাজদ্রোহীর গাড়ির ইঞ্জিন হলো সব কিছুই ম্যানেজ করে চলতে পারাটা। (সূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন ২০-০২-২০২৪ খ্রিঃ)

বাংলাদেশের সর্বত্র বিশেষ করে জেলা শহরগুলোতে নিশাচর নিশিকন্যাগণের অবাধ বিচরণ এবং কিশোর গ্যাংয়ের আধিপত্য বিস্তারে অপরাজেয় হিরোইজমের নগ্ন প্রকাশ ঘটানোর প্রয়াসের সামাল দেয়ার সক্রিয় সদিচ্ছার কোনো বিকল্প নেই। যা সমাজ এবং জাতিকে নিশ্চিত ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। প্রধান অন্তরায়টা হলো আইন আমলে একবার আসা অপরাধীরা একবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পরেই তাদের অপরাধের গতি অনেক গুণে বেড়ে যায়। তখন সাধারণ মানুষ দিশেহারা হয়ে যায়। আর নির্বাক অসহায় মানুষগুলো নির্বাক অসীম আকাশের দিকে তাকিয়েই তার অব্যক্ত আকুতিগুলো প্রকাশ করেই ¤্রয়িমাণ হয়ে যায়।

এ বিশ্বে যত কিছু মহান, বিস্ময়কর এবং অনিন্দসুন্দর শুভ্রময়তার অতীত এই অনুপম বাংলাদেশ চির অমলিন বীর প্রসবিনী। বর্তমানে সেই বাংলাদেশে এমন কোনো জনপদ খুঁজে পাওয়া দায় হবে যেখানে অমানবিক কিশোর গ্যাংয়ের অস্তিত্ব নেই। আবার এমন কোনো অপরাধ জগৎও নেই যার সঙ্গে কিশোর গ্যাংয়ের সম্পৃক্ততা নেই। এতে জাতির মাথা ন্যাড়া হয়ে গিয়েছে। ‘টিনেজার’দের বয়ঃসন্ধিকালের ঈৎুরহম হববফ গুলোর মধ্যে ‘ফিজিক্যাল নীড’-‘সাইক্লোজিক্যাল নীড’ কোন্টির অপরিহার্যতার পরিবর্তে কোনো একটি অজ্ঞাত অপশক্তির ব্যবহারের প্রাচুর্য (যাহা একমাত্র মনোবিজ্ঞানীর বিবেচ্য) এই অভিশপ্ত পরিবেশের জন্যে দায়ী। স্বাধীন দেশে ঔপনিবেশিক আইনের প্রচলনও সমভাবে দায়ী। এক সময় বাংলার নিদারুণ সৌন্দর্য উদ্ভাসিত হয়ে কবি কণ্ঠে নিনাদিত হয়েছিল “এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি; সকল দেশের সেরা সে যে আমার জন্মভূমি।” আর আজ এক-বিংশ শতাব্দির ডিজিটাল যুগে নৈতিকতার অবক্ষয়ের তলানীতে ডুবন্ত নতুন এক বাংলাদেশকে পেলাম। যেখানে নাগরিকদের শেষ এবং নিরাপদ আশ্রয়স্থল হলো আইন। সেখানে ২০২৩ সালের ৩০শে জুন পর্যন্ত এক পরিসংখ্যানে জানা যায় যে, সারা দেশে বিচারাধীন মামলার সংখ্যা মোট ৪২ লাখেরও অধিক।

হায়রে মানুষ অতৃপ্ত লালসার কাছে কতই না অসহায় আজ! বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং তার অঙ্গ সংগঠনে শিক্ষক নামধারী কতিপয় বেজন্মা তার আত্মজাতুল্য ছাত্রীকে উত্ত্যক্ত এবং ধর্ষণ করে চলেছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাসময়ে যথাবিহিত ব্যবস্থাগ্রহণে ব্যত্যয় ঘটায় এগুলো এক ধরনের ছোঁয়াচে ব্যাধিতে রূপান্তরিত হয়েছে।

অনতিবিলম্বে এ গর্হিত কাজের সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান না করলে মানব সমাজের মাথায় পচন ধরে সর্বস্তরের মনুষ্যত্ব বিলুপ্ত হয়ে পাশব বৃত্তির উত্থান ঘটবে নিশ্চিত। এ যেন এক অনাগত অসভ্য যুগের হাতছানি। অর্ধশত বৎসরের অধিককাল পূর্বে ত্রিশ লক্ষ শহিদের রক্তের বিনিময়ে বাংলাদেশটা স্বাধীনতা পেয়েছিল। দেশের সর্বস্তরের দুর্নীতিতেই সেই মূল্যবোধের বাণী নীরবে-নিভৃতে কাঁদে। এর একটা প্রাকৃতিক প্রতিশোধ কিন্তু আমাদের জন্যে অপেক্ষমান। মানব সমাজে এই অনাসৃষ্টির তাৎক্ষণিক নিরসন কল্পে যুগোপযোগী নতুন আইন প্রণয়ন অবশ্যই প্রয়োজন। কারণ স্রষ্টার সৃষ্টির মধ্যে মানুষই হলো দ্রুততম সময়ের মধ্যে পরিবর্তনশীল প্রাণী।

প্রারম্ভিক প্রসঙ্গে ফিরে যেতে হয়। ধরিত্রীর কোনো কোনো ভূ-খণ্ড বিশেষ বিশেষণে বিশেষায়িত হয়। যেমন : কাশ্মীর বিশেষায়িত হয় ‘ভূ-স্বর্গ’ হিসেবে, সুইজারল্যান্ড বিশেষায়িত ‘ইউরোপের ক্রীড়া ভূমি’ হিসেবে আর বাংলা বিশেষায়িত হয় ‘সকল দেশের রাণী’ হিসেবে। তাই এই বাংলা চরম অবস্থার ‘বাংলাদেশ’। এই বাংলাদেশে অফিসগুলোতে ঘুষ না খাওয়া লোক হলো আশ্চর্যজনকভাবে ব্যতিক্রম। এই যে ঘুষ খাওয়ার লোক হলো আশ্চর্যজনকভাবে ব্যতিক্রমী অশেষ ক্ষুধার্ত। এই যে ঘুষ খাওয়ার একটা শক্তিশালী চেইন তার বিস্তৃতি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জ্ঞাতসারেই চলে আসছে। এ অপ্রত্যাশিত সার্বিক অবস্থার নিরসনে কুল ডিক্টেটরের আশু প্রয়োজন। যিনি মধ্য আমেরিকার দেশ এল সালভাদর-এর প্রেসিডেন্ট নাইভ বুখালির ভূমিকায় সুস্পষ্ট হবেন। এল সালভাদরে বিরাজিত কদাকার পরিস্থিতি প্রেসিডেন্ট বুখালীর মসৃণ ডিক্টেটরশিপের প্রতিকারে মনে হয় চির শান্ত বাসভূমিতে পরিণত হয়েছে। যা বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও প্রত্যাশিত। এতে দেশে চলমান সকল মলিনত্ব ঘুচে সোনার বাংলা তার প্রকৃত রূপ ফিরে পাবে।

বিমল কান্তি দাশ : কবি ও প্রবন্ধকার; অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র শিক্ষক, বলাখাল যোগেন্দ্র নারায়ণ উচ্চ বিদ্যালয় ও কারিগরি কলেজ, বলাখাল, হাজীগঞ্জ, চাঁদপুর।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়