বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ০৭ মার্চ ২০২৪, ০০:০০

সাতই মার্চের ভাষণ : বাঙালির শাশ্বত মুক্তিবাণী

----------------পীযূষ কান্তি বড়ুয়া----------------

অনলাইন ডেস্ক
সাতই মার্চের ভাষণ : বাঙালির শাশ্বত মুক্তিবাণী

ভূমিকা :

পৃথিবীর ইতিহাসে মানুষের শুভবোধের জাগরণের ঘটনা খুব বেশি নেই। মানুষ তার অধিকার আদায়ের জন্যে যে দীর্ঘ লড়াই করে গেছে তার নজিরও হাতে গোণা, সংখ্যায় খুবই নগণ্য। মানবেতিহাসে অধিকার আদায়ের মহাজাগরণের ক্ষুদ্র তালিকায় বাঙালির অবস্থান বেশ উপরের দিকে, একথা নির্দ্বিধায় বলা যায়। মেসোপটেমিয়াতে খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০০ বছর আগে উদ্ভুত ক্রীতদাস প্রথার বিলোপেও মানুষ তার মুক্তির জন্যে সেই অগ্নিজাগরণে মেতে উঠেনি। চারশ’ বছর ধরে দাসপ্রথা নিয়ে ধুঁকতে থাকা দক্ষিণ আফিকাতেও বাঙালির মতো মুক্তির মহাজাগরণ ঘটেনি। হাজার বছর ধরে যে বাঙালি তিলে তিলে তার মুক্তির জন্যে দিন গুণছিলো, যে বাঙালি নূরুলদীনের সারাজীবন দিয়ে, তিতুমীর-সূর্যসেন-ঈশা খাঁর অবিরাম সংগ্রাম দিয়ে নিজেদের জীবনে চেপে বসা শোষণের ধারালো শেকল ভাঙতে চেয়েছিলো, তাদের জাগিয়ে তোলার সেই আশ্চর্য বংশীবাদক না আসা পর্যন্ত বাঙালির মুক্তি মেলেনি। তেভাগার কৃষক থেকে শুরু করে সাঁওতালী সিধু-কানু-ফুলমণি কিংবা গরু আর শূকরের চর্বিতে তৈরি বুলেটের ‘ডিভাইড এন্ড রুল’ নীতিতে আক্রান্ত সৈনিকেরাও পারেনি বাঙালির মুক্তির দিশা আনতে, যতদিন পর্যন্ত ইতিহাস নির্ধারিত, নদীবিধৌত সোঁদামাটির ঘ্রাণ গায়ে মেখে মায়ের গর্ভ ছেড়ে হেঁটে আসেনি মহাভাষণের সেই মহাকবি। গৌড়েশ্বর শশাঙ্কের যক্ষ্মা আক্রান্ত রুগ্ন দেহও আশা জাগিয়ে পরিণামে বাঙালির পূর্ণ মুক্তি আনতে পারেনি। কেননা, যে মহাজাগরণ না হলে, মানুষের মাঝে যে মহাতরঙ্গের বিক্ষোভ না হলে মুক্তি অসম্ভব ছিলো, সেদিন সেই মহাজাগরণের মহাজাদুকর ছিলো না ধূলিতলে। ঊনিশশো কুড়ি সালের সতের মার্চে পাটগাতী ইউনিয়নের টুঙ্গিপাড়া গ্রামে যেদিন প্রথম কান্নায় আবির্ভূত হলেন ইতিহাসের ভাবীকালের মহানায়ক, বাঙালির মুক্তির দূত, বাস্তবিক অর্থে সেদিনই পৃথিবীর শোষিত মানুষের মুখে হাসির ফোয়ারা ফোটার শুভ সূচনা হয়েছিলো। মায়ের খোকা হয়ে, বাবার খেলার মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে বেড়ে ওঠা বেরিবেরি-গুকোমাজয়ী সেই লিকলিকে তরুণই ইতিহাসের পরিচর্যায় একদিন হয়ে উঠলেন বাঙালির মহাজাগরণের বাঁশিওয়ালা, হয়ে উঠলেন শেখ মুজিবুর থেকে বঙ্গবন্ধু। যে মহাভাষণে শেখ মুজিব জাগিয়ে তুলেছেন বাঙালি ও বিশ্বকে, সেই ভাষণকে নিজের গর্ভে ধরে সাতই মার্চ আজ একনামে, এক ডাকে অক্ষয় পরিচিতি নিয়ে খোদাই হয়ে আছে মহাকালের অবিনাশী দেওয়ালে। সাতই মার্চের এই ভাষণই বাঙালির শাশ্বত মুক্তিবাণী, নির্যাতিত মানুষের মুক্তির মহাকাব্য।

সাতই মার্চের ভাষণের পরিচিতি :

বাঙালির রাষ্ট্রভাষা আন্দোলন হতে একে একে সাতটি অতি গুরুত্বপূর্ণ সোপান বেয়ে অর্জিত হয়েছে লাল-সবুজের মহান পতাকা। এই সপ্তসোপানের সর্বশেষ ধাপ তথা মহান মুক্তিযুদ্ধের ঊষালগ্নে রমনার রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক ১৯৭১ সালের সাতই মার্চ, রবিবার, দুপুর ২:৪৫ মিনিট হতে ৩:০৩ মিনিটে প্রদত্ত ১৮ মিনিটের চেয়ে কয়েক সেকেন্ড অধিক ব্যাপ্তিকালের ভাষণটিকেই ইতিহাস সাতই মার্চের ভাষণ হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছে। অলিখিত এই ভাষণে মোট এগারোশ’ পাঁচটি শব্দ ছিলো এবং এই ভাষণ দানকালে বঙ্গবন্ধু কোনো রকমের দলিল বা কাগজ হাতে রাখেননি। সেদিন রমনার রেসকোর্সে প্রায় দশ লাখ জনুার সমাবেশ ঘটেছিলো এবং প্রত্যক্ষদর্শীর ভাষ্যে জায়গায় জায়গায় অলক্ষ্যে মেশিনগান ফিট করে রেখেছিলো পাকিস্তানি স্বৈরাচারী গোষ্ঠী। আকাশে টহল দিচ্ছিলো হেলিকপ্টার এবং যুদ্ধ বিমানের আওয়াজ মাঝে মাঝেই কানে আসছিলো।

ভাষণটি ইংরেজি ভাষায় পূর্বে অনুদিত হলেও বিদেশি কর্তৃক তা জাপানী ভাষাতেই প্রথম অনুদিত হয়েছে বলে ধরা হয়। এ পর্যন্ত তেরটি ভাষায় বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক সাতই মার্চের ভাষণ অনুদিত হয়েছে এবং সর্বশেষ তা মাহাতো ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কুড়মালি ভাষাতেও অনুবাদ করা হয়েছে। ঐদিন মঞ্চে সকাল থেকে মাইকে গণসঙ্গীত চলছিলো এবং সভায় কোনো সভাপতি ছিলেন না। বঙ্গবন্ধুই ছিলেন একমাত্র বক্তা এবং মঞ্চে তাঁকে ঘিরে পিছনে ছিলেন সিরাজুল আলম খান, শেখ ফজলুল হক মণি, তোফায়েল আহমেদ, আ.স.ম. আব্দুর রব, আব্দুর রাজ্জাক, গাজীউল হক ও মহিউদ্দিন। ২০১৭ সালের তিরিশে অক্টোবর ইউনেস্কো এই ভাষণকে মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড রেজিস্টারে অন্তর্ভুক্ত করেছে।

সাতই মার্চের ভাষণের পটভূমি :

দীর্ঘ তেইশ বছরের লাঞ্ছনা আর বঞ্চনার ইতিহাসকে জয় করে বাঙালি মনে-প্রাণে চেয়েছিল সামগ্রিক মুক্তি। সাতচলি¬শে ধর্মভিত্তিক অদ্ভুত দ্বিজাতিতত্ত্বের ভিত্তিতে জন্ম নেয়া পাকিস্তানের হাতে অর্পিত হয় ছাপ্পান্ন শতাংশ বাঙালির ভাগ্য। কিন্তু সেই ভাগ্য যে বিধির নির্মম পরিহাস তা জানা ছিলো না। বাংলা ভাষার ওপর আঘাত দিয়ে প্রথম সুচিত হয় বাঙালির স্বপ্নভঙ্গের বেদনা। সেই বেদনা চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে ঊনিশশো সত্তরের নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসেবে নির্বাচিত আওয়ামী লীগকে সরকার গঠনের অধিকার হতে বঞ্চিত করার মাধ্যমে। ঊনিশশো একাত্তরের মার্চের তিন তারিখ পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সভা ডাকা হলেও এক তারিখে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া বিশেষ ঘোষণাবলে তা বাতিল করে। এরই প্রেক্ষিতে সারা বাংলায় আগুন জ্বলে উঠে এবং দুই মার্চ ঢাকায় ও তিন মার্চ সারাদেশে হরতাল পালিত হয়। সামরিক আইন পরিচালক লে. জে. সাহেবজাদা এম ইয়াকুব খান ১ মার্চ গভীর রাতে ১১০নং সামরিক আইন আদেশ জারি করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে পাকিস্তানের সংহতি বা সার্বভৌমত্বের পরিপন্থী খবর বা চিত্র প্রকাশের ব্যাপারে সংবাদপত্রসমুহের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে। ২ তারিখ সন্ধ্যা ৭টা হতে সকাল ৭টা পর্যন্ত ঢাকায় অনির্দিষ্টকালের জন্য কারফিউ জারি করা হয়। পল্টনে জনসভায় ভাষণ দেন শেখ মুজিবুর রহমান। ভাষণে সংগ্রাম চালিয়ে যাওয়ার জন্য জনগণের প্রতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নির্দেশ দেন। ৩ মার্চ থেকে ৬ মার্চ পর্যন্ত প্রতিদিন সকাল ৬টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত সমগ্র প্রদেশে হরতাল পালন করতে সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। ৩ মার্চ যেদিন জাতীয় পরিষদের অধিবেশন হওয়ার কথা থাকার পরও হয়নি, সেদিনকে জাতীয় শোকদিবস হিসেবে পালন করতে আহ্বান জানানো হয়। বঙ্গবন্ধু ৭ মার্চ বিকেল ২টায় রেসকোর্স ময়দানে গণসমাবেশে ভাষণের মাধ্যমে পরবর্তী নির্দেশ প্রদানের ঘোষণা দেন। ৩ মার্চ পূর্ববঙ্গের বিভিন্ন স্থানে মিছিলে গুলিবর্ষণের কারণে ঢাকায় ২৩ জন ও চট্টগ্রামে ৭৫ জন নিহত হয়। ৪ মার্চ চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামে ১১৩নং সামরিক আইন আদেশ জারি করা হয়। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২১জনে দাঁড়ায় এবং খুলনায় নিহত হয় ৬জন। ৫ মার্চ টঙ্গীতে গুলিবর্ষণে ৪ জন নিহত হয় ও ২৫ জন আহত হয়। চট্টগ্রামে নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১৩৮ জনে। ভুট্টোর সাথে ইয়াহিয়ার ৫ ঘণ্টা বৈঠক হয়। তার ফলস্বরূপ ৬ মার্চ জাতির উদ্দেশ্যে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশনের ডাক দেওয়া হয় এবং টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিয়োগ দেওয়া হয়। পরিস্থিতি পর্যালোচনায় আওয়ামী লীগ জরুরি সভায় মিলিত হয়। রাজশাহীতে মিছিলকারীদের ওপর সশস্ত্র বাহিনীর গুলিতে ১ জন নিহত ও ১৪ জন আহত হয়। খুলনায় দাঙ্গা-হাঙ্গামা ও গুলিবর্ষণে ১৮ জন নিহত এবং ৮৬ জন আহত হয়। ঊনিশশো একাত্তরের অগ্নিঝরা মার্চের এক হতে তিন তারিখের ঘটনাপ্রবাহই মূলত সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পটভূমি তৈরি করে দেয়।

সাতই মার্চের ভাষণের পূর্ব মুহূর্তের ঘটনা :

বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শেখ হাসিনার স্মৃতিচারণ হতে জানা যায়, ছয় তারিখ রাতে উদ্বেগের কারণে শেখ মুজিবের ভালো ঘুম হয়নি। পরের দিন কী বলবেন সে বিষয়ে ৬ মার্চ সারা রাত ভেবেছেন বঙ্গবন্ধু। কখনো উদ্বিগ্ন পায়ে পায়চারি করেছেন পাইপ হাতে, কখনো লিখেছেন। যদিও ৭ মার্চের ভাষণ কোনো লিখিত আকার ছিলো না। বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী ফজিলাতুন্নেসা মুজিব তাঁর চিন্তা ও উদ্বেগ দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি নিজে যা বিশ্বাস করো তা-ই বলবে। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারাজীবন আন্দোলন সংগ্রাম করেছ, জেল খেটেছ। তুমি জানো কী বলতে হবে, মানুষ কী শুনতে চায়। তোমার মনে যে কথা আসবে সে কথাই বলবা।’ সাত তারিখ মার্চে দুপুর দুটোয় ভাত খেয়ে বঙ্গবন্ধু তাঁর পত্নী রেনুর হাতে বানিয়ে দেওয়া পান মুখে দিয়ে রওয়ানা করেন সভাস্থলে। কিন্তু সেদিন যে পথ ধরে তাঁর যাওয়ার কথা ছিলো তাঁরা সেপথ দিয়ে যাননি। একথা বিস্তারিত জানা যায় তাঁর সেদিনের গাড়িচালক আপন মেজ ফুফুর কনিষ্ঠ পুত্র মমিনুল হক খোকার লেখা গ্রন্থ হতে। তিনি ছিলেন বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের নিত্য সহচর, বিশ্বস্ত সচিব ও রাজনৈতিক সংকটসংকুল মুহূর্তের অতন্দ্র প্রহরী।

‘অস্তরাগে স্মৃতি সমুজ্জ্বল, বঙ্গবন্ধু, তাঁর পরিবার ও আমি’ বইতে তিনি লিখেছেন, ‘বঙ্গবন্ধুকে ৩২ নম্বর থেকে রেসকোর্সে নিয়ে যাওয়া এবং বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব ছিল স্বাধীনতাযুদ্ধের সময়ের অন্যতম ছাত্রনেতা, সাবেক পানি সম্পদমন্ত্রী প্রয়াত আব্দুর রাজ্জাকের ওপর আর রেসকোর্সে মঞ্চের নিরাপত্তার অন্যতম দায়িত্বে ছিলেন স্বাধীনতাযুদ্ধে ঢাকা অঞ্চলের গেরিলা কমান্ডার কামরুল আলম খান ওরফে চিত্রনায়ক খসরু। তিনটি গাড়ি রেসকোর্সে যাওয়ার কথা ছিলো। ৩২ নম্বর থেকে এলিফ্যান্ট রোড হয়ে তৎকালীন পিজি হাসপাতালের পাশ দিয়ে রেসকোর্সে যাওয়ার কথা থাকলেও যাত্রার শুরুতেই তাৎক্ষণিকভাবে আগের সব পরিকল্পনা বদলানো হয়। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে গাড়ি রওনা দেয় নিউমার্কেট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হয়ে হাইকোর্টের পাশ দিয়ে রেসকোর্সের পথে। বিশাল জনতার ঢেউয়ের মধ্যে সোজা মঞ্চে উঠলেন তিনি।

বেতারে সাতই মার্চের ভাষণ সম্প্রচার :

ঊনিশশো একাত্তরের মার্চের চার তারিখে রেডিও পাকিস্তান, ঢাকা কেন্দ্রের নাম পরিবর্তন করে 'ঢাকা বেতার কেন্দ্র’ নামকরণ করা হয়। সাতই মার্চে দুপুরে ঢাকা বেতারের একটা দল রেসকোর্স ময়দানে মঞ্চে গিয়ে অবস্থান নেয় যাতে বঙ্গবন্ধুর ভাষণ সরাসরি সম্প্রচার করা যায়। কিন্তু সামরিক জান্তার আদেশে শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়। যদিও বেতারে সেদিন দুপুর হতেই দেশাত্মবোধক সংগীত প্রচার করা হচ্ছিল। মঞ্চে সেদিন দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন ঢাকা বেতারের আঞ্চলিক পরিচালক আশরাফুজ্জামান। তিনি এ কথা কানে কানে বঙ্গবন্ধুকে জানান দেন। বঙ্গবন্ধু তাঁর বক্তৃতায় এ কথা উল্লে¬খ করেন। কিন্তু সরাসরি সম্প্রচার করা না গেলেও আশরাফুজ্জামান ছোট একটা মেশিনে বঙ্গবন্ধুর সম্পূর্ণ ভাষণ রেকর্ড করেন। বিকেল থেকেই বেতার কর্মীরা ভাষণ সরাসরি প্রচার করতে না দেওয়ার প্রতিবাদে অনুষ্ঠান সম্প্রচার বন্ধ রাখলে মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী এক পর্যায়ে বেতার কর্মীদের দাবি মেনে নিয়ে বঙ্গবন্ধুর ধারণকৃত ভাষণ প্রচার করতে দিতে অগত্যা রাজি হয়। ফলে সেই মোতাবেক ৮ মার্চ ভোর হতে সারাদেশে তৎকালীন ছয়টি বেতার কেন্দ্র থেকেই এ ভাষণ প্রচারিত হয়।

অন্যদিকে, পাকিস্তান সরকারের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও তৎকালীন পাকিস্তান আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান এ এইচ এম সালাহউদ্দিন ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক একইসঙ্গে তৎকালীন ফরিদপুর জেলার নির্বাচনী আসন-৫-এ নির্বাচিত সংসদ সদস্য এম আবুল খায়ের ভাষণটি ধারণ করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। তাদের এ কাজে সাহায্য করেন তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের চলচ্চিত্র বিভাগের চলচ্চিত্র পরিচালক ও অভিনেতা আবুল খায়ের, যিনি ভাষণের ভিডিও ধারণ করেন। তাদের সঙ্গে তৎকালীন তথ্য মন্ত্রণালয়ের প্রযুক্তিবিদ এইচ এন খন্দকার ভাষণের অডিও রেকর্ড করেন। অডিও রেকর্ডটি এম আবুল খায়েরের মালিকানাধীন রেকর্ড লেবেল ঢাকা রেকর্ড কর্তৃক সম্পাদনা করে আর্কাইভ করা হয়। পরে অডিও ও ভিডিও রেকর্ডিংয়ের একটি অনুলিপি শেখ মুজিবুর রহমানকে হস্তান্তর করা হয়। এই অডিওর একটি অনুলিপি ভারতে পাঠানো হয়। সেইসাথে অডিওর ৩০০০ অনুলিপি করে তা সারা বিশ্বে ভারতীয় রেকর্ড লেবেল এইচএমভি রেকর্ডস দ্বারা বিতরণ করা হয়।

সাতই মার্চের স্লে¬াগান :

যে বাঙালি মরতে শিখেছে তাকে মারার সাধ্য কারই বা আছে। বাঙালি বীরেরা সেদিন বুকে বল ধারণ করে অকুতোভয়ে দাঁড়িয়ে ছিলো বলেই কেউ তাদের দাবায়া রাখতে পারেনি। শুধু যে তাদের মুষ্টিতে বজ্র আর বুকে বহ্নি ছিলো তা নয়, তাদের মুখে ছিলো স্বাধীনতার স্লোগান। তারা সেদিনে একে একে 'তোমার আমার ঠিকানা/ পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'শেখ মুজিবের পথ ধরো/ বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'বীর বাঙালি অস্ত্র ধর/ বাংলাদেশ স্বাধীন কর', 'পিন্ডি না ঢাকা/ ঢাকা ঢাকা' বলে প্রকম্পিত করে তুলেছিলো আকাশ-বাতাস। সেদিন বঙ্গবন্ধু নিজে তাঁর ভাষণের শেষে প্রথম 'জয় বাংলা' স্লে¬াগান উচ্চারণ করেন। এই স্লে¬াগানই পরবর্তী সময়ে হয়ে উঠে বাঙালির স্বাধীনতার বীজমন্ত্র।

সাতই মার্চের ভাষণের পরিণাম :

পাকিস্তানি শাসক গোষ্ঠী মনে করেছিলো বঙ্গবন্ধু সেদিন তাঁর ভাষণে বাংলাদেশের স্বাধীনতার চূড়ান্ত ঘোষণা দেবেন। কিন্তু তিনি কৌশলে যে ভাষণ দেন তাতে তাঁর আর ঘোষণা দেওয়ার কিছু বাকি রাখেননি। পাকিস্তানের যে গোয়েন্দা বাহিনী শেখ মুজিবকে বিচ্ছিন্নতাবাদী তকমা দিয়ে আটক করে সামরিক আইনে বিচার করার সুযোগ খুঁজছিলো তারা সেদিন বেওকুফ হয়ে গেলো সম্পূর্ণভাবে। তাদের এ বিস্ময় পরবর্তীকালে অজানা ছিলো না কারও।

বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের পর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের 'নিউজউইক' সাময়িকী তাদের পাঁচ এপ্রিলের সংখ্যায় বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এতে তাঁকে 'পোয়েট অব পলিটিক্স' আখ্যা দিয়ে বলা হয়, এক মাস আগে, মুজিব যখন প্রকাশ্যে স্বাধীনতা ঘোষণা থেকে বিরত থাকছিলেন, তখন নিউজউইকের লোরেন জেনকিন্সকে একান্তে তিনি বলেছিলেন, 'পরিস্থিতি বাঁচানোর আশা তার নেই। আমরা যেভাবে দেশটাকে জানি, তা শেষ হয়ে গেছে। তবে ভাঙার কাজটা যাতে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানই করেন, তিনি তার অপেক্ষায় ছিলেন। আমরাই সংখ্যাগরিষ্ঠ, সুতরাং আমরা বেরিয়ে যেতে পারি না। ওরা, পশ্চিমারা সংখ্যালঘু, বিচ্ছিন্ন হওয়াটা তাদের ইচ্ছাধীন।'

শাশ্বত বাঙালির মুক্তিবাণী :

শাশ্বত বাঙালি কারা এ প্রশ্নের জবাবে বলা যায়, শাশ্বত বাঙালি হলো বিশ্বমানব যারা মধ্যযুগের কবি বডু চন্ডীদাস হতে শিক্ষা পেয়েছে, 'সবার উপরে মানুষ সত্য, তার উপরে নাই', এ আপ্তবাক্যটি। ব্রতচারী নৃত্যের প্রবর্তক গুরু সদয় দত্ত বাঙালির শাশ্বতরূপকে তুলে ধরতে বলেছেন, ‘বাংলা ভাষার বুলি চেলে / বাংলা ধাঁজে নেচে খেলে / বাংলা ভাবে পরাণ মেলে/ বাংলা সেবায় জীবন ঢেলে / কায়-মনে বাঙ্গালি হ'-/ ষোল আনা বাঙ্গালি হ'। / বিশ্ব-মানব হবি যদি / শাশ্বত বাঙ্গালি হ'।’ শৈশবে গুরুসদয় দত্তের ব্রতচারী আন্দোলনের শিষ্য মুজিব তাঁর ভাষণে শাশ্বত বাঙালিয়ানার এই মূলমন্ত্র সবার মাঝে ছড়িয়ে দিবেন, তা স্বাভাবিক ও প্রত্যাশিত। শাশ্বত বাঙালিয়ানার মূল শক্তি তাঁর অসাম্প্রদায়িক চেতনায়। হাজার বছরের ঐতিহ্যে লালিত বাঙালির চেতনাকে ধারণ করেই তিনি সাতই মার্চের ভাষণকাব্যে বলেছেন, 'এই বাংলায় হিন্দু-মুসলমান বাঙালি-অবাঙালি যারা আছে তারা আমাদের ভাই। তাদের রক্ষার দায়িত্ব আপনাদের উপরে। আমাদের যেন বদনাম না হয়।'

একুশের চেতনা হতে পাওয়া স্পর্ধা আর দ্রোহের শক্তিতে টই টম্বুর ছিলো সাতই মার্চের ভাষণ। তাঁর প্রতিটি নিঃশ্বাসে ঠিকরে পড়া আত্মবিশ্বাস আর আবাল্য লালিত সাহসে তাঁকে বলতে শোনা গেছে, 'সাত কোটি মানুষকে দাবায়ে রাখতে পারবা না। আমরা যখন মরতে শিখেছি, তখন কেউ আমাদের দমাতে পারবে না।' তাঁর সেদিনের সেই আত্মবিশ্বাস তাই কালে কালে পরিণত হয়ে অর্জন করেছে বাস্তবতা। সংগ্রামী চেতনায় আজন্ম বেড়ে ওঠা বাঙালির হয়ে তিনি তাঁর মহাভাষণে দায়িত্ব নিয়েই ঘোষণা দিয়েছেন, ‘মনে রাখবা, রক্ত যখন দিয়েছি, রক্ত আরো দিব। এ দেশের মানুষকে মুক্ত করে ছাড়বো ইনশাল¬াহ্।’

শাশ্বত বাঙালিয়ানার সাথে জড়িয়ে আছে আমাদের দুই মহীরুহ রবীন্দ্রনাথ ও নজরুল। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণে বিভিন্ন আঙ্গিকে এই দুই কবি ও দার্শনিকের বাণীর মহিমা পরতে পরতে ফুটে উঠেছে। তাদের বাণীর বলে বলীয়ান রাজনীতির কবি তাই শোষিতের মুখে হাসি ফোটাতেই বলে উঠেন, ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

সাতই মার্চের ভাষণের তাৎপর্য :

সাতই মার্চের ভাষণের সবচেয়ে বড় তাৎপর্য হলো উঁচুমার্গের বুদ্ধিবৃত্তিক কৌশল। যাঁকে বিচ্ছিন্নতাবাদী প্রমাণ করে বাংলার লাখো লাখো মানুষের ওপর গুলি চালানোর কূটকৌশল ভেবে রেখেছিলো পাকিস্তানিরা, তাতে গুড়ে বালি ঢেলে দিলো এই ভাষণের অসাধারণ পরিকল্পিত আড়াল করা স্বাধীনতার ঘোষণা। এতে কেবল লক্ষ লক্ষ প্রাণই বাঁচেনি বরং বেঁচে গেছে একটি দেশের জন্মক্রন্দন। বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের প্রথম অনুচ্ছেদে উপস্থিত জনগণকে সাক্ষী মেনে তাঁর বেদনার্ত মনের উপশম খুঁজেছেন। পাশাপাশি জনগণকেও উপশম দিয়েছেন, সান্ত¡না দিয়েছেন। ভাষণে দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির পর্যালোচনা করে তিনি পশ্চিম পাকিস্তানি রাজনীতিকদের ঘৃণ্য ভূমিকার ওপর আলোকপাত করেছেন এবং সামরিক আইন প্রত্যাহার, সৈন্যদের ব্যারাকে ফিরিয়ে নেওয়া ও গণহত্যার তদন্ত করার দাবি জানিয়েছেন। পাশাপাশি বাঙালির আগামীদিনে করণীয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট দিক-নির্দেশনা দিয়েছেন। তিনি জানতেন তাঁর দূরদর্শিতায়, আজ না হোক কাল তাঁকে আটক করবেই। কাজেই তিনি যদি হুকুম দিতে পরে না-ও পারেন, তবু যেন বাঙালি ঘরে ঘরে প্রতিরোধের দুর্গ গড়ে তোলে, পাড়ায় পাড়ায়, মহল¬ায় মহল¬ায়, প্রত্যেক সাবডিভিশনে আওয়ামীলীগের নেতৃত্বে যেন সংগ্রাম কমিটি গঠন করে। যতদিন না নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের হাতে ক্ষমতা বুঝিয়ে দেওয়া হচ্ছে ততদিন অসহযোগের ডাক দিয়েছেন বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে। তিনি যে মহাত্মা গান্ধী ও নেতাজি সুভাষ বোসের অসহযোগ আন্দোলন ও সশস্ত্র বিপ্লবের মাঝামাঝি অবস্থান গ্রহণ করেছেন তা-ও আমরা তাঁর এই ভাষণে পরিষ্কার হয়ে যাই।

তাঁর আঠারো মিনিটের এ ভাষণে নাকে আসে মৃত্তিকাজাত শব্দের ঘ্রাণ। তিনি দক্ষিণ বাংলার আঞ্চলিক টান যেমন ভাষণে বলবৎ রেখেছেন, তেমনি তাতে 'দাবায়া রাখা', 'মায়নাপত্র', 'আমি যদি হুকুম দিবার নাও পারি...ইত্যাদি বাক্যাংশ ব্যবহার করে তিনি বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁর শোণিতে-নিঃশ্বাসে শতভাগ বাঙালিয়ানারই জয়গান।

সাতই মার্চের ভাষণে কেবলমাত্র নিরেট প্রয়োজনের শব্দমালা আছে তা-ই নয়, বরং এর ভাষা প্রবাদণ্ডপ্রবচন ও বাগধারার পরিমিত এবং যথা ব্যবহারে কাব্যময় হয়ে বেজেছে শ্রোতার কানে। আমরা 'রক্তের দাগ শুকোনো', ভাতে মারব পানিতে মারব, দুর্গ গড়ে তোলা, গদিতে বসা, বন্দুকের মুখে' প্রভৃতি বাগধারার ব্যবহার দেখতে পাই যা মুজিবের ভাষণকে প্রয়োজনের ভাষা ব্যবহারের পাশাপাশি কাব্যময় করে তুলেছে।

এখানে সম্বোধনে যেমন জনগণকে নিজের ভাবার জাদু আছে তেমনি ভাষণ শেষে মুক্তির চিরায়ত সংগ্রামের পথনির্দেশ করা হয়েছে। কেবল ভৌগোলিক মুক্তিই যে মুক্তি নয় তা বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণে মানুষকে জানিয়ে দিয়েছেন পরিষ্কারভাবে। তাঁর ভাষণের প্রথমদিকেই তাঁকে বলতে শোনা যায়, ‘এই দেশকে আমরা গড়ে তুলবো, এদেশের মানুষ অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক মুক্তি পাবে।’

উপসংহার : মার্কিনী 'নিউজউইক' বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে মহাকাব্যের সাথে তুলনা করার মূল ভিত্তি কিন্তু কলেবর বা আয়তন নয়। মহাকাব্যের আবেদনের মতোই এ ভাষণ লাখ লাখ মানুষকে উজ্জীবিত করে একটা দেশেকে স্বাধীনতার দোরগোড়ায় পৌঁছিয়ে দিয়েছে। কাজেই এটি মহাকাব্যের মতোই জননন্দিত।

মহাকাব্য মূলত শ্রব্যকাব্য। যা ব্যক্তিনিষ্ঠ নয়, বরং বস্তুনিষ্ঠ। এটি কবির মনোজগতের প্রকাশ নয় বরং বস্তুকেন্দ্রিক ঘটনা-বিন্যাসের প্রকাশ। মহাকাব্যে গীতিকাব্যের কোমলতা থাকে না কিংবা বাঁশরীর রাগিণী নয় থাকে রণক্ষেত্রের তুর্য-নিনাদ। বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণকে মহাকাব্যের সাথে তুলনা করলে সেরকম ঘটনাপ্রবাহের রণ-নিনাদিত এক শ্রব্যকাব্যের স্বরূপ উন্মেচন করা যায়। এ ভাষণকাব্যে মহাকাব্যের মতোই বীররস আছে। মহাকাব্যের মতোই সাতই মার্চের মহাভাষণে মহানায়কের জয়ের আভাস মিলে। তাই সঙ্গত কারণেই সাতই মার্চের ভাষণকে মহাকাব্যের সাথে তুলনা করে বাঙালি নিজেই গৌরবে অভিষিক্ত হয়েছে।

বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের একটি মৌলিক দিক হলো, তিনি সকল শ্রোতাকে নিজের লোক হিসেবে ধরে নিয়ে সম্বোধনে সেই উষ্ণতা তৈরি করেছেন। বঙ্গবন্ধুর এই গুণকে আমলে নিয়েই একজন কূটনীতিক বলেছিলেন, 'একাকী তাঁর সঙ্গে কথা বলার সময়েও মনে হয় তিনি যেন ৬০ হাজার লোককে সম্বোধন করে বক্তৃতা দিচ্ছেন।'

হাজার বছরের শোষিত বাঙালি তার শোষণ ও বঞ্চনা হতে মুক্তির জন্যে যে জাগরণের দরকার হয়েছিলো তা বঙ্গবন্ধুর সাতই মার্চের ভাষণের মধ্যেই পূর্ণাঙ্গভাবে বিদ্যমান। এ ভাষণের শক্তিতেই মুজিবের কণ্ঠে বাঙালি শুনিয়েছিলো বিশ্বকে, পৃথিবী আজ শোষক আর শোষিত এই দুই ভাগে বিভক্ত। মুজিব আজন্ম শোষিতের পক্ষেই ছিলেন। তাই পুরো ভাষণ অধ্যয়ন করে বলা যায়, সাতই মার্চের ভাষণ সত্যিকার অর্থেই শাশ্বত বাঙালির মহামুক্তির মহাবাণী। জয় বাংলা।

লেখক : উপদেষ্টা, দৈনিক চাঁদপুর কণ্ঠ; অধ্যক্ষ, চাঁদপুর বিতর্ক একাডেমি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়