বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৪ ডিসেম্বর ২০২৩, ০০:০০

নির্বাচনী ইশতেহারে দুই কোটি প্রবীণের জন্যে কী আছে?

হাসান আলী
নির্বাচনী ইশতেহারে দুই কোটি প্রবীণের জন্যে কী আছে?

জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে রাজনৈতিক দল বা জোট জনগণের প্রতি যে অঙ্গীকার ঘোষণা করে সেটাই নির্বচনী ইশতেহার। নির্বাচনী ইশতেহার প্রকারান্তরে রাজনৈতিক দলগুলোর লিখিত চুক্তিপত্র বা ওয়াদা। নির্বাচিত হবার পর ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দল বা জোট জনগণকে প্রদত্ত অঙ্গীকার বা প্রতিশ্রুতি পূরণে সচেষ্ট হয়। ভোটে নির্বাচিত রাজনৈতিক দলের জবাবদিহিতার সংস্কৃতি এখনো জোরদার হয়নি। রাজনৈতিক সচেতনতা বাড়লে জবাবদিহিতার ক্ষেত্র বাড়বে। নির্বাচনী ইশতেহার জবাবদিহিতার বড় ধরনের হাতিয়ার।

বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় দুই কোটি প্রবীণের বসবাস। মোট জনসংখ্যার প্রায় ১১.৬৬ শতাংশ মানুষ প্রবীণ। ২০৫০ সাল নাগাদ প্রবীণের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি হবে, যা মোট জনসংখ্যার ২১ শতাংশ। বিপুল সংখ্যক প্রবীণ জনগোষ্ঠীর কথা রাজনৈতিক দলগুলো কীভাবে ভাবছে তা বুঝতে নির্বাচনী ইশতেহার হলো মূল দলিল।

২০১৮ সালে জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী রাজনৈতিক দলগুলো প্রবীণ বিষয়টি বিবেচনায় রেখেছিল।

আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহারের প্রথম পর্যায়ে ‘আমাদের বিশেষ অঙ্গীকারে’ ২১ টি অঙ্গীকার ঘোষণা করেছিল। এর মধ্যে প্রবীণ, প্রতিবন্ধী ও অটিজম কল্যাণকে ২০ নাম্বার অঙ্গীকারের মধ্যে রেখেছিল।

ইশতেহারে বলা হয়--প্রবীণদের জন্যে সম্ভাব্য ক্ষেত্রে আয় সৃষ্টিকারী কার্যক্রম গ্রহণ, প্রবীণদের বিষয়ে সামাজিক দায়বদ্ধতা ও সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে পাঠ্য বইয়ে অধ্যায় সংযোজন, যানবাহন এবং আবাসিক স্থাপনাগুলোতে প্রবীণদের জন্যে আসন/পরিসর নির্ধারণ, তৃণমূল পর্যায়ে প্রবীণদের জেরিয়েট্রিক স্বাস্থ্য সেবা সম্প্রসারণ এবং হাসপাতাল, বিমানবন্দর, বিভিন্ন স্থাপনা ও যানবাহনে ওঠানামার ব্যবস্থা প্রবীণবান্ধব করে গড়ে তোলা হবে।

সাফল্য ও অর্জন হিসেবে দেখানো হয়েছে, জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা ২০১৩, পিতামাতার ভরণপোষণ আইন-২০১৩, বয়স্ক ভাতার আওতায় এসেছে ৪৪ লাখ প্রবীণ, সরকারের বিশেষ বিবেচনায় ছিল সমন্বিত পেনশন কার্যক্রম, জাতীয় সামাজিক বীমা কর্মসূচি ও বেসরকারি ভলান্টারি পেনশন।

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি নির্বাচনী ইশতেহারে ১৯ টি অঙ্গীকার করেছিল। ১৬ নাম্বার অঙ্গীকারে আবাসন, পেনশন ফান্ড ও রেশনিং ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করার কথা আছে। ব্যাখ্যায় বলা হয়েছিল, দুঃস্থ, বিধবা ও স্বামী পরিত্যক্তা নারী এবং অসহায় বয়স্কদের ভাতার পরিমাণ মূল্যস্ফীতির নিরিখে বৃদ্ধি করা হবে। বেসরকারি ও স্বনিয়োজিত খাতের ব্যক্তিদের জন্যে বার্ধক্যের দুর্দশা লাঘবের উদ্দেশ্যে আইন প্রণয়নের মাধ্যমে একটি পেনশন ফান্ড গঠন করা হবে। গরীব ও নিম্ন আয়ের মানুষদের জন্যে রেশনিং ব্যবস্থা চালু করা হবে।

আওয়ামী লীগ ২০১৮ সালে নির্বাচনে জিতে সরকার গঠন করে প্রায় ৬০ লাখ প্রবীণকে বয়স্ক ভাতার আওতায় আনতে পেরেছে। বয়স্ক ভাতার পরিমাণ বৃদ্ধি করেছে। ৮৫টি শিশু পরিবারে ১০জন করে প্রবীণ থাকার ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের আওতায় কয়েকটি প্রবীণ নিবাস গড়ে তোলা হয়েছে। প্রবীণ উন্নয়ন ফাউন্ডেশন গঠন করার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন। ক্রমবর্ধমান বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করতে প্রয়োজন মনে করে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন-২০২৩ পাস করেছে।

যে সকল রাজনৈতিক দল আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছে এবং যাঁরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন, তাঁরা দেশের প্রায় দুই কোটি প্রবীণের দুঃখ-দুর্দশা-কষ্ট লাঘবে নির্বাচনী ইশতেহারে নিচের বিষয়গুলো বিবেচনায় নেবার অনুরোধ করছি।

বিবেচনার বিষয়গুলো হলো : ১. প্রবীণকল্যাণ মন্ত্রণালয় স্থাপন। ২. অবসরে থাকা প্রবীণদের দক্ষতা, যোগ্যতা অনুযায়ী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা। স্বেচ্ছাশ্রম দিতে আগ্রহীদের সম্মান মর্যাদার সাথে কর্মক্ষেত্রে থাকার ব্যবস্থা করা। ৩. জাতীয় প্রবীণ নীতিমালা-২০২৩ বাস্তবায়নের রূপরেখা প্রণয়ন। ৪. অটিস্টিক, প্রতিবন্ধী প্রবীণদের জন্যে বিশেষ সেবা চালু। ৫. অতি প্রবীণ, শয্যাশায়ী প্রবীণদের দীর্ঘ মেয়াদী সেবা-যত্নের ব্যবস্থা। ৬. গণমাধ্যমে প্রবীণদের ইতিবাচকভাবে উপস্থাপন করা। ৭. মানসিক সক্ষমতা আইন প্রণয়ন করা। ৮. প্রবীণদের শারীরিক ও মানসিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে বিশেষ ফোন নাম্বার চালু করা। ৯. গণপরিবহনে প্রবীণদের জন্যে আসন সংরক্ষণ ও সাশ্রয়ী মূল্যে যাতায়াত সুবিধা রাখা। ১০. সকল প্রবীণকে স্বাস্থ্য বীমার আওতায় নিয়ে আসা।

উপরের দাবিগুলো দেশের সকল প্রবীণের, যাঁরা আমাদের বর্তমান তৈরি করতে তাঁদের যৌবন উৎসর্গ করেছিলেন।

লেখক : প্রবীণ বিষয়ে লেখক, গবেষক ও সংগঠক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়