বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫  |   ২২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   হাইমচরে মাটি বোঝাই বাল্কহেডসহ আটক ৯
  •   কচুয়ায় কৃষিজমির মাটি বিক্রি করার দায়ে ড্রেজার, ভেকু ও ট্রাক্টর বিকল
  •   কচুয়ায় খেলতে গিয়ে আগুনে ঝলসে গেছে শিশু সামিয়া
  •   কচুয়ায় ধর্ষণের অভিযোগে যুবক শ্রীঘরে
  •   ১ হাজার ২৯৫ কেজি নিষিদ্ধ পলিথিন জব্দ করেছে কোস্ট গার্ড

প্রকাশ : ২৫ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০

দেশে প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থার কারণে জনগণের অংশগ্রহণ কাঙ্ক্ষিত নয়
অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার

পুঁজিবাদী বিশ্বায়নের যুগেও বিশ্ব এমন একটি অর্থনৈতিক ক্রান্তিকাল অতিক্রম করছে যখন জলবায়ু পরিবর্তন, কর্মসংস্থান সঙ্কট, মধ্যবিত্ত শ্রেণীর বিকাশ প্রবল প্রভৃতি। তাইতো জলবায়ু পরিবর্তন, জনস্বাস্থ্য নিশ্চিতকরণ ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির মাধ্যমে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর পুনর্গঠনের জন্য সরকারগুলোর কার্যকর কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ অত্যাবশ্যক হয়ে পড়েছে। কিন্তু বিশ্বের অধিকাংশ সরকার কি তার জন্যে প্রস্তুত? বাংলাদেশ এর বাইরে নয়।

ইতিবাচক পরিবর্তনে নেতৃত্ব দেয়া ও তা অর্জনের ক্ষেত্রে সরকারগুলোর সক্ষমতা নিয়ে প্রায় সব দেশেই সংশয় রয়েছে। এমন সংশয় অবশ্য অপ্রত্যাশিত নয়। হয়তো সে কারণে বিশ্বের অনেক দেশে ঘন ঘন সরকারও পরিবর্তন হচ্ছে। আর তাইতো অনেক দেশেই কোনো জনগোষ্ঠীর আদর্শিক মেরুকরণের সঙ্গে সঙ্গে সরকার ব্যবস্থায় কর্তৃত্ববাদ জেঁকে বসেছে। কর্তৃত্ববাদ ও আদর্শিক মেরুকরণ অবশ্য একে অপরের পরিপূরক ও সমার্থক। যার ফলে জনগণ ঐক্যবদ্ধ হয়ে বৈশ্বিক সমস্যাগুলো সমাধানের নিমিত্তে সামষ্টিক কোনো উদ্যোগ নিতে পারছে না।

বিশ্বের অধিকাংশ দেশের সরকারগুলোকে নিয়ে রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশ প্রভৃতি বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের বড় দুশ্চিন্তা হলো যে, অর্থনীতিতে ইতিবাচক কাঠামোগত পরিবর্তন আনার জন্যে এদের না আছে পর্যাপ্ত তথ্য, না আছে সামর্থ্য। অনেক অভিযোগ রয়েছে যে, সরকারকে বেশি ক্ষমতা দিলে তারা ভুল জায়গায় সম্পদ নষ্ট করে ও পয়সা ঢালে এবং ব্যক্তি বা গোষ্ঠী কিংবা শ্রেণী বিশেষের স্বার্থ রক্ষার ক্রীড়নক হয়ে দাঁড়ায়। এখানেই হলো নব্য উদার নৈতিকতাবাদের গোড়ায় গলদ। এ সমস্যা উত্তরণে সরকারগুলো নব্য উদার নৈতিকতাবাদের উত্তরসূরি শাসন ব্যবস্থাগুলো, বিশেষ করে প্রবৃদ্ধিবাদ বা প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক নীতি-নির্ধারণী প্রবণতা থেকে বের হয়ে আসতে পারছে না। আর পারছে না বলেই অপরদিকে দেখা যায়, এ সরকারগুলো উদারনৈতিক গণতন্ত্রের সমর্থক। আর উদারনৈতিক গণতন্ত্র পুঁজিবাদের প্রশ্রয় দেয় এবং বিপদকালীন অবস্থা অবলম্বনে বিশেষ সমর্থ নয় বলেও অভিযোগ আছে। বিশেষ করে বিশ শতকের প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে উদারনৈতিক গণতন্ত্র বিশেষ সংকটের সম্মুখীন। কারণ, অর্থনৈতিক-সাম্য, অর্থনৈতিক-অধিকার ও অর্থনৈতিক-গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত করতে অসমর্থ হওয়ায় উদারনৈতিক গণতন্ত্র রাজনৈতিক সজ্জায় আনুষ্ঠানিক হয়ে দাঁড়ায়।

উদারনৈতিক গণতন্ত্র পুঁজিবাদের সমর্থক। আর পুঁজিবাদী গণতান্ত্রিক সমাজে পুঁজির বিকাশ ও কেন্দ্রীয়করণ হয়ে থাকে। তাই বিশ্বে ব্যক্তি পুঁজির বিকাশ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলস্বরূপ বিশ্বের প্রায় অর্ধেক সম্পদ ১৬ জন ধনিকদের হাতে। অপরদিকে আন্তর্জাতিক দাতব্য সংস্থা অক্সফামণ্ডএর তথ্যমতে (সূত্র : এএফপি), বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের বার্ষিক সম্মেলনে এ তথ্য জানিয়েছে যে, বিশ্বে প্রতি ৩০ ঘন্টায় একজন করে নতুন শত কোটিপতি বা বিলিয়ানিয়ার তৈরি হচ্ছে। (বাংলাদেশ প্রতিদিন, ২৪ মে ২০২২)। বাংলাদেশ যেহেতু এ ধরনের সরকার-ব্যবস্থার বাইরে নয়, সেহেতু দেখা যাচ্ছে, দেশের বৃহৎ ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা বারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় এ ধরনের সরকার দেখতে চাইবেন, এটা খুবই স্বাভাবিক। গত দেড় দশকে এই ব্যবসায়ী-শিল্পপতিরা সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। শ্রমজীবী সাধারণ মানুষকে নির্মমভাবে শোষণ করে এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুট করে তারা নিজেদের সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন।

বস্তুত সরকারগুলোর বস্তুনিষ্ঠ আলোচনায় দেখা যাবে এদের নীতিগত অবস্থান কখনই স্থির নয় এবং খুব পরিবর্তনশীলও না। বরং একবার যথাযথ লক্ষ্য স্থির করলে এরা সময়ের সঙ্গে অভিজ্ঞতার ভেতর দিয়ে সমস্যা সমাধানের সামর্থ্য অনেকটা অর্জন করতে পারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে পারে না জনগণের আস্থা অর্জন করতে। সরকারি কর্মকর্তা কিংবা শাসন-ব্যবস্থায় জড়িত রাজনৈতিক নেতাদের জন্যে প্রধান আত্মজিজ্ঞাসা হওয়া উচিত, আমরা কি সঠিক লক্ষ্য নির্ধারণ ও সরকার ব্যবস্থার সঠিক পন্থাটি প্রতিষ্ঠা করতে পেরেছি? আমাদের কি সক্ষমতা আছে?--এটা হয়তো নয়।

সংশয়ী লোকজন বলতে পারেন যে, এটি তত্ত্ব হিসেবে শুনতে ভাল লাগে, কিন্তু প্রায়োগিক ক্ষেত্রে এটি এখনো অর্জনযোগ্য নয়। শুধু চারপাশে তাকালে দেখতে পাবেন, প্রায় সব জায়গায় সরকারের শাসন-ব্যবস্থাকে আপনি ব্যর্থ দেখতে পাবেন--স্থানীয়ভাবে, জাতীয়ভাবে ও বৈশ্বিকভাবে। তবে এক্ষেত্রে কলম্বিয়া ল’ স্কুলের চার্লস স্যাবেল এবং সান ডিয়োগোতে অবস্থিত ক্যালিফোর্নিয়া ইউনিভার্সিটির ডেভিড ভিক্টর একটি বইয়ে দেখিয়েছেন, কার্যকর সরকার-ব্যবস্থা বিরাজমান আছে তবে এক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতার ঘাটতিও রয়েছে। স্যাবেল এবং ভিক্টর জলবায়ু পরিবির্তনের উপর আলোকপাত করেছেন, যেটি আমাদের সময়ে সবচেয়ে বড় নীতিগত চ্যালেঞ্জ। এটি মোকাবেলা করা সরকার ব্যবস্থার জন্য দ্বিগুণভাবে কঠিন। নীতিনির্ধারণগুলো শুধু জাতীয় পর্যায়ে কার্যকর হলেই হবে না, বৈশ্বিকভাবে ভিন্ন স্বার্থ ও পরিস্থিতির রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গেও সমঝোতা হতে হবে।

স্যাবেল ও ভিক্টরের ব্যাখ্যার মধ্যে প্রতীয়মান হয় যে, প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক সরকারগুলোর নীতিনির্ধারণ ও বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সাধারণ কৌশল উচ্চাকাঙ্ক্ষী ভূমিকা রাখলেও কিছু ক্ষেত্রে অসৎ উদ্দেশ্য লুক্কায়িত থাকে। তাই ত্রুটি ও ভুল থাকলেও যারা কর্মসূচি বাস্তবায়ন করবেন তাদের অবশ্যই গভীর অনিশ্চয়তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখতে হবে। এবং সরকারি সংস্থাগুলোকে অবশ্যই কিছু দণ্ড (কর্তৃত্বের হুমকি) ব্যবস্থা করতে হবে এবং কিছু প্রণোদনা ও জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। বলতে গেলে আরো বলতে হয়, বৈশ্বিক সমস্যাগুলোও সমাধানে প্রবৃদ্ধিকেন্দ্রিক সরকার ব্যবস্থা ও চিন্তা কাঠামোগুলোকে অতীতের ব্যর্থ ও অকার্যকর ভাবাদর্শগুলোকে অতিক্রম করে যেতে হবে।

লেখক পরিচিতি : অধ্যাপক মোঃ হাছান আলী সিকদার, সভাপতি, চাঁদপুর জেলা জাসদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রনেতা, চাঁদপুর জেলা শিক্ষক নেতা, সমাজ ও রাজনীতিবিশ্লেষক। তাং- ০১/০৮/২০২৩

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়