প্রকাশ : ১১ আগস্ট ২০২৩, ০০:০০
মানুষ তোমাকে ইমপর্টেন্স বা গুরুত্ব দেয় কখন জানো? যখন তোমাকে প্রয়োজন, দূরবীণ দিয়ে হলেও তোমায় খুঁজবে! প্রয়োজন একটা বিশাল তাগিদ। এই পার্থিব জীবনে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া এক কদম এগোয় না! মানুষের কিছু নির্দিষ্ট কর্ম থাকে এবং থাকে কিছু মৌলিক চাহিদা।
আমরা সবাই জানি, মানুষ সামাজিক জীব। কিন্তু আজকের বাস্তবতায় পরিতাপের বিষয় এই যে, বন্ধন টুটে যায় অর্থের মানদ-ে! টাকা... টাকা... আর টাকা! সব সম্পর্ক টিকিয়ে রাখে টাকা! আগে এ রকম ছিলো না।
শিশু থেকে বয়স্ক পর্যন্ত মানুষের কতোগুলো ধাপ থাকে। শিশু প্রয়োজন বুঝে না, বালক বেলাটাও অনেকটা সেরকম। শিশুর প্রয়োজন ঘুম আর খাবার, যা ঈশ্বর প্রদত্ত। যদিও বিশ্বব্রহ্মা-ে সকল প্রাণের রিজিকদাতা তিনি।
বালক, নিজ থেকেই অহিংস আচরণে দীক্ষিত। তার খেলাধুলা, বিনোদন, লেখাপড়া এটা তার বাবা-মায়ের কর্ম পরিকল্পনার মধ্যে পড়ে, অবশ্য অনাথ অসহায়ের ওপর থাকে ঈশ্বরের হাত। ওদের অনেকটা এলোমেলো পথ! এলোমেলো জীবন! কোনো সহৃদয়বান ব্যক্তির নজরে পড়লে ওদেরও সুস্থ মানসিক ভাবে বেঁচে ওঠার সম্ভাবনা থাকে।
কৈশোরে সে খানিকটা নিজেকে চিনতে শিখে, আসে মানুষের জীবনে মূল্যবান সময় যৌবন। যৌবন মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ সময়। তার মনে স্বপ্ন বাসা বাঁধে, বিন্দু বিন্দু আশা সঞ্চারিত হয়, দুটো পথ থাকে সুপ্রসারিত--
এক. সত্য সুন্দরের সন্ধান এবং খাঁটি মানুষ হবার অদম্য ইচ্ছা।
দুই. অন্ধকার ধূসর চোরাগলি।
ভালোবাসা, যৌবনে বেলি ফুল। যদিও ভালোবাসায় ধাক্কা খাওয়ার কোনো বেসিক বয়স নেই। যে কোনো বয়সেই মানুষ প্রেমে পড়ে। বলছিলাম, প্রয়োজন ছাড়া তোমাকে কেউ গুরুত্ব দেয় না!
আমাদের সমাজে (একটু বেশি) দুর্ভাগ্যক্রমে, শিশুরাও আজ পৈশাচিকতা আর বাস্তবতার শিকার!
আর মানুষ তো অবশ্যই বাস্তবতার শিকার। আর এই বাস্তবতা হলো তোমার পজিশন মানে তোমার অবস্থান, আর একটু পরিষ্কার করে বললে, তুমি কোন্ পর্যায়ে বাস করছো?
‘চিরদিন কাহারো সমান নাহি যায়’ মনে নেই কথাটা কার? সম্ভবত কাজী নজরুল ইসলামের।
জীবনের ফেলে আসা সময় বিশ্লেষণ করলে দেখতে পাবে, কে তোমায় মনে রেখেছে, কে তোমায় সত্যিকার ভালোবাসে, আর কে তোমায় শুধু প্রয়োজন মনে করে!
‘এখনকার সম্পর্কগুলো সব
সূর্যমুখী ফুলের মতো
হয়ে গেছে।
সূর্যমুখী ফুল যেমন যেদিকে
সূর্য থাকে সে দিকে তার মুখ
ঘুরিয়ে দেয়।
মানুষও তেমন যেখানে স্বার্থ আছে
সেদিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয় "
(সংগৃহীত)
তুমি তখনই একা হবে, যখন তোমার প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়! দশদিন উপকার করলে একদিনের অপারগতাকেই মূল্যায়ন করে মানুষ!
বিবেকের উদারতা গিলে খাচ্ছে সংখ্যাগরিষ্ঠ সামাজিক জীব! 'মানুষ মানুষের জন্য' কথাটি আজ সিংহভাগ পচেগলে দুর্গন্ধময়!
‘চোখে দেখিস, প্রাণে কানা।
হিয়ার মাঝে দেখণ্ডনা ধরে ভুবনখানা।
--রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
প্রয়োজন থাকবে, সাথে থাকবে নিঃস্বার্থ ভালোবাসা। হতে হবে অসময়েরও বান্ধব। তবেই তো প্রেম থাকবে,
বিবেকের দৃষ্টি উজ্জ্বল হবে, দৃষ্টিনন্দন হবে সামাজিক পরিচয়। স্বার্থ যেন এমনটা না হয়, শুধু আমারটাই দেখলাম!
বার্ধক্য, মানব জীবনে কষ্টের অধ্যায়। সব থেকেও তুমি একা!
তবুও মনে মনে ভেবে আমরা তৃপ্ত হই, সে আমার। আসলে কি আমার?
আমার বলতে তো কিছু নেই।
এই যে আমি আছি, এই যে আমি নেই!
এটাই পৃথিবীর নিয়ম। তবুও আমাদের প্রয়োজন ফুরোয় না !!
‘তুমি যদি স্বার্থপর মানুষদের চিনতে চাও
তবে তোমার খারাপ সময়ের জন্য অপেক্ষা কর’ (সংগৃহীত)
এই পার্থিব জীবনে মানুষ প্রয়োজন ছাড়া এক কদম এগোয় না, সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন এবং প্রসন্ন মন নিয়ে বেঁচে থাকুন।
লেখক : সাহিত্য সম্পাদক, বঙ্গজ সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী, পুরাণবাজার, চাঁদপুর।