শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৭ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   শাহরাস্তিতে জেলা ছাত্রলীগ নেতা গ্রেফতার, চিকিৎসার জন্য কুমিল্লায় প্রেরণ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক

প্রকাশ : ০১ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

নিম্নবিত্ত প্রবীণ নারীর চ্যালেঞ্জ
অনলাইন ডেস্ক

নিম্নবিত্ত প্রবীণ নারী বলতে বুঝায় যারা ভাত, কাপড়, চিকিৎসা,আশ্রয়ের সংকটে আছে। প্রবীণ নারীর জীবনে চার অধ্যায় রয়েছে-স্বামীসহ জীবন, বিধবা, তালাকপ্রাপ্ত ও অবিবাহিত জীবন।

যেসব প্রবীণা স্বামীসহ বসবাস করেন তারা শারীরিকভাবে অনেকই খুব দুর্বল। যৌবনে হাড়ভাঙ্গা খাটুনি, অপুষ্টি, অধিক জন্মদানের কারণে অসংক্রামক কয়েকটি রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে। ঠিক সময়ে ডাক্তার দেখাতে না পারার কারণে রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। টাকা-পয়সার অভাবে নিয়মিত ওষুধ কিনতে পারে না। শারীরিক অসুস্থতার জন্য কাজে যেতে পারে না। ফলে আয়-রোজগার কমে যায়। বয়সের পার্থক্য থাকায় স্বামীরা অধিক প্রবীণ হওয়ায় আয় রোজগার থাকে না। থাকে কষ্ট, ব্যথা, বেদনা, নির্যাতন, নিপীড়ন, অসম্মানজনক আচরণ।

কারো কারো মধ্যে স্বাভাবিক যৌন কামনার অতৃপ্তি থেকে যায়।

প্রবীণাদের মধ্যে বিধবা নারীর সংখ্যা তুলনামূলকভাবে বেশি। যাদের কম বয়সে স্বামী মারা গেছে তারা অনেক কষ্ট-সংগ্রাম-লড়াই করে ছেলে-মেয়ে লালন পালন করেছেন।

সেই ছেলে-মেয়ে বড় হয়ে কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেছে। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই প্রবীণা সন্তানের সাথে থাকে। অল্প কিছু সংখ্যক একাকী থাকেন।

নিম্নবিত্ত প্রবীণাদের মধ্যে তালাকের হার তুলনামূলকভাবে বেশি। কারো কারো একাধিক বিয়ে হয়। তালাকপ্রাপ্ত নারীর জীবন অধিক সংকটময়। ঘর সংসার ভেঙ্গে যাবার কারণে সামাজিক ও পারিবারিক লাঞ্ছনার শিকার হতে দেখা যায়। কাজ কর্মে নিয়োজিত হতে না পারার কারণে আয়-রোজগার থাকে না।

অবিবাহিত প্রবীণ নারীরা কম বয়সে আয়-রোজগার করে মা, বাবা, ভাই, বোনকে দিয়েছেন। পরবর্তীতে ভাই-বোনের ছেলে-মেয়েদের দিয়েছেন। আবার কেউ কেউ প্রতারকের খপ্পরে পড়ে সব কিছু হারিয়েছেন। এরা বাবা- মায়ের সাথে থাকেন, পরবর্তীতে ভাই-বোনের সাথে থাকেন অথবা একাকী থাকেন।

নিম্নবিত্ত প্রবীণ নারীর সংকট সবচেয়ে বেশি। কর্মজীবনে পিয়ন, আয়া, বুয়া, পরিচ্ছন্ন কর্মী, সেবা কর্মী, ক্লিনার, কৃষি শ্রমিক, নির্মাণ শ্রমিক বা গার্মেন্টসে চাকরি করতেন। যা কিছু আয় রোজগার করেছেন তার সবটুকু পরিবারের জন্য, ছেলেমেয়ের জন্য ব্যয় করেছেন। কোনো ধরনের সঞ্চয় ছিল না। এরা চরম আর্থিক সংকট মাথায় নিয়ে জীবন বয়ে বেড়ান। অল্প সংখ্যক নারী বসবাস করার জন্য বৃদ্ধাশ্রমে চলে যান। কিছু সংখ্যক নারী মানুষের দয়া অনুগ্রহ কৃপা গ্রহণ করে বেঁচে আছেন। কেউ কেউ ভিক্ষা করেন। এই ভিক্ষা করা টাকা ছেলে মেয়ে, নাতি নাতনিদের দিতে দেখা যায়। আবার এই ভিক্ষা করা টাকা কেউ প্রতারণা করে নিয়ে যায়। বিশেষ করে যাদের কাছে টাকা জমা রাখা হয় তারা কেউ কেউ টাকা দিতে অস্বীকার করে।

ফুটপাতে, বড় দালানের নিচে, রেলস্টেশনে, লঞ্চ ঘাটে, বাস স্টেশনে প্রবীণাদের রাত কাটাতে দেখা যায়। কখনো কখনো সমাজসেবা বিভাগের লোকজন প্রবীণাদের ধরে নিয়ে ভবঘুরে কেন্দ্রে রাখার চেষ্টা করে।

অসুস্থ প্রবীণ নারী সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা পাবার জন্য আসে। হাসপাতালে অব্যবস্থাপনা, হয়রানির শিকার হতে দেখা যায়। রোগ নির্ণয় করার পর যে ওষুধ লাগে তা কেনার টাকা থাকে না। হাসপাতালে ভর্তি হতে পারলে অনেক সময় সুস্থ হয়ে ফিরে আসতে পারে। অপুষ্টিজনিত কারণে ঘন ঘন অসুখণ্ডবিসুখে আক্রান্ত হয়। প্রবীণরা শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হন। ছেলে-মেয়ে, পুত্রবধূ কিংবা পাড়া প্রতিবেশীর কাছ থেকে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হবার খবর পাওয়া যায়। সহায় সম্পদ কিছু থাকলে ছেলে-মেয়েরা হাতিয়ে নিয়ে যায়।

প্রবীণ নারীকে সেবা কর্মী হিসেবে স্বামীর সার্বক্ষণিক সেবা-যত্ন করতে হয়। ছেলে-মেয়ে থাকলে তাদের সন্তানদের দেখাশোনা করতে হয়। রান্না বান্না, ঘর দোর পরিষ্কার করার কাজ করতে হয় । স্কুল পড়ুয়া নাতি-নাতনিদের স্কুল থেকে বাসায় আনা নেয়া করতে হয়। এসব কাজের ফাঁকে মাঝে মধ্যে টেলিভিশনে সিরিয়াল দেখেন। এটাই তাদের একমাত্র বিনোদন। লেখাপড়া না থাকায় নলেজ ওয়ার্কার হিসেবে কাজ করার সুযোগ নেই। কাজ পাওয়া যায় শারীরিক পরিশ্রমের, সেটা সম্ভব হচ্ছে না কারণ শরীরের শক্তি লোপ পেয়েছে।

অনেকেই বয়স্ক ভাতা পান। সামান্য এই ভাতা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। প্রবীণ নারী সবচেয়ে বেশি অবহেলার শিকার হন।

অসুস্থ হলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যাবার লোক খুঁজে পাওয়া যায় না। যদিওবা কেউ হাসপাতালে নিয়ে যায় তবে চিকিৎসা করার টাকা-পয়সা থাকে না। নির্যাতন-নিপীড়নের শিকার হলে তেমন কেউ এগিয়ে আসে না।

পরিবারের সদস্যরা অভাব অনটনের মধ্যে থাকায় তাদের পক্ষে মায়ের সেবা-যত্ন যথাযথ ভাবে করার সুযোগ থাকে না।

আমরা ভুলে গেছি এই প্রবীণ নারীরা তাদের যৌবনে কল-কারখানায়, সন্তান উৎপাদনে, মাছ চাষে, গার্মেন্টসে, বাড়ি-ঘরে, কৃষি জমিতে, হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল পালনে বড় ধরনের ভূমিকা পালন করেছেন। অর্থনীতির চাকা সচল রাখতে নিজের ঘাম ঝরিয়ে রক্ত পানি করেছেন। দেশের সম্পদ সৃষ্টিতে, অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রবীণ নারীর এই অবদানকে স্বীকার করতে চাই না। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় সৃষ্ট সম্পদের মালিকানায় সবারই অধিকার থাকা উচিত। উপায়হীন প্রবীণ নারীকে পিছনে ফেলে রেখে উন্নয়ন করা অসম্ভব হবে। উন্নয়ন মানে অল্প কিছু সংখ্যক মানুষের আরাম, আয়েশ, ভোগ, বিলাস নয়। সকল মানুষের সমমর্যাদায় একই সাথে এগিয়ে যাওয়া হলো উন্নয়ন। দেশের অর্থনীতিতে বিশাল অবদান রাখা এই প্রবীণ নারীর দায়িত্ব পরিবারের সদস্যদের উপর ন্যস্ত করা অমানবিক। এদের দায়িত্ব গ্রহণ করতে হবে সমাজ এবং রাষ্ট্রের।

লেখক : সভাপতি, এজিং সাপোর্ট ফোরাম।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়