প্রকাশ : ২৪ নভেম্বর ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের বড় সমস্যা কোন্টি সেটি জানার জন্যে কোনো ব্যক্তি বা সংস্থাকে কষ্ট করে জরিপ করার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। একবাক্যে ভুক্তভোগী মাত্রই বলবে, এই শহরের বড় সমস্যা যানজট। রোববার চাঁদপুর জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ সভাপ্রধান হিসেবে তাঁর বক্তব্যে বলেছেন, চাঁদপুর শহরের এখন বড় সমস্যা হচ্ছে যানজট। অবৈধ সিএনজি-ইজিবাইকের বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। মোবাইল কোর্ট শহর এলাকায় আরো বেশি বাড়াতে হবে। যানজট নিরসনে সবার সহযোগিতা দরকার।
চাঁদপুর শহরে যানজট সমস্যা নিরসন করার আগে সিএনজি অটোরিকশা, ইজিবাইক ও রিকশার জন্যে স্ট্যান্ড নির্ধারণের কোনো বিকল্প আছে বলে আমাদের জানা নেই। চাঁদপুর শহরের পাঁচ রাস্তার মোড় শপথ চত্বরে নিত্য বিদ্যমান বিশৃঙ্খলার কারণে যানজট প্রকট আকার ধারণ করে। সারা জেলার বিভিন্ন গন্তব্য অভিমুখী সিএনজি অটোরিকশার অনির্ধারিত স্ট্যান্ড হয়ে গেছে এই শপথ চত্বরের পূর্ব পাশর্শ্বস্থ শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কের প্রবেশ মুখ। সড়কটির উত্তর দিকে চাঁদপুর টাওয়ারের সম্মুখে এবং দক্ষিণ দিকে হকার্স মার্কেটের সম্মুখস্থ ফুটপাত ঘেঁষে অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা দাঁড়িয়ে থেকে ডেকে ডেকে যাত্রী সংগ্রহ করে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যায়। এগুলোকে নিয়ন্ত্রণ করা সীমিত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশের পক্ষে সম্ভব নয়। এজন্যে চাঁদপুর টাওয়ারের ব্যবসায়ী এবং হকার্স মার্কেটের ব্যবসায়ী ও মালিক সংগঠনের সহযোগিতা প্রয়োজন। সর্বোপরি চাঁদপুর পৌরসভার সহযোগিতা প্রয়োজন। ব্যবসায়ী/দোকান মালিকরা যদি তাদের দোকানের সামনে সিএনজি অটোরিকশাকে অবস্থান করতে বাধা দেয়, তাহলে তো আর কিছুই লাগে না। কথা হলো, এ বাধাটি দেবে কে? আমাদের মতে, চাঁদপুর টাওয়ার ও হকার্স মার্কেটের পক্ষ থেকে বেতনভুক্ত একজন বাধাদানকারী নিয়োগ দেয়া দরকার, যার প্রতি সমর্থন থাকবে পৌরসভা ও পুলিশের।
শপথ চত্বরে চাঁদপুর পৌরসভা পুলিশ বক্স করে দিয়েছে। কিন্তু সেখানে পর্যাপ্ত পুলিশ থাকে না। পৌর কর্তৃপক্ষ এ পুলিশ সঙ্কট নিরসনে অন্তত চারজন আনসার/কিংবা নিজস্ব কর্মচারীকে সকাল ৯টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত পালাক্রমে ডিউটি দিতে পারে। শপথ চত্বরে রেলওয়ে বায়তুল আমিন মসজিদের সামনে, হকার্স মার্কেটের পশ্চিম পাশে এবং উত্তর পাশে ফুটপাত লাগোয়া সকল হকার উচ্ছেদে টেকসই ব্যবস্থা নেয়া দরকার। এজন্যে লাগাতার মোবাইল কোর্ট কিংবা পৌরসভার উচ্ছেদ অভিযান অনিবার্য। সর্বোপরি যতো দ্রুত সম্ভব শ্রীহীন ও অকার্যকর হয়ে পড়া ‘শপথ’ নামক স্থাপনাটিকে ভেঙ্গে পৌরসভার পক্ষ থেকে সরু অবয়বের লম্বাটে দৃষ্টিনন্দন কিছু করা, যার চারপাশে থাকতে পারে ঘড়ি।
চাঁদপুর শহরের যানজট নিরসনে শপথ চত্বরকেন্দ্রিক অনেক কিছু করলেই যে পর্যাপ্ত হবে এমনটি কিন্তু নয়। পালবাজার সংলগ্ন ব্রিজের গোড়া, মাতৃপীঠ সংলগ্ন চৌরাস্তা, পুরাণবাজারস্থ লোহারপুল, চেম্বার অব কমার্স ভবন সংলগ্ন চৌরাস্তা, মধুসূদন হাইস্কুল সংলগ্ন তিন রাস্তার মোড় এবং লঞ্চঘাটে যানবাহনগুলোর শৃঙ্খলাপূর্ণ চলাচল নিশ্চিতে প্রয়োজনীয় ট্রাফিক পুলিশ/পুলিশ/আনসার/পৌর কর্মচারী/স্বেচ্ছাসেবীকে দায়িত্ব দিতে হবে এবং যথাযথ সমন্বয় করতে হবে বলে আমরা মনে করি।
চাঁদপুর শহরের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পূর্ব পাশে এবং রেলওয়ে লেকের পশ্চিম পাশের জায়গাটি আশির দশক থেকে দীর্ঘকাল বেবীট্যাক্সি (অটোরিকশা) স্ট্যান্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে। কিন্তু এখন সেখানে কোনো সিএনজি অটোরিকশা অবস্থান করে না। এগুলো অবস্থান করে শপথ চত্বরে। সেজন্যে সেখানে যানজট কমে না বললেই চলে।
চাঁদপুর শহরে যানজট কমাতে বিকল্প সড়ক নির্মাণের কথা ভাবছেন মেয়র। সেটা অবশ্যই সময় সাপেক্ষ। তার আগে বড় স্টেশন রোড থেকে পালবাজারমুখী বকুলতলা সড়ক, কোর্ট স্টেশনের পশ্চিম পাশর্শ্বস্থ চৌদ্দ কোয়ার্টার ও পালবাজার অভিমুখী সড়ক এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়ক থেকে আদালত পাড়া অভিমুখী সড়কে রেললাইনে লেভেল ক্রসিং নির্মাণের জন্যে রেলওয়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারে পৌর কর্তৃপক্ষ। এতে শহরের অভ্যন্তরে সংক্ষিপ্ত চলাচল নিশ্চিত হবে এবং শপথ চত্বরে যানবাহনের চাপ কমবে। বিষয়টি গুরুত্বের সাথে ভেবে দেখার জন্যে জেলা প্রশাসন ও পৌর কর্তৃপক্ষের প্রতি জোর অনুরোধ ও দাবি জানাচ্ছি।