প্রকাশ : ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
যে আয়োজনে আছে বিমুগ্ধতা
অনেক বেশি মেধাবী, বিশেষ করে অসম্ভব পরিশ্রমী, দেশের প্রথিতযশা একজন সাংবাদিক ছিলেন চাঁদপুরের কৃতী সন্তান নাজিম উদ্দিন মোস্তান। চাঁদপুর সদর উপজেলার পশ্চিম সকদী গ্রামে ১৯৪৮ সালের ১১ সেপ্টেম্বর তিনি জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা হাফিজউদ্দিন এবং মা সায়েরা খাতুন। তিনি ফরিদগঞ্জের দেশখ্যাত বিদ্যালয় চান্দ্রা ইমাম আলী উচ্চ বিদ্যালয় থেকে প্রথম বিভাগে মাধ্যমিক, পরবর্তীতে চট্টগ্রাম থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ১৯৬৯ সালে স্নাতক ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থাতেই তিনি চট্টগ্রামের দৈনিক সমাচার পত্রিকায় প্রুফ রিডারের চাকুরি দিয়ে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। তারপর ঢাকায় এসে বাংলাবাজারে একটি প্রকাশনা সংস্থায় একই কাজ করেন। তিনি কার্যত সাংবাদিকতায় প্রবেশ করেন দৈনিক পয়গাম পত্রিকার সহ-সম্পাদক হিসেবে। একই পদে ১৯৭১ সালে তিনি যোগদান করেন দৈনিক সংবাদে। এখানে ৪ বছর কাজ করার তিনি ১৯৭৫ সালে সহ-সম্পাদক পদেই দৈনিক ইত্তেফাকে যোগদান করেন এবং সাংবাদিকতায় উজ্জ্বল ক্যারিয়ার সৃষ্টির অভাবনীয় সুযোগ পান। তিনি এ পত্রিকার প্রধান প্রতিবেদক (চীফ রিপোর্টার) পদে অধিষ্ঠিত হয়ে ব্যাপক সুনাম অর্জন করেন। তিনি সকল প্রকার প্রতিবেদন লিখায় আশাব্যঞ্জক পারঙ্গমতা প্রদর্শন করে পাঠক মহলে বিপুলভাবে সমাদৃত হন। তিনি অর্থনীতি বিষয়ক কলাম ও প্রতিবেদন লিখে সরকারকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন সম্পর্কে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষভাবে পরামর্শ দিতেন। তাঁর লিখা সরেজমিন প্রতিবেদনে যে দক্ষতা দেখা যেতো, তাতে পাঠক-আকর্ষণের সকল উপাদানই ছিলো। তিনি ‘সাপ্তাহিক রাষ্ট্র’ নামক একটি পত্রিকার প্রকাশক হিসেবে স্বতন্ত্র আঙ্গিকে এর প্রকাশনা অব্যাহত রেখে সুধী মহলে আলোচনার ঝড় তোলেন।
|আরো খবর
নাজিম উদ্দিন মোস্তানের সাংবাদিকতায় যে সহজিয়া ভাব পরিলক্ষিত হয়েছে, তাতে ছিলো আধুনিকতার ছাপ। তিনি তথ্যপ্রযুক্তির বিকাশে যেনো এক শক্তিশালী মুখপাত্রের ভূমিকায় অবতীর্ণ হন। এছাড়া সহজ ভাষায় বিজ্ঞানকে জনপ্রিয় করার জন্যে তাঁর আন্তরিক প্রয়াস ছিলো চোখে পড়ার মতো। এজন্যে তাঁকে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনীয়ার্স সম্মাননা প্রদান করে। ১৯৯০ সালে প্রযুক্তিবিষয়ক পত্রিকা ‘কারিগর’ নাজিম উদ্দিন মোস্তানকে পদক প্রদান করে। এছাড়া সমাজকল্যাণ সংস্থা ও রমনা রোটারী ক্লাব তাঁকে সম্মাননা পদকে ভূষিত করে। সরকারও তাঁকে যথার্থ মূল্যায়ন করে। ২০০৩ সালে সাংবাদিকতায় তিনি দেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার ‘একুশে পদক’ লাভ করেন। একই বছর বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতি ও বিসিএস কম্পিউটার সিটি তাঁকে আজীবন সম্মাননা জ্ঞাপন করে।
নাজিম উদ্দিন মোস্তান এতোসব মূল্যায়ন তথা পদক ও সম্মাননা প্রাপ্তির পর দশ বছর বেঁচে ছিলেন। জীবন সায়াহ্নের শেষ ক’টি বছর তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্ততাসহ বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত ছিলেন। অবশেষে ২০১৩ সালের ১৮ আগস্ট তিনি মৃত্যুবরণ করেন মাত্র ৬৪ বছর ৯ মাস ৭ দিনের মাথায়। যে মৃত্যুকে অকাল মৃত্যুই বলা যায়। তাঁর মৃত্যুর পর তাঁকে নিয়ে চাঁদপুরে স্মরণসভা আয়োজন কিংবা প্রতি বছর তাঁর মৃত্যুবার্ষিকী পালনে তাঁর পরিবারের সদস্যসহ অন্য কারো উদ্যোগ লক্ষ্য করা যায়নি। গেলো আগস্ট মাসের ১৮ তারিখে তাঁর ৮ম মৃত্যুবার্ষিকীতে চাঁদপুরে পালিত হয়নি দৃশ্যমান কোনো কর্মসূচি।
এরই মধ্যে গত পরশু ১১ সেপ্টেম্বর কিংবদন্তীতুল্য সাংবাদিক নাজিম উদ্দিন মোস্তানের ৭৪তম জন্মদিনে তাঁর জ্যেষ্ঠ কন্যা নাজমুন্নাহার মিলি চাঁদপুর প্রেসক্লাবে আয়োজন করেন এক মানবিক কর্মসূচি। মিলি তার পিতার ন্যায় সাংবাদিকতা পেশায় নিযুক্ত আছেন। তিনি স্যাটেলাইট টেলিভিশন এসএ টিভির জয়েন্ট নিউজ এডিটর। তিনি ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে মরহুম পিতার জন্মদিনের অনুষ্ঠানে তিনজন শারীরিক প্রতিবন্ধীকে হুইল চেয়ার প্রদান কার্যক্রম প্রত্যক্ষ করেন। তিনি নতুন প্রজন্মের সাংবাদিকসহ সকলের কাছে নাজিম উদ্দিন মোস্তানকে তুলে ধরাসহ তাঁর আত্মার মাগফেরাত কামনায় এমন কর্মসূচি পালন করেছেন বলে জানান। চাঁদপুরের সিনিয়র সাংবাদিকগণ এ কার্যক্রমে উপস্থিত থেকে সাংবাদিক পিতার জন্যে সাংবাদিক কন্যার আয়োজনে বিমুগ্ধতা প্রকাশ করেন। আমরাও তেমনটি প্রকাশ করছি।