বৃহস্পতিবার, ৩১ অক্টোবর, ২০২৪  |   ৩২ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুরে রাজনৈতিক মামলায় আসামীদের আটক অভিযান অব্যাহত। যুবলীগ, কৃষকলীগ ও স্বেচ্ছাসেবক লীগের ৫ নেতা-কর্মী আটক
  •   ছেঁড়া তারে প্রাণ গেল যুবকের
  •   চাঁদপুরে গণঅধিকার পরিষদের ৩য় প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী পালন
  •   রাজধানীতে কচুয়ার কৃতী সন্তানদের সংবর্ধনা
  •   সম্প্রীতির চমৎকার নিদর্শন আমাদের বাংলাদেশ --------------জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোহসীন উদ্দিন

প্রকাশ : ০৩ আগস্ট ২০২৪, ০০:০০

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর দায় কি সকল অভিভাবক এড়াতে পারে?

অনলাইন ডেস্ক
পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর দায় কি সকল অভিভাবক এড়াতে পারে?

গ্রামের সহজ সরল সাধারণ মানুষদের একটা বিরাট অংশ তাদের শিশু সন্তানদের বেড়ে উঠতে প্রকৃতির উন্মুক্ত পরিবেশে ছেড়ে দেয়াটাকে উত্তম কাজ মনে করে। সচেতনতা ও সতর্কতার চেয়ে শিশুর পরিণতির বিষয়টি তারা সৃষ্টিকর্তার ইচ্ছার ওপর ছেড়ে দেয়। এতে যা হবার তা-ই হয়। পানিতে ডুবে মৃত্যু, সড়ক দুর্ঘটনায় মৃত্যু, শিশু ধর্ষণ, শিশু অপহরণ সহ নানা দুর্ঘটনা ঘটে। এসব দুর্ঘটনার জন্যে পিতা/মাতা কিংবা অন্য অভিভাবকদের কম-বেশি উদাসীনতা, উন্নাসিকতা অনেকাংশেই দায়ী থাকে।

যেমন ধরা যাক হাজীগঞ্জের ছয় বছর বয়সী শিশু আবির হোসেনের কথা। সে হাজীগঞ্জ উপজেলার ৫নং সদর ইউনিয়নের মাতৈন গ্রামের মিজি বাড়ির প্রবাসী ইয়াকুবের একমাত্র ছেলে। এই বয়সে সে কেবলই খেলাধুলায় মত্ত থাকার কথা থাকলেও অভিভাবকদের আগ্রহে তাকে মাদ্রাসায় ভর্তি হতে হয়। গত ১ আগস্ট সকালে সে নিকটবর্তী মাদ্রাসায় পড়তে যায় এবং বেলা ১২টায় বাড়ি ফিরে আসে। তারপর বাড়ির অন্যান্য শিশুর সাথে ফুটবল খেলায় মেতে উঠে। এ সময় তার মা নিশ্চয়ই রান্নার কাজে ব্যস্ত ছিলেন। আর খেলায় রত আবিরকে নিয়ে নির্ভার ছিলেন। বৃষ্টির দিনে খেলতে গিয়ে আবিরের শরীর কর্দমাক্ত হয়ে যায় এবং সেজন্যে খেলাশেষে গোসলের প্রয়োজনীয়তা সারতে মাকে বলার সুযোগ খোঁজেনি। একাকী চলে যায় বাড়ির পুকুর ঘাটে। বাড়ির এক মুরুব্বী বিষটি প্রত্যক্ষ করে আবিরকে পুকুরে নামতে নিষেধ করে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। কিছুক্ষণ পর তিনি গোসল করতে এসে দেখেন, আবির নিরুদ্দেশ, কিন্তু তার পায়ের জুতাগুলো পানিতে ভাসছে। তিনি এ খবর দ্রুত জানান দিলে পারিবারের সদস্যরা তাকে পুকুরের পানিতে ও বাড়ির আশেপাশে খুঁজতে থাকে। ব্যর্থতায় হাজীগঞ্জ ফায়ার স্টেশনে খবর দেয়। তারা চাঁদপুর থেকে ডুবুরি ডেকে আনে। এই ডুবুরি তল্লাশি চালিয়ে পুকুরের তলদেশ থেকে উদ্ধার করে আবিরের মরদেহ।

এভাবে প্রতিদিন সকাল থেকে বেলা ১টার মধ্যে আমাদের দেশে পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর ঘটনা বেশি ঘটে থাকে। এজন্যে বাবা/মায়ের পেশাগত ব্যস্ততায় বাসা-বাড়িতে অনুপস্থিতি এবং রান্নার কাজে মাসহ অন্য অভিভাবকদের অধিক ব্যস্ততাকে দায়ী করা হয়। এই দায়ের জন্যে নিশ্চয়ই বাবা/মা কিংবা অন্য অভিভাবককে কারো কাছে জবাবহিদিতা করতে হয় না, শাস্তির মুখোমুখি হতে হয় না। বস্তুত এ কারণেই পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যুর হার কমানো যাচ্ছে না। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলে চাঁদপুরের বর্তমান সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ সাহাদাৎ হোসেন মন্তব্য করেছেন। তিনি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের সাথে এক মতবিনিময় সভায় অকপটে বলেছেন, চাঁদপুর জেলায় ডায়রিয়ায় যতো না শিশুর মৃত্যু ঘটে, তারচে’ বেশি মৃত্যু ঘটে পানিতে ডুবে।

পানিতে ডুবে শিশু মৃত্যু রোধে বাবা/মা কিংবা অন্য অভিভাবককে সচেতন হবার কোনো বিকল্প আছে বলে জানা নেই। শিশুকে সাঁতার সহ ব্যক্তিগত নিরাপত্তার অতি প্রয়োজনীয় কৌশল শেখানোর আগে তাকে স্বাধীনভাবে একাকী চলতে দেয়াটা বিপজ্জনক। শিশুকে চোখে চোখে রাখা কিংবা নিরাপদ খেলায় মত্ত রাখাসহ তাকে গড়ে তোলা বা বেড়ে ওঠার বিষয়ে বাবা-মাকেও আগাম শিক্ষা গ্রহণের আবশ্যকতা রয়েছে। উন্নত দেশে যেটাকে প্যারেন্টিং শেখা বলা হয়। এটা আমাদের দেশে কল্পনা বহির্ভূত। কিছু বই ছাড়া প্যারেন্টিং শিক্ষা বিষয়ক কোনো উদ্যোগ বা কর্মসূচি আমাদের দেশে বিরল। এই বিরল অবস্থা আমাদের দূর করতেই হবে এবং এ বিষয়ে কাউকে না কাউকে ভাবতেই হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়