প্রকাশ : ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২১, ০০:০০
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের শেষ পৃষ্ঠায় ‘কমিটি গঠন নিয়ে দ্বন্দ্বে বিদ্যালয়ে তালা’ শিরোনামে একটি সংবাদ অধিকাংশ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। এ সংবাদে লিখা হয়েছে, মতলব উত্তর উপজেলার মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি শাহজালাল পাঠান নূতন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় ক্ষুব্ধ হয়ে বিদ্যালয়ে তালা লাগিয়ে দিয়েছেন। গত ২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার এ ঘটনা ঘটেছে এবং এ নিয়ে সারাদিন উত্তেজনা বিরাজ করেছে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক খোরশেদ আলম অভিযোগের সুরে বলেন, ম্যানেজিং কমিটির মেয়াদ শেষ হয় ১৫ আগস্ট। বিধি অনুযায়ী এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে এডহক কমিটি অনুমোদনে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লায় প্রেরণ করা হয়। এ খবর জানতে পেরে শাহজালাল পাঠান আমার বাসায় এসে আমার শার্টের কলার চেপে ধরেন, গালমন্দ করেন ও প্রাণনাশের হুমকি দেন। পরক্ষণেই বিদ্যালয়ে গিয়ে প্রধান ফটক, অফিস কক্ষসহ বিভিন্ন কক্ষে তালা ঝুলিয়ে দেন। বিদ্যালয়ে উপস্থিত সিনিয়র শিক্ষকগণসহ অন্য শিক্ষকদের বিদ্যালয় ত্যাগের নির্দেশ দেন এবং অ্যাসাইনমেন্ট জমা দিতে আসা ছাত্র-ছাত্রীদের দ্রুত বিদ্যালয় ত্যাগের জন্যে ভয়ভীতি দেখান। তারপর বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দেন। এতে শিক্ষার্থী ও তাদের অভিভাবকদের মাঝে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আবদুল কাইয়ুম খান উচ্চ বিদ্যালয়টিতে তালা লাগানোর বিষয়টি জানতে পেরেছেন বলে স্বীকার করেছেন।
নিশ্চয়ই উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস উপজেলা প্রশাসন ও থানা পলিশের সহযোগিতা নিয়ে মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয়ের অবরুদ্ধতা দূর করবেন এবং প্রয়োজনীয় আইনী ব্যবস্থাগ্রহণে সহযোগিতা করবেন-এ বিশ্বাস সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই আছে। প্রশ্ন হলো, একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে তালা লাগানোর সাহস ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি পেলেন কোত্থেকে?
আমাদের মতে, শাহজালাল পাঠান ব্যক্তিটি মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি পদটি পেয়ে খুবই সম্মানিত, সুবিধাভোগী ও ক্ষমতাধর হিসেবে নিজেকে ভাবতে পেরেছিলেন। এ পদটি হারানোর কারণে তার সে সুখ-ভাবনায় ছেদ ঘটে এবং সেজন্যে তিনি উত্তেজিত হয়ে ভালো-মন্দ বিবেচনায় না এনে অপরিণামদর্শীর ন্যায় বিদ্যালয়ে তালা লাগানোর সাহস দেখিয়েছেন। দ্বিতীয়ত, তার সাহস দেখানোর মূল ভিত্তি ছিলো, করোনার কারণে প্রায় ১৮ মাস লাগাতার বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতি। তৃতীয়ত, তার সাহসের পেছনে কাজ করতে পারে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে সংশ্লিষ্টতা এবং কোনো প্রভাব বলয়।
মমরুজকান্দি সপ্তগ্রাম উচ্চ বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির সদ্য সাবেক সভাপতি শাহজালাল পাঠান নূতন করে কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ায় কোনোরূপ অনিয়মের টের পেলে স্থানীয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস তথা উপজেলা প্রশাসনসহ জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসে লিখিত অভিযোগ দিতে পারতেন কিংবা আদালতের দ্বারস্থ হতে পারতেন। কিন্তু সেটি না করে তিনি সম্মানীয় প্রধান শিক্ষককে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করাসহ বিদ্যালয়ে তালা লাগানোর মতো যে কাজটি করেছেন, সেটি নিঃসন্দেহে গর্হিত, লজ্জাকর ও অগ্রহণযোগ্য। আমরা এ ধরনের ঘটনার পুনারাবৃত্তি যাতে অন্য কোনো বিদ্যালয়ে না ঘটে সেজন্যে প্রয়োজনীয় আগাম সতর্কতা অবলম্বনে করণীয় নির্ধারণ করার জন্যে জেলা ও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।