প্রকাশ : ০৪ জুলাই ২০২৪, ০০:০০
মতলব উত্তরের আশিক চৌধুরীকে অভিনন্দন
‘উড়ন্ত বিমান থেকে ঝাঁপ দিয়ে গিনেস রেকর্ডে চাঁদপুরের আশিক’। এটি গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত একটি সংবাদের শিরোনাম। সংবাদের গর্ভে যাওয়ার জন্যে এ শিরোনামটি যে কোনো চাঁদপুরবাসীকে উদ্দীপ্ত করে। কারণ, গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম ওঠানো চাট্টিখানি কথা নয়। সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, উড়ন্ত বিমান থেকে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে ঝাঁপ দেওয়ার প্রচেষ্টায় এবার গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখালেন চাঁদপুরের ছেলে আশিক চৌধুরী। তার পৈত্রিক নিবাস মতলব উত্তর উপজেলার বদরপুর গ্রামে। গিনেসের ‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’ শাখায় রেকর্ডটি ছিল ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানার। সে রেকর্ড ১ জুলাই নিজের করে নিলেন আশিক। গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস তাদের ওয়েবসাইটে ইতোমধ্যে আশিকের তথ্য হালনাগাদ করেছে। আশিক চৌধুরী বলেন, ‘ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের তথ্য পেয়েই অনেকটা নিশ্চিত হয়েছিলাম, দুটি গিনেস রেকর্ড ভাঙ্গতে যাচ্ছি। আজ (১ জুলাই ২০২৪) গিনেস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিশ্চিত করে ই-মেইল করেছে। রেকর্ডের আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি পেয়ে খুব ভালো লাগছে।’ আশিক আরও বলেন, ‘এই রেকর্ডের জন্যে গত সপ্তাহে আবেদন করেছিলাম। অন্য আরেকটি (লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রিফল) রেকর্ডের জন্যে আবেদন করেছি তার দুই দিন পর। হয়তো আগামী সপ্তাহে সে রেকর্ড নিয়েও গিনেসের আপডেট জেনে যাব। তবে আমার কাছে বাংলাদেশের পতাকা নিয়ে এই রেকর্ডটিই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। যা ইতিমধ্যে পেয়ে গেছি।’
‘গ্রেটেস্ট ডিসট্যান্স ফ্রিফল উইথ আ ব্যানার/ফ্ল্যাগ’ বা পতাকা হাতে দীর্ঘ পতনে ভারতের স্কাইডাইভার জিতিন বিজয়ানার রেকর্ড ছিল ১১ হাজার ২৫৬ মিটার বা ৩৬ হাজার ৯২৯ ফুট ১৩ ইঞ্চি। আশিক চৌধুরী সেটা ভেঙ্গেছেন ১১ হাজার ৩৬৮ মিটার বা ৩৭ হাজার ২৯৬ ফুট ৫৮ ইঞ্চি পর্যন্ত পতাকা হাতে রেখে। ‘লংগেস্ট আউটডোর ফ্ল্যাট ফ্রিফল’ নামে গিনেসের যে রেকর্ডের জন্যে আশিক নিজের নাম অন্তর্ভুক্তির আবেদন করেছেন, সেটাও বর্তমানে ভারতের জিতিনের দখলে। এ ক্ষেত্রে জিতিন সময় নিয়েছিলেন ২ মিনিট ৪৭ সেকেন্ড। গত বছরের ১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রে গিয়ে রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালিয়ে সফল হন জিতিন। আশিক চৌধুরী যুক্তরাষ্ট্রের মেমফিসে বিমান থেকে লাফ দিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টা চালান গত ২৫ মে। তাঁর এই রেকর্ড গড়ার উদ্যোগের নাম ‘দ্য লার্জেস্ট ফ্ল্যাগ ফ্লোন ইন স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার’। ভূপৃষ্ঠ ছাড়িয়ে ১০ থেকে ৬০ কিলোমিটারের মধ্যবর্তী জায়গাকে বলে স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার। আশিক রেকর্ড গড়তে প্রায় ৭ বর্গফুট আকারের পতাকা নিয়ে লাফ দেন। আশিকের এ প্রচেষ্টার সময় সেখানে উপস্থিত থেকে তত্ত্বাবধান করেছেন ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের এক বিচারক। আকাশে রোমাঞ্চকর কর্মকাণ্ডের রেকর্ড পর্যবেক্ষণকারী সংস্থাটি আশিকের লাফের বিস্তারিত পরিসংখ্যান পাঠায় জুনের শুরুতে। এতে দেখা যায়, ৪১ হাজার ৭৯৫ ফুট উঁচু দিয়ে উড়ে যাওয়া বিমান থেকে লাফ দেন আশিক। ৩৭ হাজার ২৯৭ ফুট উচ্চতায় নেমে আসার পর জাতীয় পতাকা মেলে ধরেন তিনি। এরপর ২ মিনিট ৫০ সেকেন্ড পতাকা ধরে রাখেন। ৪ হাজার ৪৯৮ ফুট উচ্চতায় আসার পর ভূমিতে অবতরণের জন্যে তাঁর পিঠে থাকা প্যারাস্যুট খোলেন। এতে আশিক ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের দুটি বিশ্ব রেকর্ড ভাঙ্গেন। ওয়ার্ল্ড এয়ার স্পোর্টস ফেডারেশনের পরিসংখ্যান পেয়ে আশিক চৌধুরী গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের দুটি শাখায় নাম অন্তর্ভুক্তির জন্যে আবেদন করা কথা জানিয়েছিলেন। মাঝখানে হজ পালন করতে সৌদি আরব সফর করেছেন আশিক। সেখান থেকে ফিরে সে আবেদন করেন গত সপ্তাহে।
আশিক চৌধুরী পেশায় ব্যাংকার। সিঙ্গাপুরে বহুজাতিক দ্য হংকং অ্যান্ড সাংহাই ব্যাংকিং করপোরেশনের (এইচএসবিসি) রিয়েল অ্যাসেট ফাইন্যান্স বিভাগের তিনি সহযোগী পরিচালক। কাজের ফাঁকে থাই স্কাই অ্যাডভেঞ্চার কোম্পানির অধীন স্কাইডাইভিংয়ের ওপর লম্বা প্রশিক্ষণ নেন। গত বছর অর্জন করেন স্কাইডাইভারের লাইসেন্স। এই লাইসেন্স দেখিয়ে অন্যের সহযোগিতা ছাড়া বিশ্বের যে কোনো দেশে স্কাইডাইভিং করতে পারেন আশিক। আশিক চৌধুরীর বিশ্ব রেকর্ড গড়ার প্রচেষ্টায় আর্থিক সহযোগিতা করে বেসরকারি খাতের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)। সহযোগী হিসেবে ছিল প্রথম আলো।
আমরা গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে নাম লেখানোর কৃতিত্বের জন্যে মতলব উত্তরের কৃতী সন্তান আশিক চৌধুরীকে চাঁদপুর জেলাবাসীর পক্ষে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানাচ্ছি। আশিক সিঙ্গাপুর থেকে দেশে আসলে বা তাঁকে আসার আমন্ত্রণ জানিয়ে জাতীয়ভাবে রাজধানীতে এবং স্থানীয়ভাবে মতলব উত্তরে কিংবা জেলা সদরে সংবর্ধনার আয়োজন করা দরকার। আশিক প্রবাসে কর্মরত হয়েও নিজের মাতৃভূমি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে তুলে ধরতে রেকর্ড গড়ার যে ঝুঁকি নিয়েছেন, সেটা শিক্ষণীয় ও অনুকরণীয় বিষয় বটে। এ বিষয়টি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে সরকারি-বেসরকারি প্রয়াস বাঞ্ছনীয় বলে আমরা মনে করি। এজন্যে প্রস্তুতি গ্রহণ করার কাজটি উপযুক্ত কাউকে সম্পাদন করার দায়িত্বপ্রদানের উদ্যোগ নেয়া আবশ্যক।