প্রকাশ : ২১ মে ২০২৪, ০০:০০
ইউপি চেয়ারম্যানরা সকলে এই নির্দেশ পালন করতে পারবেন তো?

সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মতো ইউপি চেয়ারম্যানদেরও নির্ধারিত সময়ে ইউনিয়ন পরিষদের কার্যালয়ে উপস্থিত থাকার নির্দেশ দিয়েছে সরকার। সহজে এবং কম সময়ে সরকারি সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এমন নির্দেশনা দিয়ে চেয়ারম্যানদের চিঠি দেওয়া হয়েছে। একাধিক ইউনিয়ন পরিষদের সচিব ও চেয়ারম্যান চিঠি পাওয়ার কথা নিশ্চিত করেন। জানা যায়, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের ইউনিয়ন পরিষদ ১ শাখা থেকে গত ১৫ মে এ সংক্রান্ত পরিপত্রে জারি করা হয়েছে।
সিনিয়র সহকারী সচিব পূরবী গোলদার স্বাক্ষরিত পরিপত্রে বলা হয়েছে, স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ইউনিয়ন পরিষদ গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর খুবই কাছাকাছি থেকে বিভিন্ন ধরনের সেবা দিয়ে আসছে। সেবা সহজীকরণ এবং জনগণের দোরগোড়ায় তা পৌঁছে দেওয়া সরকারের অন্যতম লক্ষ্য। ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা জন্মমৃত্যু নিবন্ধন, ট্রেড লাইসেন্স প্রদান ও নবায়ন, ইউনিয়ন তথ্য সেবা কেন্দ্রের মাধ্যমে অন্যান্য সেবা প্রদান, গ্রাম আদালত পরিচালনাসহ নানাবিধ সেবা দিয়ে থাকেন। জনগণ সাধারণত অফিস সময়ে (সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা) ইউনিয়ন পরিষদের সেবা গ্রহণ করে থাকেন। ইউনিয়ন পরিষদের সেবা সহজে এবং যথাসময়ে পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে চেয়ারম্যানদের সরকার নির্ধারিত অফিস সময়ে পরিষদে উপস্থিত থাকা প্রয়োজন। এর ফলে কম সময়ে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর কাঙ্ক্ষিত সেবা প্রাপ্তি সহজতর হবে এবং কর্মচারীরা তাদের দায়িত্ব যথাযথভাবে পালনে অধিকতর সক্রিয় হবেন বলে পরিপত্রে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ছাড়া কোনো কারণে বা জরুরি প্রয়োজনে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানেরা অধিক্ষেত্রের বাইরে অবস্থান করলে বা অফিসে উপস্থিত থাকতে না পারলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও)কে বা প্রয়োজনে জেলা প্রশাসককে জানানোর নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
ইউপি চেয়ারম্যানদের প্রতি এমন নির্দেশনায় মনে হচ্ছে, তারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সরকারি কর্মকর্তা/ কর্মচারীর মতোই। তবে তাদেরকে সরকার নিয়োগ করতে পারেন না। ভোটাররা ভোট দিয়ে নির্বাচিত করলে সরকার তাদেরকে শপথ পাঠ করিয়ে তাদের চাকুরির গুরু দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু এই দায়িত্ব সে সকল চেয়ারম্যানই সঠিকভাবে পালন করতে পারেন, যারা এলাকায় স্থায়ীভাবে বসবাস করেন। কথা হলো, কতোজন চেয়ারম্যান নিজ নির্বাচনী এলাকায় বসবাস করেন? এ ব্যাপারে সরকার নিজে বা কোনো এনজিও দিয়ে জরিপ করিয়েছে কী? আমাদের পর্যবেক্ষণে এই জরিপ রিপোর্টের বিবরণ কোনো কোনো ইউনিয়ন পরিষদের ক্ষেত্রে হতে পারে চরম হতাশাজনক। কারণ, কোনো কোনো প্রার্থী টাকা ও প্রতীকের জোরে চেয়ারম্যান হয়ে জেলা সদর, রাজধানী কিংবা দূরবর্তী অন্য কোনো স্থানে তার ব্যবসাস্থল/কর্মস্থল কিংবা বাসস্থানে অবস্থান করেন, আর এজন্যে সংশ্লিষ্ট সকলকে ম্যানেজ করে চলেন। এর বাইরে নিজ এলাকায় বসবাসকারী চেয়ারম্যানদের মধ্যে যারা অতিরিক্ত রাজনৈতিক জীব, দরবারবাজ ও তোষামোদকারী, তারা প্রতিদিন সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ন্যায় যথাসময়ে অফিসে যেতে পারেন না। তারা ম্যানেজ করে নিজেদের মতো করে সময় বের করে অফিস করেন। এমন বাস্তবতায় সরকারের এই নির্দেশনার দরকার ছিলো বলে সরকার সেটি করেছে। কিন্তু এই নির্দেশনা মানার বিষয়টি কি সেবা প্রত্যাশী কিংবা সচেতন কোনো ইউনিয়নবাসী পর্যবেক্ষণ করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানাবে/ অভিযোগ করবে, না মাঠ পর্যায়ে কোনো কর্মকর্তা দেখবে কিংবা কোনো অ্যাপস্ ব্যবহার করে অফিসে বসে জেলা প্রশাসক, স্থানীয় সরকার বিভাগে জেলা পর্যায়ে কর্মরত কোনো কর্মকর্তা, ইউএনও বা স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় থেকে কেউ পর্যবেক্ষণ করবে--সে ব্যাপারে চিন্তা-ভাবনা দরকার। অন্যথায় নির্দেশনার জায়গায় নির্দেশনা পড়ে থাকবে, কাজের কাজ তেমন তথা সরকারের মহৎ উদ্দেশ্যের অনুকূলে কাঙ্ক্ষিতভাবে হবে না বলে আমাদের অভিমত।