বৃহস্পতিবার, ০৫ ডিসেম্বর, ২০২৪  |   ১৯ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   কচুয়ায় ওসির অপসারণের দাবিতে সড়ক অবরোধ
  •   ভারত-মিয়ানমার থেকে ৮৯৮ কোটি টাকার চাল কিনবে সরকার
  •   মেয়াদোত্তীর্ণ বীজ ও কীটনাশক পাওয়ায় দুই প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা
  •   মশার উপদ্রবে চাঁদপুর পৌরবাসী ॥ বাড়ছে ডেঙ্গু রোগী
  •   শাহরাস্তিতে সিএনজি অটোরিকশা মালিক ও চালকদের সাথে পুলিশের মতবিনিময়

প্রকাশ : ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ০০:০০

স্বামীর প্রতি ক্ষোভ : সন্তানসহ একের পর এক স্ত্রীর আত্মহত্যা!

অনলাইন ডেস্ক
স্বামীর প্রতি ক্ষোভ : সন্তানসহ একের পর এক স্ত্রীর আত্মহত্যা!

ইদানীং চাঁদপুর জেলায় আত্মহত্যার প্রবণতা অনেক বেড়েছে। আত্মহত্যার দিক দিয়ে প্রবাসীর স্ত্রীরা অনেক বেশি এগিয়ে এবং সংখ্যার দিক দিয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলা অগ্রগামী। গত ১১ এপ্রিল ছিলো পবিত্র ঈদুল ফিতর। তার একদিন আগে ৯ এপ্রিল ফরিদগঞ্জ উপজেলায় সংঘটিত হয়েছে স্মরণকালে আত্মহত্যার সবচে' মর্মান্তিক ঘটনা। এই উপজেলার চরদুঃখিয়া পশ্চিম ইউনিয়নের পূর্ব লাড়ুয়া গ্রামে ঘটে চরম দুঃখজনক ঘটনা। দুবাই প্রবাসী স্বামী আরিফ হোসেন পরকীয়ায় লিপ্ত হওয়ার কারণে তার যুব বয়সী স্ত্রী সীমা (২৬) তার গর্ভজাত দু কন্যা সন্তান আরিফা (৪) ও আরিয়া (২) কে ফ্যানের সাথে ঝুলিয়ে হত্যার পর নিজে ফ্যানের সাথে ঝুলে আত্মহত্যা করে। আনুমানিক বেলা ১২ টায় স্বামীর ঘরে সন্তানসহ এমন মর্মান্তিক আত্মহত্যার ঘটনা ঘটায় গৃহবধূ সীমা। সীমার বাবার মামলার প্রেক্ষিতে পুলিশ আত্মহত্যায় প্ররোচনার দায়ে একমাস আগে দুবাই থেকে আগত সীমার স্বামী আরিফকে আটক করে।

ফরিদগঞ্জে সন্তানসহ আত্মহত্যার এমন ঘটনা মানুষের মন থেকে মুছে না যেতেই পক্ষকালের ব্যবধানে গত ২৪ এপ্রিল বুধবার বিকেলে হাজীগঞ্জে ঘটে আত্মহত্যার আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনায় চাঁদপুর কণ্ঠের হাজীগঞ্জ ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল লিখেছেন, আবদুর রহমান নামের ১৬ মাসের এক পুত্র সন্তানকে কোলে করে ট্রেনের নিচে ঝাঁপ দিয়ে তাহমিনা আক্তার রিমা (২৪) নামের এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেছেন। ২৪ এপ্রিল বুধবার বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে চাঁদপুর-লাকসাম রেলসড়কের হাজীগঞ্জ পৌরসভাধীন ৬নং ওয়ার্ডের মকিমাবাদ গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। তাহমিনা হাজীগঞ্জ উপজেলার হাটিলা পশ্চিম ইউনিয়নের ধড্ডা গ্রামের দেওয়ানজী বাড়ির রফিকুল ইসলামের মেয়ে ও বাকিলা ইউনিয়নের সন্না গ্রামের হাওলাদার বাড়ির কুয়েত প্রবাসী মোঃ মাসুদুজ্জামান হাওলাদারের স্ত্রী। এই দম্পতির ৪ বছর বয়সী আরো এক কন্যা সন্তান রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, স্বামীর সাথে পারিবারিক কলহের জেরে গত ২৮ মার্চ রিমা তার স্বামী মাসুদুজ্জামান হাওলাদার (৪০), তার ভাসুর মামুন হাওলাদার (৫৫) ও মাহবুব হাওলাদার (৫০)-এর বিরুদ্ধে হাজীগঞ্জ থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, রিমার বাবা তার স্বামী মাসুদুজ্জামানকে ৫ লাখ টাকা দিয়ে কুয়েত পাঠান। বিদেশ যাওয়ার পর থেকে মাসুদ রিমাকে ভরণ পোষণ ও তাদের (স্বামী) বাড়িতে না নিয়ে মোবাইল ফোনে সবসময় অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ করেন এবং হুমকি-ধমকি দিতে থাকেন। এক পর্যায়ে রিমা বাধ্য হয়ে সম্প্রতি মাসুদুজ্জামানকে তালাক দেন। তালাকের পর স্বামী মাসুদুজ্জামান দেশে এসে রিমাকে ইমোতে অশ্লীল ভাষায় গালমন্দ ও প্রাণনাশ এবং স্বামী-স্ত্রীর বিভিন্ন ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছেড়ে দেয়ার হুমকি-ধমকি দেন। এ ঘটনা ভাসুরদের জানালেও তারা কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো রিমাকে হুমকি-ধমকি দেন বলে রিমার পরিবারের সদস্যরা জানান। এক পর্যায়ে অপমান-অপদস্থ ও হুমকি-ধমকি সহ্য করতে না পেরে তার ষোল মাস বয়সী শিশু সন্তান আবদুর রহমানকে নিয়ে রিমা আত্মহত্যার পথ বেঁচে নেন। রিমা আত্মহত্যার পূর্বে তার এন্ড্রয়েড মোবাইল ফোনে ফেসবুক (সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম)-এ ‘আত্মহত্যার জন্য কেউ দায়ী নয়, তার মেয়েকে সবাই যেনো দেখে রাখে’ উল্লেখ করে একটি পোস্ট দিয়েই ট্রেনের নিচে ঝাঁপিয়ে পড়েন।

ফরিদগঞ্জের সীমা ২৬ বছর বয়সী, আর হাজীগঞ্জের রিমা ২৪ বছর বয়সী। এই দুই গৃহবধূর কম বয়সের কারণে এরা অনেক বেশি আবেগ, রাগ-অভিমানের প্রাবল্যে ভোগাটা অস্বাভাবিক কিছু নয় এবং সেজন্যে তারা তাদের মতো অনেক গৃহবধূর ন্যায় সংযমী না হয়ে আত্মনিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়াটাও অস্বাভাবিক নয়। কিন্তু স্বামীর প্রতি কতোটা ব্যাপক ক্ষোভের বশবর্তী হয়ে মেজাজের ভারসাম্য হারিয়ে মানসিক বিকারগ্রস্ততায় ভুগে সন্তানদের হত্যা করে নিজেরা আত্মহত্যা করতে পারে--সেটা ভাবতে গেলে যে কোনো সুস্থ মস্তিষ্কের মানুষ শিউরে না উঠে পারে না। ক'বছর আগে হাজীগঞ্জের দেবপুর গ্রামের এক যুবক স্ত্রী-সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়ে চাঞ্চল্য সৃষ্টির পর চলতি এপ্রিল মাসে ১৫ দিনের ব্যবধানে ফরিদগঞ্জ ও হাজীগঞ্জে যুব বয়সী দু নারী কর্তৃক সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যার ঘটনা আরো বেশি চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছে। একই সাথে উদ্বেগও তৈরি করেছে। কারণ, এদের দেখাদেখি স্বামীর প্রতি ক্ষোভ ঝাড়তে অন্য কোনো গৃহবধূ চাঁদপুর জেলার অন্যত্র কিংবা দেশের অন্য স্থানে সন্তানসহ আত্মহত্যা করে কিনা কিংবা সন্তানদের হত্যা করে আত্মহত্যার মতো মহাপাপের পথ বেছে নেয় কিনা।

কোনো ধরনের আত্মহত্যাকেই কোনো যুক্তিতে গ্রহণযোগ্যতার আওতায় আনা যায় না। যেহেতু মহান সৃষ্টিকর্তা আত্মহত্যাকে অপছন্দ করেন। তবে আত্মহত্যায় কেউ যাতে কোনোভাবে প্ররোচিত না হয় সে বিষয়ে করণীয় নিয়ে কেউ কিছু ভাবতে পারে কিনা সেটা নিয়ে কথা বলার অবকাশ আছে। এ বিষয়ে গণমাধ্যমে নানাভাবে হতে পারে আলোচনা, হতে পারে কারো গবেষণা এবং গবেষণার আলোকে হতে পারে সভা-সেমিনার। যদি কিছু না হয়, কেউ কিছু করার আদৌ কোনো উদ্যোগ না নেয়, তাহলে আত্মহত্যার প্রবণতা কেবল বাড়তেই থাকবে, কমবে বলে মনে হয় না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়