বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০৯:২৮

অনলাইন সিকিউরিটি : ডিজিটাল জীবনের অদৃশ্য রক্ষাকবচ

মিজানুর রহমান রানা
অনলাইন সিকিউরিটি : ডিজিটাল জীবনের অদৃশ্য রক্ষাকবচ

আজকের পৃথিবী প্রযুক্তিনির্ভর। আমাদের ব্যক্তিগত জীবন, পেশাগত যোগাযোগ, ব্যাংকিং, স্বাস্থ্যসেবা, এমনকি সামাজিক সম্পর্কও এখন অনলাইনের ছায়াতলে। কিন্তু এই সুবিধার আড়ালে লুকিয়ে আছে এক অদৃশ্য ঝুঁকি অনলাইন সিকিউরিটি। এটি শুধু প্রযুক্তিগত বিষয় নয়, বরং একটি সামাজিক, নৈতিক ও মনস্তাত্ত্বিক চ্যালেঞ্জও।

অনলাইন সিকিউরিটি বলতে কী বোঝায়? অনলাইন সিকিউরিটি বা সাইবার সিকিউরিটি হলো :

– ডিজিটাল তথ্য, ডিভাইস ও নেটওয়ার্ককে অননুমোদিত প্রবেশ, চুরি, ক্ষতি বা হ্যাকিং থেকে রক্ষা করার ব্যবস্থা

– ইউজার আইডেন্টিটি, পাসওয়ার্ড, ব্যাংক তথ্য, ব্যক্তিগত ছবি বা বার্তা সবই এর আওতায় পড়ে।

অনলাইন হুমকির ধরণ

১. ফিশিং (Phishing)

– ভুয়া ইমেইল বা ওয়েবসাইটের মাধ্যমে তথ্য চুরি

– “আপনার অ্যাকাউন্ট বন্ধ হয়ে যাবে”—এমন ভয় দেখিয়ে পাসওয়ার্ড চাওয়া

২. ম্যালওয়্যার (Malware)

– ভাইরাস, ট্রোজান, স্পাইওয়্যার ইত্যাদি সফটওয়্যার যা ডিভাইসে ঢুকে তথ্য চুরি করে

৩. র‌্যানসমওয়্যার

– আপনার ফাইল লক করে মুক্তিপণ দাবি করে

৪. সোশ্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং

– মানুষের আবেগ বা বিশ্বাসকে কাজে লাগিয়ে তথ্য আদায়

৫. ডেটা ব্রিচ

– বড়ো প্রতিষ্ঠানের সার্ভার হ্যাক করে লাখো ইউজারের তথ্য চুরি

বাস্তব উদাহরণ

– Yahoo (2013–2014) : ৩ বিলিয়ন অ্যাকাউন্ট হ্যাক

– Bangladesh Bank Heist (2016) : সাইবার হামলায় $৮১ মিলিয়ন চুরি

– Facebook-Cambridge Analytica (2018) : ব্যক্তিগত তথ্য রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে ব্যবহার।

কেন আমরা অনলাইন নিরাপত্তা নিয়ে উদাসীন?

– “আমার তথ্য দিয়ে কী হবে?”—এই ভুল ধারণা

– প্রযুক্তি সম্পর্কে অজ্ঞতা

– সহজ পাসওয়ার্ড ব্যবহার

– পাবলিক Wi-Fi-তে লগইন করা

– নিয়মিত সফটওয়্যার আপডেট না করা।

কীভাবে নিজেকে সুরক্ষিত রাখবেন?

১. দৃঢ় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন

– অক্ষর, সংখ্যা, চিহ্ন মিলিয়ে অন্তত ১২ অক্ষরের পাসওয়ার্ড

– একই পাসওয়ার্ড বারবার ব্যবহার করবেন না

২. দুই স্তরের নিরাপত্তা (Two-Factor Authentication)

– OTP বা অ্যাপ-ভিত্তিক কোড ব্যবহার করুন

৩. সতর্ক থাকুন ফিশিং-এর বিরুদ্ধে

– সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করবেন না

– ইমেইলের প্রেরক যাচাই করুন

৪. VPN ব্যবহার করুন

– পাবলিক Wi-Fi ব্যবহার করলে VPN দিয়ে সংযোগ নিরাপদ করুন

৫. সফটওয়্যার ও অ্যান্টিভাইরাস আপডেট রাখুন

– পুরনো ভার্সন হ্যাকারদের জন্য দুর্বলতা তৈরি করে

৬. সোশ্যাল মিডিয়ায় অতিরিক্ত তথ্য শেয়ার করবেন না

– জন্মতারিখ, ঠিকানা, ফোন নম্বর এ সবই হ্যাকিংয়ের সূত্র হতে পারে

শিশু ও কিশোরদের অনলাইন নিরাপত্তা

– Parental Control ব্যবহার করুন

– Screen Time সীমিত করুন

– সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট মনিটর করুন

– অনলাইন বুলিং** সম্পর্কে সচেতন করুন

কর্পোরেট ও প্রাতিষ্ঠানিক নিরাপত্তা

– সাইবার সিকিউরিটি ট্রেনিং বাধ্যতামূলক করা উচিত

– ডেটা এনক্রিপশন, ফায়ারওয়াল, লগ মনিটরিং—প্রযুক্তিগত সুরক্ষা

– Incident Response Team গঠন করা জরুরি

মোবাইল নিরাপত্তা

– অ্যাপ ডাউনলোডের আগে রিভিউ পড়ুন

– অ্যাপ পারমিশন যাচাই করুন

– অটো-লক ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট/ফেস আইডি ব্যবহার করুন

ভবিষ্যতের চ্যালেঞ্জ

– AI ও Machine Learning দিয়ে হ্যাকিং আরও জটিল হচ্ছে

– Deepfake ও Voice Spoofing—নতুন হুমকি

– Quantum Computing—বর্তমান এনক্রিপশন ভেঙে ফেলতে পারে

অনলাইন নিরাপত্তা মানে শুধু প্রযুক্তি নয়,

এটি একটি চেতনার বিষয়। আমাদের আচরণ, সচেতনতা এবং ডিজিটাল নৈতিকতা—সব মিলিয়ে এটি গড়ে উঠে। যেমন :

– ডিজিটাল হাইজিন : নিয়মিত পাসওয়ার্ড পরিবর্তন, লগআউট করা

– ডিজিটাল নৈতিকতা : অন্যের তথ্য সম্মান করা, অনুমতি ছাড়া কিছু শেয়ার না করা।

অনলাইন নিরাপত্তা এখন আর বিলাসিতা নয়, এটি জীবন রক্ষার অনুষঙ্গ। প্রযুক্তি যত এগোবে, হুমকিও তত বাড়বে। তাই প্রয়োজন :

– সচেতনতা

– প্রশিক্ষণ

– প্রযুক্তিগত প্রস্তুতি

– এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ—নৈতিক ডিজিটাল আচরণ।

আমরা যদি সবাই মিলে এই সুরক্ষা বলয় গড়ে তুলতে পারি, তবে ডিজিটাল ভবিষ্যৎ হবে নিরাপদ, মানবিক এবং টেকসই।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়