প্রকাশ : ২৭ জুন ২০২১, ০০:০০
যে সকল অভিভাবক দূরদর্শী কিংবা পরিণামদর্শী তারা প্রবাসীদের নিকট নিজের কন্যা সন্তান বা পোষ্যকে পাত্রস্থ করতে ইতস্তত করেন। আবার কিছু অভিভাবক আছেন, যারা প্রবাসী পাত্রের আর্থিক সচ্ছলতা দেখে নির্দ্বিধায় কন্যা বা পোষ্যকে পাত্রস্থ করে তৃপ্তিবোধ করেন। এমন অভিভাবক প্রলুব্ধ হয়ে বাল্য বিয়েতেও ইতস্তত করেন না। কিছু অভিভাবক এমন আছেন, যারা বিয়ের পর প্রবাসী পাত্র যাতে তার বিবাহিত স্ত্রীকে সাথে নিয়ে যায়, তার আগাম শর্ত আরোপ করেন। কারণ, আমাদের সমাজে প্রবাসী পাত্র বিয়ের পর তার স্ত্রীকে নিজ বাড়িতে বা শ্বশুর বাড়িতে রেখে দেশত্যাগ করেন। বিশ্বাস ও আবেগে মাসের পর মাস স্ত্রীকে পাঠাতে থাকেন লাখ লাখ টাকা। এমন টাকা পেয়ে প্রবাসীদের স্ত্রীদের মধ্যে যারা ধর্মীয় শিক্ষা, পারিবারিক শিক্ষা ও নৈতিক শিক্ষায় বলীয়ান, তারা সে টাকাকে শ্বশুর-শাশুড়ি কিংবা নিজের অভিভাবককে জিজ্ঞেস করে ভালো কাজে তথা সম্পদ জোগাড়ে, নিজ সন্তানদের সম্পদ বানাতে, প্রকৃত সুখ-শান্তি অর্জনের পেছনে ব্যয় করেন। আর যারা কোনোরূপ শিক্ষা বর্জিত হয়ে বড় হয়েছে কিংবা অর্জিত শিক্ষা কাজে লাগায়নি, তারা হয়ে যায় বল্গাহীন। তারা প্রবাসী স্বামীর টাকায় ভোগ-বিলাসিতায় মত্ত হয় বেপরোয়াভাবে। এরা প্রায়শই বাসা/বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে বিভিন্ন মার্কেট/শপিং মলের উদ্দেশ্যে। সেখানে গিয়ে তারা প্রয়োজনীয়-অপ্রয়োজনীয় কেনাকাটায় কিছু দোকানির কুনজরে পড়ে কিংবা টার্গেটে পরিণত হয়। আবার লাগামহীন উচ্ছৃঙ্খল চলাফেরায় এরা বখাটে প্রকৃতির লোকজন দ্বারা উত্ত্যক্ত হয়, কেউ কেউ পরকীয়ায় জড়ায়, অবৈধ সম্পর্ক গড়ে তোলে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় হয়ে প্রেম-প্রতারণার ফাঁদে পড়ে ইজ্জত হারায়, অর্থ হারায় এবং আরো কতো কী।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় বক্স আইটেমে ‘প্রতারণা ও ধর্ষণের অভিযোগে ব্যবসায়ী আটক’ শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদে একজন প্রবাসীর স্ত্রীর মামলার বিবরণ ও তার বক্তব্য উঠে এসেছে। এই সংবাদ পড়ে যে কোনো পাঠক সহজেই অনুমান করতে পেরেছেন যে, একজন প্রবাসীর স্ত্রী কতোটা বিপথগামী হয়ে চাঁদপুর শহরের শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সড়কস্থ হাকিম প্লাজার পালকি ফ্যাশনের স্বত্বাধিকারী মোবারক হোসেন পাটোয়ারীর প্রতারণার শিকার হয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকা খুইয়েছেন এবং অসংখ্যবার ধর্ষিত হয়েছেন। তার এক জায়ের মাধ্যমে পরিচিত হয়ে তিনি অবিবাহিত ব্যবসায়ী মোবারকের খপ্পড়ে পড়েন (যেমনটি নাকি আরো অনেক নারী, বিশেষ করে প্রবাসীর স্ত্রীরা পড়েছেন) এবং লাগাতার তিন বছর ধরে প্রলুব্ধ, প্রতারিত ও ধর্ষিত হয়েছেন। অবশেষে তিনি চাঁদপুর মডেল থানায় মামলা করেছেন এবং সে মামলার ভিত্তিতে তদন্তের দায়িত্বপ্রাপ্ত সিআইডি মোবারককে শাহরাস্তিতে তার এক বোনের বাড়িতে পালিয়ে থাকাবস্থায় গ্রেফতার করে। সিআইডি তাকে আদালতে সোপর্দ করে রিমান্ড আবেদন করেছে। আজ রোববার রিমান্ড মঞ্জুর হলে হয়তো মোবারকের কাছ থেকে মামলার বাদী শুধু নয়, তার মতো আরো কিছু নারী প্রতারিত বা ধর্ষিত হবার ঘটনা ফাঁস হয়ে যাবে।
আমরা এই মামলাটির মাধ্যমে একজন প্রবাসীর স্ত্রীর বিপথগামিতার নমুনা জানতে পারলাম। এ নমুনা থকে প্রবাসীদের শিক্ষা গ্রহণ ও সতর্ক হবার অনেক কিছুই রয়েছে। প্রবাসীদের কষ্টার্জিত অর্থ স্ত্রীর বিপথগামিতায় কোথায় চলে যায়, স্ত্রীর ইজ্জত কীভাবে লুণ্ঠিত হয় তার আরো অনেক ঘটনা এই সমাজে প্রকাশিত-অপ্রকাশিত অবস্থায় আছে। শ্বশুর/শ্বাশুড়ি, ভাই-বোনসহ অন্য আত্মীয়স্বজনের লোকের কারণেও প্রবাসীরা ক্ষতিগ্রস্ত হন। সত্যিই রেমিট্যান্স যোদ্ধা নামে পরিচিত অনেক প্রবাসীর নানা ভাগ্য বিড়ম্বনা/দুর্দশা-দুর্গতি অবর্ণনীয়, হৃদয় বিদারক। এ থেকে উত্তরণের পথ সমাজবিজ্ঞানী বা তীক্ষ্ণ পর্যবেক্ষক কাউকে না কাউকে বাতলে দিতে হবে। অন্যথায় পরিণতি কোন্ পর্যায়ে গিয়ে পৌঁছে সেটা অবশ্যই উদ্বেগের বিষয়।