প্রকাশ : ২৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান

বছরে যে পাঁচটি মহিমান্বিত রাতে আল্লাহপাক তাঁর বান্দাদের প্রতি বিশেষ রহমতের ফল্গুধারা প্রবাহিত করেন, তার মধ্যে শা’বান মাসের ১৪ তারিখ দিবাগত রাত তথা ১৫ শা’বানের রাত অন্যতম। যা আরবি ভাষায় লাইলাতুল বারাআত, কোরআনের ভাষায় লাইলাতুম মোবারাকা, আর ফার্সি এবং প্রচলিত ভাষায় বলা হয় শবে বরাত। এই মহিমান্বিত রাতটি হলো আজকের রাত। আরবি বারটি মাসের মধ্যে রজব, শা’বান ও রমজান এই তিনটি মাস পর পর রয়েছে। এই ধারাবাহিকতার মাঝেও একটা তাৎপর্য রয়েছে। নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, রজব আল্লাহর মাস, শা’বান আমার মাস আর রমজান আমার উম্মতের মাস। এই হাদিসে মোবারাকার মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি শা’বান মাসের গুরুত্ব কতটুকু। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে মাসটিকে নিজের মাস বলে সম্বোধন করেছেন সে মাসের মধ্য রজনী আজকের রাতটি। এখানে উল্লেখ করার মতো আরেকটি বিষয় হলো : যে কোনো দিন, সপ্তাহ, মাস শ্রেষ্ঠত্ব বা মর্যাদাবান হওয়ার পেছনে কোনো না কোনো উপলক্ষ নিশ্চয়ই রয়েছে। যেমন রমজান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব লাইলাতুল কদরের কারণে, রজব মাসের শ্রেষ্ঠত্ব লাইলাতুল মেরাজের কারণে, মহররম মাসের শ্রেষ্ঠত্ব আশুরার কারণে, রবিউল আউয়াল মাসের শ্রেষ্ঠত্ব ঈদে মিলাদুন্নবীর কারণে। তেমনি শা’বান মাসের শ্রেষ্ঠত্ব শবে বরাতের কারণে। হাদিসে মোবারাকার ভাষায় এই রাতটি হলো “লাইলাতুন নিসফি মিন শা’বান”।
শবে বরাত ভাগ্য রজনী হিসেবে সুবিদিত। এ পুণ্যময় রাতে পৃথিবীজুড়ে বর্ষিত হতে থাকে আল্লাহপাকের অপরিসীম ও অবারিত করুণাধারা। প্রত্যেক বান্দার এক বছরের হিসাব-নিকাশ পেশ করা হয় এই মহান রাতে। জন্মণ্ডমৃত্যু, রিজিক, ধন-সম্পদ, উত্থান-পতন, উন্নতি-অবনতি ইত্যাদি নির্ধারণ হয়ে থাকে এ রাতে। আল্লাহর কাছে গ্রহণযোগ্য কিংবা প্রত্যাখ্যাত হওয়ার রাত। কাজেই এ রাত ফয়সালার রাতও। এতে যেমন পুরস্কৃত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে, তেমনি শাস্তির উপযোগী হওয়ার আশঙ্কাও বিদ্যমান। তাই আল্লাহপাকের কৃপা লাভের জন্যে এ পবিত্র রাতের প্রতিটি মুহূর্ত সদ্ব্যবহার করতে হবে। উম্মতে মোহাম্মদির জন্যে শবে বরাত এক মহা নেয়ামত। স্বল্প আয়ূসম্পন্ন উম্মতের ইবাদত বন্দেগি বহুগুণ বৃদ্ধি করার উদ্দেশ্যে এ রাতকে আমাদের জন্যে নেয়ামতস্বরূপ দেয়া হয়েছে। এ পুণ্যময় রাতে প্রবাহিত হয় আল্লাহর অবারিত করুণাধারা। বান্দা তার কৃতকর্মের জন্যে লজ্জিত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলে আল্লাহপাক মার্জনা করে দেন। তবে কতেক শ্রেণির লোক এ মহান রাতেও বঞ্চিত থাকে আল্লাহর কৃপাদৃষ্টি থেকে। যেমন : জাদুকর, ব্যভিচারী, মদ্যপায়ী, পিতা-মাতাকে কষ্টদানকারী, গিবতকারী ও রক্তের সম্পর্ক ছিন্নকারী। আমাদের সমাজে এসব লোকের সংখ্যা কম নয়। সে কারণে সমাজে অস্থিরতা, নৈতিকতার সঙ্কট, মূল্যবোধের অবক্ষয় হরহামেশাই আমরা দেখতে পাচ্ছি। ব্যক্তি চরিত্রের সংশোধন ছাড়া সমাজের উন্নয়ন, দেশের কল্যাণ সম্ভব নয়। এ মহান রাতে পাপী বান্দাদেরও সংশোধনের সুযোগ রয়েছে। তাই শবে বরাত রাতে যদি উল্লেখিত গুনাহগার বান্দারা কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করে যে, ভবিষ্যতে তারা উল্লেখিত পাপ কাজে লিপ্ত হবে না, তাহলে রাহমানুর রাহীম তাদেরও ক্ষমা করে দিতে পারেন।
আজকের রাতটি আমরা ইবাদত-বন্দেগি, জিকির, মিলাদ, দুরূদ পাঠ, কোরআন তেলাওয়াত, কবর জিয়ারত, তাওবা-ইস্তেগফার ইত্যাদি নেক আমলের মধ্য দিয়ে কাটিয়ে দিবো। রাব্বুল আলামিন যেনো তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামার উছিলায় আমাদের ক্ষমাশীল বান্দাদের অন্তর্ভুক্ত করে নেন। শবে বরাতের সকল নেয়ামত যেনো আমাদের ভাগ্যে নসিব হয় রাব্বুল আলামিনের কাছে এই প্রার্থনা থাকবে।