প্রকাশ : ২৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
আইনী পদক্ষেপসহ নারী নির্যাতন রোধে একের পর এক নানা পদক্ষেপে পরিস্থিতি কম-বেশি নিয়ন্ত্রণে থাকলেও নীরবে-নিভৃতে, এমনকি প্রকাশ্যে পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা বেড়ে চলছে। বাংলাদেশ মেন’স রাইটস্ ফাউন্ডেশন নামের একটি বেসরকারি সংগঠন গবেষণা চালিয়ে জানিয়েছে, বাংলাদেশে বিবাহিত পুরুষদের ৮০ শতাংশ মানসিক নির্যাতনের শিকার। অনেকেই এসব বিষয় প্রকাশ করতে চান না সামাজিক লজ্জার ভয়ে। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত উক্ত সংগঠনটি ১৯ নভেম্বর বাংলাদেশে পুরুষ দিবস পালন করে। সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ারম্যান শেখ খাইরুল আলম জানান, ‘নির্যাতিত পুরুষ’দের পরামর্শ ও আইনী লড়াইয়ে সহযোগিতা দিতে আমাদের এই সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটেছে। আমাদের কাছে প্রতিদিন যে ফোন আসছে তাতে আমরা দেখেছি, নীরবে চোখের জল ফেলছেন অনেক পুরুষ। লজ্জায় তারা নির্যাতনের কথা বলতে পারছেন না। কোনো নারী নির্যাতিত হলে তো তিনি বিচার চাইতে পারেন। অনেক সংগঠন তার পাশে দাঁড়ায়। তিনি বলেন, আমি নিজেই নির্যাতনের শিকার হয়ে অনেক মানবাধিকার সংগঠনের কাছে গেছি। তারা কেউই নির্যাতিত পুরুষের পাশে দাঁড়াতে রাজি হয়নি। অনেকটা বাধ্য হয়েই আমরা এই সংগঠন করেছি। এখন আমরা নির্যাতিত পুরুষকে আইনী লড়াইয়ে সহযোগিতা করছি ও প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদান করছি। জাতীয় সংসদে পুরুষ নির্যাতনবিরোধী আইন করার জন্যে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছি। এই আইনের যৌক্তিকতা তুলে ধরে প্রচারণাও চালাচ্ছি।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় পুরুষ নির্যাতন সংক্রান্ত দুটি সংবাদ ছাপা হয়েছে। একটির শিরোনাম হয়েছে ‘স্বামীর যৌতুক মামলায় স্ত্রী জেল হাজতে’। এ ঘটনাটি মতলব উত্তরের। আরেকটির শিরোনাম হয়েছে ‘হাইমচরে যুবকের রহস্যজনক মৃত্যু ॥ স্ত্রী আটক ॥ পিতার দাবি পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে’। মতলব উত্তর উপজেলার গাজীপুর এলাকার বাসিন্দা নূর মোহাম্মদের দায়েরকৃত তিন লাখ টাকা যৌতুকের দাবি সংক্রান্ত মামলায় স্ত্রী মনি আক্তার মিতু (২১) কে সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ কফিল উদ্দিন জেল হাজতে প্রেরণের আদেশ দিয়েছেন। হাইমচরের গন্ডামারা গ্রামের তোফায়েল আহমদের ছেলে আরমান (২৬) বুধবার কাজ করে শ^শুর বাড়ি ফেরার পর তার স্ত্রী সাথী বেগম (২৫)-এর সাথে তার ঝগড়া হয়। আরমানের পিতার দাবি, এই ঝগড়ার জেরে ছেলের বউ ও তার শাশুড়ির লোকজন আমার ছেলেকে হত্যা করে আমাকে খবর দেয়, আরমান ফাঁসি দিয়েছে। অথচ তার মাথা থেকে রক্ত ঝরছিলো।
মতলব উত্তর ও হাইমচরে সংঘটিত দুটি ঘটনাই যে সুস্পষ্ট পুরুষ নির্যাতনের ঘটনা-সেটি বিচারক ও পুলিশের ভূমিকায় প্রমাণিত হয়। সেজন্যে এমন ঘটনাকে উদ্বেগজনক বলা ছাড়া উপায় নেই। এ ব্যাপারে শেষ পর্যন্ত আইনী আনুকূল্য পাবে বাদীরা-এমন আস্থা পোষণ করতে আমাদের দ্বিধা নেই। বাংলাদেশ মেন’স রাইটস ফাউন্ডেশন এ দুটি ঘটনা নিয়ে ছায়া তদন্ত করতে পারে এবং বাদীদেরকে পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করতে পারে বলে মনে করি।