প্রকাশ : ২৬ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০
দুশিক্ষকের কাণ্ডে যে ম্লানিমা--

যে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষকরা তাদের শিক্ষার্থীদের নিকট কম-বেশি শ্রদ্ধার পাত্র। মানুষ হিসেবে তাদের ভুল-ত্রুটিকে শিক্ষার্থীরা একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় মেনে নেয়, কিন্তু সীমাহীন মাত্রায় মেনে নেয় না। যেমনটি আমরা দেখলাম হাজীগঞ্জে। অধ্যক্ষের সামনে দুশিক্ষকের মারামারিতে শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ক্লাস বর্জন করেছে। যে বিষয়ে গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে হাজীগঞ্জের ব্যুরো ইনচার্জ কামরুজ্জামান টুটুল পরিবেশন করেছেন একটি সংবাদ।
সংবাদটিতে লিখা হয়েছে, ক্লাসে যাওয়া নিয়ে অধ্যক্ষের সামনে দুই শিক্ষকের মাঝে মারামারির ঘটনা ঘটেছে। এ ঘটনায় শিক্ষকদ্বয়ের বিচারের দাবিতে শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করেছে। ২৪ জানুয়ারি বুধবার ঘটনাটি ঘটে হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর কাশেমিয়া ফাজিল মাদ্রাসায়। শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সূত্রে জানা যায়, ৭ নম্বর বড়কুল ইউনিয়নের রামচন্দ্রপুর কাসেমিয়া ছিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় ২৩ জানুয়ারি মঙ্গলবার দুপুরে মাদ্রাসার প্রভাষক দিদার হোসেনকে ক্লাস নিতে তাগিদ দেন অধ্যক্ষ। এ নিয়ে অধ্যক্ষের কক্ষে সাথে কিছুটা মনোমালিন্যে জড়ান দিদার হোসেন। এ সময় ইংরেজি শিক্ষক হাছান অধ্যক্ষের রুমে ঢুকে দিদার হোসেনের সাথে তর্কে জড়িয়ে পড়েন। তখন দুই শিক্ষকের মধ্যে হাতাহাতি শুরু হয়। এর মধ্যে শিক্ষকদ্বয়ের হাতাহাতি অধ্যক্ষের রুম ছাড়িয়ে মাদ্রাসার বাইরে বারান্দায় এসে গড়ায়। তখন এই হাতাহাতি বন্ধ করতে অন্য শিক্ষকরা ও শিক্ষার্থীরা এগিয়ে আসেন। হাতাহাতির ঘটনায় শিক্ষক দিদার হোসেন আহত হন। এ ঘটনার পরের দিন ২৪ জানুয়ারি বুধবার সকালে দুই শিক্ষকের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের দাবিতে মাদ্রাসার প্রধান ফটকে তালা ঝুলিয়ে দিয়ে ক্লাস বর্জন করে মাদ্রাসার শিক্ষার্থীরা। পরে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদ সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দিলে ক্লাসে ফিরে যায় শিক্ষার্থীরা। মূল ঘটনা কী ঘটেছে জানতে যোগাযোগ করা হলে মাদ্রাসা অধ্যক্ষ মুহাম্মদ শামছুদ্দিন জানান, আমরা দুই শিক্ষককে শোকজ করেছি। এ বিষয়ে মাদ্রাসা পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি এমএ হাসেম হাসু বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে শোকজ করা হয়েছে। শিক্ষকদের এমন অশালীন আচরণের সুষ্ঠু তদন্ত ও বিচারের আশ্বাস দেয়ার পর শিক্ষার্থীরা দুপুরের মধ্যে ক্লাসে ফিরে।
আমরা হাজীগঞ্জের রামচন্দ্রপুর কাসেমিয়া ছিদ্দিকিয়া ফাজিল (ডিগ্রি) মাদ্রাসায় দুশিক্ষকের হাতাহাতির কাণ্ডে সৃষ্ট পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা পর্ষদের ভূমিকাকে যথার্থ বলছি দ্বিধাহীনভাবে। কারণ, আমাদের দেশে অধিকাংশ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ব্যবস্থাপনা কমিটি/পরিচালনা পরিষদের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করার মতো সিদ্ধান্ত পাওয়া যায় না। তারা নিরপেক্ষ না থেকে কারো না পক্ষে থাকার প্রবণতায় ভোগে। প্রতিষ্ঠান প্রধান ও শিক্ষকদের মধ্যে গ্রুপিং জিইয়ে রেখে ফায়দা লোটার ধান্ধা দেখা যায় প্রায়শ। কিন্তু হাজীগঞ্জের মাদ্রাসাটিতে সেটা দেখা যায় নি, যেটা নিঃসন্দেহে ইতিবাচক। পরিচালনা পর্ষদের এমন ইতিবাচক ভূমিকায় দুশিক্ষকের হাতাহাতি কাণ্ডে সৃষ্ট ম্লানিমা মুছে যাবে বলে আমরা আশা রাখি। তারপরও কথা কিন্তু থেকে যায় এবং সেটি এই মাদ্রাসার অধ্যক্ষের ব্যবস্থাপনাগত দক্ষতা নিয়ে। তিনি কেনো, প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানই তাঁর অধীনস্থ শিক্ষকদের মধ্যে বিরাজমান দ্বন্দ্ব সম্পর্কে কম-বেশি অবহিত থাকেন। তবে এঁদের অধিকাংশজনই সেটা ম্যানেজ করে দমিয়ে রাখেন, নিরসন করেন কিংবা শিক্ষকদের পারস্পরিক সম্পর্ককে সৌহার্দপূর্ণ করার নানা কৌশল ও পদ্ধতি অবলম্বন করেন। যার ফলে শিক্ষকদের কম-বেশি দ্বন্দ্ব বড়োজোর কথা কাটাকাটি কিংবা ভদ্রোচিত প্রতিবাদ বা আপত্তির মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে, তবে সেটা সচরাচর হাতাহাতি-মারামারিতে প্রকাশ্য রূপ নেয় না, যেটা হাজীগঞ্জের মাদ্রাসাটিতে দেখা গেলো। ফলে দুজন শিক্ষক আচরণগত ম্লানিমায় নিজেদের শ্লেষের পাত্র যেমন বানিয়েছে, তেমনি শিক্ষক সমাজকে ঠেলে দিয়েছে সেদিকে। এটা দুর্ভাগ্যজনক। আমরা হাজীগঞ্জের মাদ্রাসার এই ঘটনা থেকে অন্য সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানদের তাদের অধীনস্থ শিক্ষকদের মধ্যকার দ্বন্দ্ব বিষয়ে নজরদারি ও প্রয়োজনীয় সতর্কতামূলক ব্যবস্থাগ্রহণের তাগিদে ভোগার জোর অনুরোধ জানাচ্ছি।