রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৭ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

সালিসদের এমন আচরণ পাশবিকতাতুল্য

অনলাইন ডেস্ক
সালিসদের এমন আচরণ পাশবিকতাতুল্য

‘স্ত্রীকে তালাক অতঃপর সন্তানকে বিক্রির অভিযোগ পিতার বিরুদ্ধে ॥ মায়ের সন্তান ফিরে পাওয়ার আকুতি’ এমন সংবাদণ্ডশিরোনাম দেখেই চিত্তবান ও সংবেদনশীল মানুষমাত্রই আঁতকে উঠেন, বুকের গভীরে ব্যথা অনুভব করেন--সংবাদটির ভেতরে প্রবেশ করার আগেই। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের প্রথম পৃষ্ঠায় ছাপা হয়েছে এমন সংবাদ। সংবাদটির ভেতরে প্রবেশ করলে তথা পুরোটি পড়লে পাষ- ব্যক্তিও থমকে দাঁড়াবেন। সেজন্যে জেনে নেয়া যাক সংবাদটির বিবরণ।

সংবাদটিতে ফরিদগঞ্জের অন্যতম জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক, চাঁদপুর কণ্ঠের ব্যুরো ইনচার্জ প্রবীর চক্রবর্তী লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে গ্রাম্য সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে স্ত্রী নয়ন বেগমকে তালাক দিয়ে মাত্র ৯ মাসের শিশু সন্তান ইসরাত জাহান ইভাকে অন্যত্র বিক্রি করার অভিযোগ উঠেছে পিতা ইকবাল মুন্সীর বিরুদ্ধে। এদিকে সন্তানকে ফিরে পেতে থানায় লিখিত অভিযোগ করলেও দুই সপ্তাহেও সুরাহা পাননি শিশুটির গর্ভধারিণী মা। যদিও পিতা ইকবাল হোসেন মুন্সী তা অস্বীকার করে লালন-পালনের জন্যে খালাতো বোনের কাছে সন্তানকে দেয়ার দাবি করেছেন। অন্যদিকে থানা পুলিশ সন্তান ফিরে পাওয়ার আবেদন পাওয়ার কথা জানালেও বিক্রির বিষয়ে তারা অবগত নয় বলে জানায়। থানায় লিখিত অভিযোগ সূত্রে জানা যায়, প্রায় দুই বছর পূর্বে ফরিদগঞ্জ উপজেলার বাসারা গ্রামের আব্বাস মুন্সীর ছেলে ইকবাল মুন্সীর সাথে একই উপজেলার পূর্ব দায়চারা গ্রামের মৃত শাহআলম মোল্লার মেয়ে নয়ন বেগমের ইসলামী শরীয়াহ মোতাবেক পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে স্বামী ইকবাল মুন্সী তার স্ত্রীকে যৌতুকের দাবিতে বিভিন্ন অজুহাতে একাধিকবার মারধর করে। এরই মধ্যে ইসরাত জাহান ইভা নামে এক কন্যা সন্তানের জন্ম হয়।

পারিবারিক কলহের এক পর্যায়ে বিগত বছরের ১৬ ডিসেম্বর গ্রাম্য সালিসি বৈঠক হয়। বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নয়ন বেগমের কাছ থেকে তালাক প্রদানপূর্বক খালি স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর রাখার অভিযোগ রয়েছে। পরে জোরপূর্বক ৯ মাসের শিশু ইসরাত জাহান ইভাকে মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নেয় ইকবাল মুন্সীর পরিবারের লোকজন। নয়ন বেগম জানান, আমার স্বামী আমাকে যৌতুকের জন্যে বিভিন্ন সময় মারধর করতো। সুখের আশায় সালিসদের কাছে বিচার দিলেও উল্টো আমাকে তালাক দিতে বাধ্য করে। এমনকি তারা আমার সন্তানকেও কোল থেকে ছিনিয়ে নেয়। পরে আমি জেনেছি, আমার সন্তানকে শাহরাস্তি উপজেলার ওয়ারুক গ্রামে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি করে দেয় আমার স্বামী ইকবাল মুন্সী। আমি আমার সন্তানকে ফিরে পেতে চাই। নয়ন বেগমের স্বামী ইকবাল মুন্সী মুঠোফোনে জানান, নয়ন বেগমের সাথে তার সালিসি বৈঠকের মাধ্যমে তালাক হয়ে গেছে। আমাদের ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য সুমন, গ্রাম্য সালিস আশু, জামাল, আবু তাহের, ফারুক হোসেন ও বাবুল নামে ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে তালাকের পরে শিশু সন্তানকে আমার জিম্মায় দেয়া হয়। সন্তান বিক্রির যে অভিযোগ থানায় করেছে, সেটি সঠিক নয়। আমি আমার এক খালাত বোনের কাছে সন্তানকে লালন-পালনের জন্যে দিয়েছি। এ বিষয়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের ইউপি সদস্য সুমন সোমবার দুপুরে জানান, শুনেছি শিশুটিকে পালক দেয়া হয়েছে, বিক্রির বিষয় আমি জানি না। সুবিদপুর পূর্ব ইউনিয়নের চেয়ারম্যান বেলায়েত হোসেন সোমবার দুপুরে জানান, প্রথম সালিসে আমি থাকলেও পরের বৈঠকে ছিলাম না। শিশুটির মা শিশুটিকে নিবে না বলায় তার বাবার কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে বলে জেনেছি। পরবর্তীতে কী হয়েছে সে বিষয়ে আমি জানি না।

অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত করে ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মোঃ মাহফুজ সোমবার দুপুরে জানান, শিশুটির পিতাকে সংবাদ দিয়েছি আসার জন্যে। সে আসলে শিশুটিকে উদ্ধার করা হবে। অন্যদিকে থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ সাইদুল ইসলাম শিশুটিকে বিক্রির বিষয়ে অবগত নন বলে জানিয়েছেন।

চাঁদপুর কণ্ঠে এই সংবাদটি প্রকাশের পর হয়তো পুলিশ শিশুটিকে উদ্ধার করে মায়ের কোলে ফিরিয়ে দেবে। কিন্তু যে সকল গ্রাম্য সালিস বেআইনিভাবে মায়ের নাড়িছেঁড়া ধন শিশুটিকে মায়ের কোল থেকে নির্মমভাবে ছিনিয়ে নেয়ার সিদ্ধান্ত বা রায় দিলো তাদের বিরুদ্ধে কি কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে না? আইন বলছে, স্বামীর সাথে স্ত্রীর তালাক বা সম্পর্কচ্ছেদ হয়ে গেলেও সন্তানদের মধ্যে ছেলে সন্তান অন্তত সাত বছর এবং মেয়ে সন্তান ১৪ বছর বা তদূর্ধ্ব বয়স পর্যন্ত মায়ের কাছে থাকবে এবং তারপর বাবার জিম্মায় যাবে। তালাকের পর মায়ের অন্যত্র বিয়ে হয়ে গেলে তার প্রমাণসাপেক্ষে বাবা আদালতের দ্বারস্থ হয়ে সন্তানদের উদ্ধার করতে পারবে কিংবা সমঝোতামূলক কিছু করতে পারবে। কিন্তু ফরিদগঞ্জের বাসারা গ্রামে গ্রাম্য সালিসরা যেভাবে মায়ের কোল থেকে নয় মাস বয়সী সন্তানকে ছিনিয়ে নিয়ে অন্যত্র পালক (দত্তক) দিতে বা বিক্রি করতে রায় দিলো, সেটা কোন্ আইনের আওতায় পড়েছে? কাজেই এই বেআইনি কাজে সংশ্লিষ্ট সকলকে শায়েস্তা করা ব্যতীত যদি কেবল শিশুসন্তানটি উদ্ধারের ব্যবস্থা নেয়া হয়, তাহলে সেটা যথার্থ হবে বলে মনে করি না।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়