রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৪ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০৪ জানুয়ারি ২০২৪, ০০:০০

মাহমুদুল হাসান মাসুম : দূরপাল্লার সাঁতারে চাঁদপুরের নূতন সম্ভাবনা

অনলাইন ডেস্ক
মাহমুদুল হাসান মাসুম : দূরপাল্লার সাঁতারে চাঁদপুরের নূতন সম্ভাবনা

সাঁতারে চাঁদপুরের সোনালী অতীত বললেই সর্বাগ্রে যাদের নাম চলে আসে, তাঁরা হলেন দূরপাল্লার বিশ্বখ্যাত সাঁতারু ইংলিশ চ্যানেল বিজয়ী আব্দুল মালেক এবং জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত ও অবিরাম সাঁতারে বিশ্ব রেকর্ডধারী অরুণ নন্দী। দুজনেই বর্তমানে প্রয়াত। এঁদের স্মৃতিতে চাঁদপুর স্টেডিয়ামে রয়েছে ‘মালেক ক্রীড়া ভবন’, আর আউটার স্টেডিয়ামে রয়েছে ‘অরুণ নন্দী সুইমিংপুল’। তাঁদের অবর্তমানে চাঁদপুরের সাঁতারের ঐতিহ্যকে ধরে রাখার মতো এমন কোনো সাঁতারুকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, যাদের সাঁতারে রয়েছে ধারাবাহিক সাফল্য। মাঝেমধ্যে কেউ কিছু সাফল্য নিয়ে উঁকিঝুঁকি মারলেও সেটা হয়নি টেকসই। ২৪ বছর আগে ১৯৯৯ সালের নভেম্বরে সাঁতারু আঃ মালেকের ছোটভাই বাদশাহ এবং অরুন নন্দীর সান্নিধ্য পাওয়া ছানাউল্লাহ ও রোকন ঢাকা-চাঁদপুর দূরপাল্লার সাঁতার কেটে আলোড়ন সৃষ্টি করেছিলেন। তারপর সাঁতারে চাঁদপুরের এমন কোনো কৃতিত্ব কারো চোখে পড়েনি। এমতাবস্থায় চাঁদপুরের সাঁতারকে মনে হয়েছে কেবল এক হারানো অতীত। সেজন্যে সাঁতারকে নিয়ে চাঁদপুরের সাধারণ্যে আছে হতাশা-নিরাশা। ঠিক এমন সময় গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠের ক্রীড়াকণ্ঠে চৌধুরী ইয়াসিন লিখেছেন এক প্রতিবেদন, যার আশা জাগানিয়া শিরোনাম হয়েছে ‘বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিলেন বিষ্ণুপুরের মাহমুদুল হাসান মাসুম’। এতে চৌধুরী ইয়াসিন ইকরাম মেঘনাপাড়ের ছেলে মাসুমকে নিয়ে লিখেছেন, বিদায়ী বছরে সাঁতরিয়ে ‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দিলেন চাঁদপুর সদর উপজেলাধীন বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের মাহমুদুল হাসান মাসুম। ‘বাংলা চ্যানেল’ হলো বাংলাদেশের মূল স্থলভাগের বিশেষ করে টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ থেকে বাংলাদেশের একমাত্র প্রবাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের ফেরিঘাট পর্যন্ত বিস্তৃত ১৬.১ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের একটি পানিপথ। বিজয়ের মাস ডিসেম্বরে এ পথটি অতিক্রম করলেন মাসুম।

২০০৬ সালের জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি একটি দল শাহপরীর দ্বীপ থেকে বঙ্গোপসাগরের ১৬.১ কিলোমিটার সাঁতার কেটে পৌঁছায় সেন্টমার্টিন দ্বীপে। আন্ডারওয়াটার ফটোগ্রাফার ও স্কুবা ডাইভার কাজী হামিদুল হক ছিলেন এ দলের দলনেতা। তিনি সাঁতারের এ পথের নামকরণ করেন ‘বাংলা চ্যানেল’। তারপর প্রতি বছর বাংলা চ্যানেলে নিয়মিত সাঁতার আয়োজন করে আসছে বাংলাদেশের সাঁতারু ও সাঁতারপ্রেমীরা। বেসরকারি অ্যাডভেঞ্চার দলগুলো ছাড়াও ‘বাংলা চ্যানেল সাঁতারে’ সহ-আয়োজকের ভূমিকা পালন করে থাকে বাংলাদেশ পর্যটন করপোরেশন ও পর্যটন বোর্ড। ‘বাংলা চ্যানেল সাঁতারে’ আন্তর্জাতিক নিয়ম মেনে সকল আয়োজন করা হয়। সাঁতারুরা ফ্রি হ্যান্ড সুইমিং করে থাকেন। নিরাপত্তার জন্যে প্রত্যেক সাঁতারুর সঙ্গে একটি করে উদ্ধারকারী নৌকা ছাড়াও বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের সার্ভিস বোট ও ডুবুরিরা প্রস্তুত থাকে। বাংলাদেশ ছাড়াও ভারত, নেদারল্যান্ড এবং অন্যান্য কিছু দেশ থেকে সাঁতারুরা 'বাংলা চ্যানেলে' সিঙ্গেল ও ডাবল ক্রস করেছেন। ২৮ ডিসেম্বর ২০২৩ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টায় এ প্রতিযোগিতা শুরু হয়। চাঁদপুর সদর উপজেলার বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের বিষ্ণুপুর গ্রামের আবদুল হাই মিয়াজী ও মানসুরা বেগমের কনিষ্ঠ পুত্র মাসুমসহ ৪৩ জন প্রতিযোগী এ প্রতিযোগিতায় অংশ নেন। রোববার ৩১ ডিসেম্বর মাসুমের সাথে এ প্রতিবেদকের আলাপকালে তিনি বলেন, এই প্রতিযোগিতায় এবারই আমি প্রথমবারের মতো অংশ নেই। আমার এ পথ পাড়ি দিতে সময় লেগেছে ৪ ঘন্টা ৩৮ মিনিট। মাসুম ২৮ ডিসেম্বর সকাল সাড়ে ৯টায় টেকনাফের শাহপরী দ্বীপ থেকে সাঁতার শুরু করেন এবং দুপুর ২টা ৮ মিনিটে সেন্টমার্টিন এসে পৌঁছান। ‘বাংলা চ্যানেল সাঁতারে’র ১৮তম আয়োজনে ১৬.১ কিলোমিটার সাঁতার কেটে ‘বাংলা চ্যানেল’ পাড়ি দেন তিনি। এদিন সাঁতারে নেমেছিলেন ২ নারীসহ ৪৩ জন সাঁতারু।

মাহমুদুল হাসান মাসুম ঢাকা জজ কোর্টে শিক্ষানবিশ আইনজীবী হিসেবে অনুশীলন করছেন। এছাড়া বিভিন্ন কাজে স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে নিজেকে সম্পৃক্ত রেখেছেন। পাশাপাশি বিভিন্ন ম্যারাথন ইভেন্টেও অংশগ্রহণ করেন তিনি। ‘এক্সট্রিম বাংলা’ আয়োজিত এ আসরে দেশ-বিদেশের ৪০ জন সাঁতারু সফলভাবে সাঁতার শেষ করেন। এর মধ্যে ২ জন শেষ করতে পারেননি এবং একজন অনুপস্থিত ছিলেন। মাহমুদুল হাসান মাসুম বলেন, আমার এ প্রতিযোগিতাটি অনেক ভালো লাগে। সাঁতার মানুষের জন্যে বড় প্রয়োজন। মাদক ও স্মার্টফোন আসক্তি থেকে যুব সমাজকে দূরে রাখতে স্পোর্টসের বিকল্প নেই। প্রত্যেক মানুষের বেসিক সাঁতার শেখা উচিত। প্রতি বছর এমন আয়োজন হলে দেশের গণ্ডি পেরিয়ে সারা পৃথিবীতে একটা আকর্ষণের কেন্দ্র হবে 'বাংলা চ্যানেল'। আমি সাঁতারে অনেক দূর এগিয়ে যেতে চাই। এবার ‘বাংলা চ্যানেল’ সাঁতারের আয়োজন করেছে ‘ষড়জ অ্যাডভেঞ্চার’ ও ‘এক্সট্রিম বাংলা'। টাইটেল স্পন্সর ছিলো ভিসা থিং। আয়োজনের শিরোনাম ছিলো '১৮তম বাংলা চ্যানেল সাঁতার-২০২৩'।

সাঁতারে মাহমুদুল হাসান মাসুমের অনেক দূর এগিয়ে যাওয়ার বিষয়টিতে আমরা তাকে স্বাগত জানাতে চাই। আর 'বাংলা চ্যানেল' পাড়ি দেয়ার কৃতিত্বে চাঁদপুরবাসীর পক্ষ থেকে জানাতে চাই প্রাণঢালা অভিনন্দন। চাঁদপুর জেলা ক্রীড়া সংস্থা মাসুমের পাশে প্রণোদনা নিয়ে দাঁড়ানো জরুরি, যদি তারা চাঁদপুরের সাঁতারকে ভালোবাসেন ও সাঁতারের ঐতিহ্যকে পুনরুদ্ধার করতে চান। তাকে চাঁদপুর আমন্ত্রণ জানিয়ে জেলা ক্রীড়া সংস্থা বিভিন্ন পুকুরে/ দিঘিতে/ সুইমিংপুলে অবিরাম সাঁতার আয়োজন করে দূরপাল্লার সাঁতারে তাকে উপযোগী করতে সহযোগিতা করা দরকার। এতে সাঁতারে মাহমুদুল হাসান মাসুমের অপার সম্ভাবনা উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হবে। আমরা এ ব্যাপারে জেলা ক্রীড়া সংস্থার সভাপতি ও জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের সদাশয় দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়