রবিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৫  |   ৩০ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০২ নভেম্বর ২০২৩, ০০:০০

ঝুলন্ত সেতুতে ঝুলছে যেন অযুত সম্ভাবনা!

ঝুলন্ত সেতুতে ঝুলছে যেন অযুত সম্ভাবনা!
অনলাইন ডেস্ক

চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, ভোলা ও নোয়াখালীসহ সন্নিহিত অঞ্চলের লোকজনকে সড়কযোগে কুমিল্লা হয়ে ঢাকা যেতে হচ্ছিল বৃটিশ আমল থেকে। এটা অনেক ঘুরপথ। আমাদের সড়ক প্রকৌশলীরা বিষয়টিকে ভালোভাবে নিতে পারেননি। তাই তারা বিকল্প হিসেবে সংক্ষিপ্ত পথ আবিষ্কার করতে গিয়ে বারবার চাঁদপুর জেলার ভূখণ্ডকে ব্যবহারের অনিবার্যতা পরিহার করতে পারেন নি। প্রথমে কালিয়াপাড়া-কচুয়া-গৌরিপুর, তারপর পর্যায়ক্রমে কালিয়াপাড়া-রহিমানগর-মাধইয়া, বাবুরহাট-মতলব-পেন্নাই, হাজীগঞ্জ-কচুয়া-গৌরিপুর, বাবুরহাট-মতলব-শ্রীরায়েরচর-দাউদকান্দি রূট ব্যবহারের ধারাবাহিকতা সম্পন্ন করেন। তাতেও ক্ষান্ত হননি তাঁরা। তাঁরা লক্ষ্য করলেন, মতলব উত্তরের একাংশের লোকজন বহুদিন আগে থেকেই সংক্ষিপ্ত সময়ে ঢাকা যাতায়াতে কালীপুর থেকে মেঘনা নদী পাড়ি দিয়ে ভবেরচর গিয়ে জাতীয় মহাসড়ককে ব্যবহার করছে। অতএব, এখানেই যদি মেঘনা নদীতে একটি সেতু নির্মাণ করা যায়! বস্তুত সে থেকেই স্বপ্ন দেখা শুরু। আর সে স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে যিনি প্রধানত এগিয়ে আসলেন, তিনি হচ্ছেন দেশের আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কৃষি অর্থনীতিবিদ, সরকারের বর্তমান পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী, মতলব উত্তরের কৃতী সন্তান প্রফেসর ড. শামসুল আলম (মোহন)। তাঁর সর্বোচ্চ আন্তরিকতায় ও নিরন্তর প্রয়াসে অবশেষে গত ৩১ অক্টোবর মঙ্গলবার এই সেতু নির্মাণ সংক্রান্ত ৪ হাজার ১শ’৭৪ কোটি টাকার প্রকল্প একনেকে পাস হলো। সেতুটির নাম হচ্ছে মতলব-গজারিয়া সংযোগ ঝুলন্ত সেতু। ওইদিন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপার্সন শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে এনইসি সম্মেলন কক্ষে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)-এর সভায় সেতু সংক্রান্ত প্রকল্পটি অনুমোদন দেয়া হয়।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, অনুমোদিত প্রকল্পের ব্যয় হচ্ছে ৪ হাজার ১শ’৭৪ কোটি ৬৭ লক্ষ ৯৬ হাজার টাকা। এই টাকা ব্যয়ে দেশে প্রথমবারের মতো ক্যাবল স্ট্যাইড (ঝুলন্ত সেতু) নির্মাণ করা হবে। মঙ্গলবার বেলা ১২টায় মতলবের ঝুলন্ত সেতু অনুমোদিত হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়লে মতলবের বিভিন্ন স্থানে আনন্দ মিছিল বের হয় ও মিষ্টি বিতরণ করা হয়। মতলবের যে স্থানে ব্রিজ হবে অর্থাৎ কালীপুর নামক স্থানে তাৎক্ষণিক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রী ড. শামসুল আলমের জন্যে দোয়া করা হয় এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা হয়। এছাড়াও উপজেলার ছেংগারচর, সুজাতপুর বাজার, আমিরাবাদ বাজার, জনতা বাজার, কালীর বাজার, একলাশপুর বাজার, মোহনপুর বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় আনন্দ মিছিল ও মিষ্টি বিতরণের খবর পাওয়া যায়।

সেতুটির দৈর্ঘ্য ১.৮৫ কিলোমিটার। সংযোগ সড়কের দৈর্ঘ্য ৭.৫১ কিলোমিটার (গজারিয়া অংশে ৫.৪৬০ কিলোমিটার ও মতলব উত্তর অংশে ২.০৫৫ কিলোমিটার)। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এন১-এর সাথে ইন্টারচেঞ্জ ডেভেলপমেন্ট ২.১ কিলোমিটার। নদী শাসন কাজের দৈর্ঘ্য ২.২ কিলোমিটার। টোল প্লাজা একটি এবং ওজন স্টেশন হবে দুইটি। ভার্টিক্যাল ক্লিয়ারেন্স হবে ২৫ মিটার। এই সেতু বাস্তবায়ন হলে জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার বাড়বে ০.২৩%।

গজারিয়া-মতলবের সেতুটি ঢাকা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের মধ্যে বিকল্প সড়ক যোগাযোগ স্থাপন করবে। এ সেতু নির্মাণের ফলে চাঁদপুর, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী এবং ভোলা জেলার সাথে রাজধানী ঢাকার সংক্ষিপ্ত সড়ক যোগাযোগ স্থাপিত হবে। এতে যাতায়াতের দূরত্ব, সময় এবং ব্যয় হ্রাস পাবে। সেতুটি ব্যবহারের মাধ্যমে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের ওপর যানবাহনের চাপ কমবে। সেই সাথে চাঁদপুর জেলার অন্তর্গত মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলায় অনুমোদিত দুটি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে পণ্য পরিবহন সহজ হবে। এই সেতু দেশের সামগ্রিক অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে অবদান রাখবে। নদীর অববাহিকায় নতুন শিল্পাঞ্চলসহ পর্যটন শিল্প বিকাশের পাশাপাশি নতুন কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হবে, যা অত্র অঞ্চলের মানুষের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখবে। সেতুটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশের প্রায় ১.৮ কোটি জনগণ প্রত্যক্ষভাবে সুবিধাপ্রাপ্ত হবে। সেতুটির মধ্যে নদীর মূল প্রবাহে কোনো পিলার থাকবে না। এজন্যে নদীর প্রবাহে কোনো বাধা সৃষ্টি হবে না। সেতু নির্মাণে ইডিসিএফ (ইকোনমিক ডেভেলপমেন্ট কো-অপারেশন ফান্ড)-এর আওতায় কোরিয়া এক্সিম ব্যাংক সহজ শর্তে (০.০১%-০.০৫%) হারে ঋণ দিবে ৩,৫১৩ কোটি ৯৫ লক্ষ ৮৬ হাজার টাকা এবং জিওবি হতে ঋণের পরিমাণ ৬৬০ কোটি ৭২ লক্ষ ১০ হাজার টাকা। টাকা ফেরত প্রদানের ম্যাচিউরিটি পিরিয়ড ৪০ বছর এবং গ্রেস পিরিয়ড ১৫ বছর। সেতুটি ২ লেনের ও ৬শ’ কোটি টাকায় এলজিইডির মাধ্যমে নির্মাণ করার প্রস্তাব ছিল। পরে শরীয়তপুর, ভোলা, লক্ষ্মীপুরসহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের লোকজন এই পথে যাতায়াতের গুরুত্ব অনুধাবন করে সেতু মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ৪ লেন বিশিষ্ট ৪ হাজার ১শ’ ৭৪ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম ঝুলন্ত সেতু একনেকে অনুমোদিত হয়।

যেহেতু একনেকে মতলব-গজারিয়া সংযোগ ঝুলন্ত সেতুর প্রকল্পটি চূড়ান্তভাবে পাস হয়ে গেছে, সেহেতু কোনো দুর্ঘটনা, অনাকাঙ্ক্ষিত বা অসম্ভব কিছু না ঘটলে এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন না হবার কোনো সম্ভাবনা নেই। এমতাবস্থায় মতলব উত্তর উপজেলার সকল দলমতের মানুষের অপরিমেয় আনন্দে অবগাহন করা ছাড়া অন্য কোনো উপায় আছে বলে আমাদের জানা নেই। কেননা এমন প্রকল্প কালজয়ী উন্নয়ন সম্ভাবনার সকল দ্বারই উন্মোচন করে দেয়। একসময়ের অবহেলিত মতলব উত্তর উপজেলা যে মতলব-গজারিয়া সংযোগ ঝুলন্ত সেতু প্রকল্পের কারণে আশাব্যঞ্জক সম্ভাবনার উজ্জ্বল প্রতিভাসে শুধু চাঁদপুর ও বৃহত্তর কুমিল্লায় নয়, পুরো দেশেই স্বীয় অবস্থানকে তুলে ধরতে সক্ষম হবে বলে আমরা বিশ্বাস করি। আমরা যথাসময়ে এই সেতুটির সফল বাস্তবায়ন প্রত্যাশা করছি এবং মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর প্রতি অপরিসীম কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়