শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর, ২০২৫  |   ২৯ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য

প্রকাশ : ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৫:৫৪

রায়পুরে বিএনপির এক দম্পতির প্রভাবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, মানববন্ধন, থানায় ৭টি অভিযোগ

রায়পুর (লক্ষ্মীপুর) প্রতিনিধি।।
রায়পুরে বিএনপির এক দম্পতির প্রভাবে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী, মানববন্ধন, থানায় ৭টি অভিযোগ

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বিএনপির নেতা মাসুদ রানা দম্পতির অত্যাচারে অতিষ্ঠ গ্রামবাসী। বিএনপির নাম ভাঙ্গিয়ে মাসুদসহ তার স্ত্রী ও ছেলের একের পর এক বেপরোয়া চাঁদাবাজি, হয়রানি, ভয়ভীতি প্রদর্শন ও মারধরের ঘটনার বিষয়ে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন।

শুক্রবার (১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে ৭নম্বর ওয়ার্ডের যুব বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানাসহ তার স্ত্রী কুুশুম আক্তার পৌর মহিলা দলের সহ-সভাপতি ও ছেলে যুবদলের সদস্য আকাশের বিরুদ্ধে মানববন্ধন করেছেন ভুক্তভোগী, তাদের স্বজন ও প্রায় শতাধিক এলাকাবাসী।

ওই বিএনপি নেতা মাসুদসহ তার স্ত্রী ও ছেলেকে গ্রেফতারসহ শাস্তির দাবিতে সম্প্রতি উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও), সহকারী পুলিশ সুপার ও থানা পুলিশের ওসির কাছে গণস্বাক্ষরে অভিযোগ করে এলাকাবাসী।

দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের ভুক্তভোগীদের লিখিত অভিযোগে জানা যায়, রায়পুর পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ড বিএনপির যুব বিষয়ক সম্পাদক মাসুদ রানা একজন চাঁদাবাজ, জমি দখলকারী, মাদক ব্যাবসায়ী ও দুশ্চরিত্র লোক। এসব অপরাধের জন্যে কয়েকবার কারাভোগ করেন। সে দলের পরিচয় দিয়ে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে একই বাড়ির সম্ভ্রান্ত পরিবারের সদস্য ও এলাকাবাসীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করে। স্ত্রীর দ্বারা অতিষ্ঠ বাড়ি ও গ্রামের মানুষ।

আরও জানা যায়, ২০১২ সালের ১২ ডিসেম্বর মাসুদ রানাসহ তার স্ত্রী ও ছেলে আকাশের বিরুদ্ধে একই এলাকার দিনমজুর মনুহারকে মারধর করায় তিনি মামলা করেন থানায়। ২০১৭ সালের ২৫ ডিসেম্বর নানা অভিযোগে অভিযুক্ত মাসুদ ও তার স্ত্রীর বিচারের দাবিতে মনুহারের পক্ষে ১৭ জন গ্রামবাসী সহকারী পুলিশ সুপারের কাছেও বিচার দাবি করেছিলেন। ২০২৪ সালের ১০ আগস্ট মাসুদ রানার বিরুদ্ধে রায়পুর শহরের ট্রাফিক মোড়ে বাবুল বনিকের দোকানের সামনের অংশ জোরপূর্বক ফলের দোকান বসিয়ে দখলের অভিযোগ করা হয় সেনাক্যাম্পে। চলতি বছরের ৩১ জুলাই তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে জলিল মিয়ার বাড়ির মাহবুবের রশিদ মুক্তারের পরিবারের ওপর সশস্ত্র হামলা করে মাসুদ সহ তার পরিবার ও লোকজন। আহত মুক্তার বাদি হয়ে মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে থানায় লিখিত অভিযোগ করেন।

তুচ্ছ ঘটনার জের ধরে গত ১ আগস্ট একই এলাকার দিনমজুর আবুল বাসার পাটোয়ারীর মেয়ে ও প্রবাসী সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী রাহিমা বেগমকে বেদম মারধর করে মাসুদ ও তার স্ত্রী কুসুম আক্তার। এ ঘটনায় থানায় মামলা হলে তারা ১৪ আগস্ট জামিনে এসে হত্যাসহ বিভিন্ন ক্ষতি করার হুমকি দেয়ায় থানায় সাধারণ ডায়েরি হয়। একই দিনে মাসুদসহ তার পরিবারের বিচারের দাবিতে ৫৭ জন গ্রামবাসীর স্বাক্ষরে পুলিশ প্রশাসনের কাছে বিচার দাবি জানিয়েছেন। গত ৮ সেপ্টেম্বর একই এলাকার আলআমিন নামের এক যুবককে মিথ্যা অভিযোগ তুলে ছবি সহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচারণা চালায় মাসুদ। এসব কেন করছেন জানতে চাইলে আলআমিনের কাছে ৫০ হাজার চাঁদা দাবি করে মাসুদ। চাঁদা না দেয়ায় শহীদ কমিশনারের ফলের দোকানের ভেতরে আলআমিনকে পিটিয়ে রক্তাক্ত জখম করে হত্যার চেষ্টা করে মাসুদসহ তার স্ত্রী কুশুম ও ছেলে আকাশ। এ ঘটনায় ৯ সেপ্টেম্বর মাসুদসহ তিনজনকে আসামি করে থানায় মামলা করা হয়। বৃহস্পতিবার (১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫) বিকেলে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী অভিযুক্ত মাসুদ, তার স্ত্রী কুশুম ও ছেলে আকাশের বিচারের দাবিতে থানার সামনে মানবন্ধন করেছে।

এছাড়াও মাসুদ, তার স্ত্রী ও ছেলের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা ও গ্রেফতারসহ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে গণস্বাক্ষরে অভিযোগ জানানো হয় সহকারী পুলিশ সুপারের কাছে। এর আগে ভুক্তভোগীরা ও গ্রামবাসী থানার সামনে বিক্ষোভ করেছেন।

পৌরসভার দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের বাসিন্দা মাহবুবের রশিদ মুক্তার বলেন, বিএনপি নেতা মাসুদ ও তার স্ত্রী বিএনপি নেত্রী কুসুম আক্তারের অত্যাচারে আবদুল জলিল মিয়ার বাড়ির ও এলাকার মানুষ অতিষ্ঠ। গ্রামের নিরীহ মানুষকে তুচ্ছ ঘটনায় মারধর ও মিথ্যা মামলার ভয়ভীতি দেখিয়ে চাঁদা না দিলে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করে। তাদের ভয়ে কেউ মুখ খোলে না। একই অভিযোগ করেন আলআমিন নামের যুবক। তিনিও মাসুদের বিচার দাবি জানিয়েছেন।

রায়পুর পৌরসভার জ্বীনের মসজিদ সংলগ্ন এলাকার সাংবাদিক আবদুল্লাহ আল মামুনের স্ত্রী রাহিমা বেগম অভিযোগ করে বলেছেন, বিএনপি নেতা মাসুদ বিভিন্ন অপরাধে অভিযুক্ত। নিরীহ মানুষকে মাদকে জড়ানোর ভয় দেখিয়ে চাঁদাবাজি করে থাকে। তার বিরুদ্ধে শিশু ধর্ষণ, চাঁদাবাজি, জমি দখল ও মাদক ব্যাবসার সাথে জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। তার স্ত্রী কুশুম আক্তারও মাদক ব্যবসার কাজে জড়িত। বিএনপি করার কারণে প্রশাসন ও দলের নেতারা চুপ রয়েছেন। আমার ওপর হামলার ঘটনায় বিচার চাই।

একই গ্রামের আবুল কালাম বলেন, সামান্য ঝগড়াঝাটির ঘটনায় মাসুদ দল ও পুলিশের ভয় দেখিয়ে মানুষের ক্ষতি করছে। মারধর করা সহ মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।

রায়পুর শহরের ট্রাফিক মোড়ে মুদি ব্যাবসায়ী বাবুল বনিক বলেন, আমার মুদি দোকানের সামনে যৌথভাবে ফল ব্যবসা দেয়ার জন্যে চুক্তি হয়। কিন্তু মাসুদ বিএনপির ক্ষমতা দেখিয়ে একাই দখল করে নেয়। আমার দশ লাখ টাকার ক্ষতি করেছে মাসুদ। অবশেষে থানায় ও রায়পুর সেনাক্যাম্পে মাসুদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেয়ায় আমাকে মিথ্যা মামলায় জড়ানো ও হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। আমি অভিযুক্ত মাসুদ রানার বিচার চাই।

এসব ঘটনার সত্যতা জানতে বিএনপি নেতা মাসুদ ও তার স্ত্রী কুসুম আক্তারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা সব অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। বাড়ির ও এলাকার কয়েকজনের সঙ্গে তাদের জমি নিয়ে বিরোধ। তারা একজোট হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ, মামলা, স্মারকলিপি ও মানবন্ধন করেছেন। আমিও থানায় অভিযোগ ও মামলা দিয়েছি। সংবাদ সম্মেলন করে বিচার চেয়েছি।

এ প্রসঙ্গে রায়পুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভুঁইয়া বলেন, পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের দক্ষিণ কেরোয়া গ্রামের বিএনপি নেতা মাসুদ দম্পতির বিরুদ্ধে কয়েকটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে।

রায়পুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) ইমরান খাঁন বলেন, পৌরসভার ৭ নাম্বার ওয়ার্ডের বিএনপি নেতা মাসুদ দম্পতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়