শুক্রবার, ০২ মে, ২০২৫  |   ৩২ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৬ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

অর্জিত স্বাধীনতাকে অর্থবহ করে তোলা সময়ের দাবি
অনলাইন ডেস্ক

স্বাধীনতা জীবনের সর্বস্তরে দরকার। কি ব্যক্তি-জীবন, কি সমাজ-জীবন; সকল ক্ষেত্রেই স্বাধীনতা অপরিহার্য। ব্যক্তির বিকাশ ও বিচরণে স্বাধীনতা ব্যতীত যথার্থতা অর্জন সম্ভব নয়। স্বাধীনতাবিহীন মাথা উঁচু করে বাঁচা অসম্ভব। বাঙালির স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস হাজার বছরের প্রাচীন। গৌড়ের রাজা শশাঙ্ক বাঙালিকে কিছুদিনের জন্য স্বাধীনতার স্বাদ এনে দিলেও তা কার্যকর স্বাধীনতা ছিল না। কেননা যক্ষ্মা রোগে তার অকাল মৃত্যুতে সে স্বাধীনতা অর্থহীন হয়ে পড়ে ও হাতছাড়া হয়ে যায়। সেই থেকে বাঙালি একজন উপযুক্ত নেতার অভাবে স্বাধীনতার স্বপ্ন দেখতে পারেনি। এলো সূর্যসেন-তিতুমীর, এলো নূরলদীন-ঈসা খাঁ। কিন্তু কেউই একটি জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে সঠিকভাবে ধারণ করতে পারেনি। অহিংস গান্ধীবাদের বিপরীতে সশস্ত্র বিপ্লবের ডাক দিয়ে শেষে নিজেই অন্তর্হিত হয়ে গেলেন নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু। তাই বলে বাঙালির স্বাধীনতার সূর্যোদয় অঙ্কুরে বিনষ্ট হয়ে যায়নি। প্রকৃত অর্থেই বাঙালির স্বাধীনতার সূর্য যাঁর জন্মের সাথে সাথেই উদয়ের স্বপ্ন দেখেছিল, তিনি হলেন টুঙ্গিপাড়ার খোকা, সকলের মিয়া ভাই শেখ মুজিবুর রহমান, যাঁকে বঙ্গবন্ধু উপাধিতে ভূষিত করে ইতিহাস নিজেই ধন্য হয়ে যায়।

ঊনিশশো আটচল্লিশে সূচিত হওয়া ভাষা আন্দোলনের প্রথম পর্যায়ের রাজপথের সংগ্রামই আমাদের স্বাধীনতার পথে প্রথম পদক্ষেপ। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা বুকের রক্ত দিয়ে ভাষার স্বাধীনতা রক্ষা করেই সেদিন এগিয়ে গিয়েছিলাম ভূ-খণ্ডের ও মানচিত্রের স্বাধীনতায়।

বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত বাংলাদেশের অভ্যুদয়ে ভাষা আন্দোলনের যেমন অবদান আছে, তেমনি অবদান আছে ঐতিহাসিক ছয় দফা এবং ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থানের। তাই স্বাধীনতার স্মৃতিসৌধে সাতটি চূড়ার মাধ্যমে ধারাবাহিকভাবেই বাঙালির স্বাধীনতার পথে মাইলফলকগুলোকে প্রতীকায়িত করা হয়েছে। ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪’র যুক্তফ্রন্ট নির্বাচন, ১৯৫৬’র শাসনতন্ত্র আন্দোলন, ১৯৬২’র শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬’র ছয় দফা আন্দোলন, ১৯৬৯’র গণঅভ্যুত্থান এবং ১৯৭১’র মহান মুক্তিযুদ্ধ ছিল আমাদের স্বাধীনতা অর্জনের পথে অনন্য মাইলফলক। কাজেই এ কথা বুঝতে আর অসুবিধা হওয়ার কথা নয়, আমাদের মহান স্বাধীনতা কেবল একদিনের ঘোষণার পরিণাম নয়, এ হলো সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রামের ফসল।

কেবল রাজপথের আন্দোলন নয়, এই স্বাধীনতা অর্জনে নিরীহ বাঙালি থেকে শুরু করে রণাঙ্গনের অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধা পর্যন্ত কেউই বাদ যায়নি বুকের রক্ত বিসর্জনে। তিরিশ লক্ষ শহিদের এক সাগর রক্তের স্রোতে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে আমরা পেয়েছি কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। কারও দয়ায় নয়, কারও করুণায় নয়, আমরা লড়াই করেই আমাদের মানচিত্র জয় করেছি। আমাদের এই ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করার হাজারো ষড়যন্ত্র অব্যাহত ছিলো। এখনও আছে। চীন-মার্কিন কূটনীতি থেকে শুরু করে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোও চায়নি আমরা স্বাধীন হই। কিন্তু ওরা উপলব্ধি করতে পারেনি, আমাদের একজন বঙ্গবন্ধু আছেন, আমাদের একজন অনন্য নেতা আছেন, যাঁর তর্জনীর কাছে নত হয়ে আসে স্বয়ং হিমালয়। আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামকে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের তকমা লাগিয়ে পশ্চিম পাকিস্তানিরা চেয়েছিল বিশ্বের জনমত ঘুরিয়ে দিতে। কিন্তু সেদিন আমাদের পক্ষে রুশ-ভারতের শক্ত অবস্থান ছিলো বলেই আজ আমরা স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ পেয়েছি।

সেদিন আমাদের পাশে যে কেবল রুশ-ভারতই ছিল তা নয়, আমরা পাশে পেয়েছিলাম ফরাসী লেখক জাঁ পল সার্ত্রেকে, পেয়েছিলাম জর্জ হ্যারিসন-পণ্ডিত রবি শঙ্করকে। পাশে দাঁড়িয়েছিলেন মার্কিন কবি অ্যালেন গিন্সবার্গ ও সিনেটর কেনেডি। তিব্বতী মাউন্টেন ঈগল কিংবা অজিবীর ওডারল্যান্ডকেও আমরা ভুলতে পারি না। বাংলাদেশের জন্মকালীন ধাত্রীমাতা মহীয়সী ইন্দিরা গান্ধীকেও ইতিহাস লিখে রেখেছে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের ইতিহাসের সাথে। এ বন্ধন অচ্ছেদ্য, অবিস্মরণীয়।

কিন্তু এ স্বাধীনতা ধীরে ধীরে অর্থহীন হয়ে যেতে বসেছে আমাদের কতিপয় গোষ্ঠীর সাম্প্রদায়িক মনোভঙ্গির কারণে। আমরা সিন্ডিকেট করে অতিরিক্ত মুনাফার লোভে দেশের মানুষকে সর্বস্বান্ত করতে চলেছি। আমরা দুর্নীতির নিগড়ে দেশকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছি। দেশপ্রেমহীনতা এখন আমাদের শোণিতপ্রবাহে বিষের মতো মিশে গেছে। আমরা ব্যাংকের টাকা বিদেশে পাচার করি অবলীলায়, আমরা সরকারি পদে থেকে বিদেশে গড়ে তুলি অট্টালিকা। অতিদ্রুত এসব অপচর্চা ও দুর্নীতি থেকে দেশকে ফেরাতে না পারলে স্বাধীনতার উদ্দেশ্য ও আত্মত্যাগ বিফলে যাবে। অবাক লাগে, আমরা হাজার হাজার টাকা আত্মবিনোদনে খরচ করি, কিন্তু একটা সঠিক রঙের, সঠিক মাপের জাতীয় পতাকা সঠিক ভাবে সঠিক দিবসে ওড়াতে পারি না। আমরা রাষ্ট্রের নাগরিক হয়েও আমাদের জাতীয় সঙ্গীতের বাণী শুদ্ধভাবে আওড়াতে পারি না। জাতি হিসেবে এ আমাদের জন্যে অপার লজ্জার। আমাদের আজ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে জাতীয় পতাকা সঠিকভাবে ওড়ানোর বিষয়টি নিশ্চিত করতে হয়। অথচ আমরা কথায় কথায় বলি, জনগণই সকল ক্ষমতার উৎস। রাষ্ট্রের প্রতি নিজেদের দায়িত্ব ঠিকমত পালন না করেই আমরা সেজে বসি রাষ্ট্রের দণ্ডমু-ের কর্তা। আমাদের আত্মপ্রবঞ্চনা ও আত্মবিনাশের এই পথ পরিহার না করতে পারলে বঙ্গবন্ধুর কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা সোনার পাথর বাটির মতোই অবাস্তব হয়ে থাকবে। স্বাধীনতার সুফল ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে না পারলে অর্থহীন হয়ে যাবে তিরিশ লক্ষ শহিদ আর দুলক্ষ ঊননব্বই হাজার মা-বোনের ঐশ্বর্যের অকুণ্ঠ বিসর্জন।

স্বাধীনতার এই তিপ্পান্নতম দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, জাতীয় চার নেতা, মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি, সকল সেক্টর কমান্ডার, বীরাঙ্গনা মা-বোন ও সকল শহিদকে, যাঁরা আমাদের দিয়ে গেছেন গর্বিত পতাকার উত্তরাধিকার। আসুন, আজ শপথ নিই নতুন করে, এ দেশকে, এ জাতিকে এগিয়ে নিতে হবে সকল ষড়যন্ত্র ও দুর্নীতিকে হেলায় তুচ্ছ করে।

জয় বাংলা।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়