প্রকাশ : ০৮ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
স্বীয় কর্মকীর্তিতেই স্মৃতিতে অমলিন ইকরাম চৌধুরী
আজ ৮ আগস্ট। এ দিনটি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের জন্যে একটি বেদনাজর্জর দিন। গত বছরের এদিনেই চাঁদপুর প্রেসক্লাবের তিনবারের সভাপতি, দৈনিক চাঁদপুর দর্র্পণের প্রতিষ্ঠাতা, সম্পাদক ও প্রকাশক ইকরাম চৌধুরী না ফেরার দেশে চলে গেছেন। মাত্র ৫৩ বছর ৯মাস ২৩দিনের আয়ু পেয়েছেন তিনি। ডায়াবেটিস, হৃদরোগ এবং সর্বশেষ কিডনী সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছিলেন। তাঁর সুচিকিৎসায় চাঁদপুর প্রেসক্লাব ২১ লক্ষাধিক টাকার তহবিল গঠন করে। এছাড়া চ্যানেল আই, পিআইবি, ফরিদগঞ্জ ফাউন্ডেশন, জেলা প্রশাসন এবং তাঁর সহপাঠীসহ তাঁর বিপুল সংখ্যক শুভাকাক্সক্ষী আরো প্রায় ২০ লাখ টাকা নিয়ে তাঁর পাশে এসে দাঁড়ায়। করোনার কারণে ভারতে নিয়ে তাঁর কিডনী ট্রান্সপ্লান্টের কাজটি করা যায়নি। অগত্যা ডায়ালাইসিস শুরু করা হলে নবম দফা ডায়ালাইসিস শেষে তিনি শ^াসকষ্টজনিত জটিলতায় আক্রান্ত হন। তাঁকে বাসা থেকে নেয়া হয় চাঁদপুরের বেলভিউ হাসপাতালে। সর্বশেষ রাজধানীর ধানমন্ডীস্থ কিডনী এন্ড জেনারেল হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি ৮ আগস্ট ২০২০ শনিবার ভোর সাড়ে ৪টায় শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর এ অকাল মৃত্যুতে চাঁদপুরের সাংবাদিক সমাজসহ সকল মহলে গভীর শোকের ছায়া নেমে আসে।
|আরো খবর
ইকরাম চৌধুরী ছিলেন একজন সিভিল ইঞ্জিনীয়ার। নেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকে নিয়ে তিনি সেটাকে পেশায় পরিণত করেন। তিনি সাংবাদিকতার মাধ্যমে মানুষের কল্যাণ করা এবং বিভিন্ন চাহিদাপূরণের কাজটিকে বেছে নিয়েছিলেন। তিনি যখন সাপ্তাহিক রূপসী চাঁদপুরের বার্তা সম্পাদক, তখন তিনি চাঁদপুর শহরের দোকান কর্মচারীরা যে সাপ্তাহিক ছুটি বঞ্চিত সেটি নিয়ে লাগাতার লেখালেখি করেন। যার ফলে সে ছুটি কার্যকর হয়। চাঁদপুর শহরের লন্ডন ঘাটে মুক্তিযুদ্ধকালীন নৌকমান্ডোরা এমভি লোরাম নামে যে জাহাজটি ডুবিয়েছিলো, সেটি উদ্ধার করে নারায়ণগঞ্জের একটি ডকইয়ার্ডে নিয়ে যাওয়া হয়। ইকরাম চৌধুরী এর বিরুদ্ধে অবস্থান নেন এবং বিভিন্ন গণমাধ্যমে নৌকমান্ডোসহ সচেতন চাঁদপুরবাসীর বক্তব্য সম্বলিত প্রতিবেদন প্রচারের আন্তরিক ও সক্রিয় উদ্যোগ নেন। এর ফলে সে জাহাজটি চাঁদপুর ফিরিয়ে এনে জাদুঘর করার পদক্ষেপ প্রক্রিয়াধীন।
ইকরাম চৌধুরী চাঁদপুর শহরে অবস্থানরত ফরিদগঞ্জবাসীকে ঐক্যবদ্ধ করে ‘ফরিদগঞ্জ ফাউন্ডেশন’ নামে এমন একটি শক্তিশালী সংগঠন গড়ে তোলেন, যেটি চাঁদপুর শহরে উপজেলাভিত্তিক গড়ে ওঠা সংগঠনগুলোর মধ্যে ব্যতিক্রম ও শক্ত ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত। তিনি সিভিল ইঞ্জিনীয়ার হিসেবে তাঁর সহপাঠী ও শুভাকাক্সক্ষী প্রকৌশলীদের সমন্বয়ে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের বহুতল ভবন নির্মাণের এমন নকশা ও পরিকল্পনা গ্রহণ করেন, যার আদলে গড়ে উঠছে তাঁর স্বপ্নের সেই ভবন।
ইকরাম চৌধুরীর আরো কল্যাণকর অনেক কাজই আছে। তিনি তাঁর দু সহোদরসহ চাঁদপুরে এমন কিছু তরুণ-যুবককে সাংবাদিকতায় এনেছেন, যারা কালক্রমে চাঁদপুর প্রেসক্লাবের সভাপতি, বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক হওয়াসহ নানা ক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিয়েছেন, দিচ্ছেন এবং কল্যাণকর কাজ করে চলছেন। তিনি চাঁদপুরের সাংবাদিকদের মধ্যে সুসংহত ঐক্য বজায় রাখার জন্যে যে ত্যাগ স্বীকার করেছেন, যে দিক নির্দেশনা দিয়ে গেছেন সেটা কোনোভাবেই ভোলার নয়। অকাল মৃত্যু তাঁর অবয়বকে দৃষ্টির আড়ালে নিয়ে গেছে, কিন্তু তাঁর কর্মকীর্তি ও স্মৃতিকে আড়ালে নিতে পারবে না বলে আমরা বিশ্বাস করি।