সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ০২ মার্চ ২০২৩, ০০:০০

সে তো পুলিশ ঘেঁষেই চলে, তবুও--
অনলাইন ডেস্ক

আমাদের সমাজে কিছু মানুষ পুলিশপ্রীতি প্রদর্শন করে উৎকটভাবে। প্রয়োজন ছাড়াও থানায় যায়, পুলিশ কর্মকর্তাদের স্যার বলতে বলতে মুখে ফেনা তোলে, উদ্দেশ্য থাকে নিজের অপরাধ আড়াল করা এবং কৃত্রিম ভালো মানুষ সাজা। পুলিশ কর্মকর্তারা এমন লোকজনকে সোর্স হিসেবে ব্যবহার করে, এমনকি কমিউনিটি পুলিশিং কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে। এমন ব্যক্তি যদি গণমাধ্যমকর্মী তথা ছোট-বড় সাংবাদিক হয়, তাহলে তো কথাই নেই। তাকে পুলিশের অঘোষিত জনসংযোগ কর্মকর্তা (পাবলিক রিলেশন অফিসার-পিআরও) বানিয়ে ফেলে। যেমনটি চাঁদপুরের কথিত সাংবাদিক কৌশিক। তিনি যে কতোটা পুলিশ-ঘেঁষা সেটা তার ফেসবুক আইডি ও নিজস্ব আইআইএন টিভি ঘাঁটলেই অনুধাবন করা যায়। পুলিশের নানা তৎপরতা ও কার্যক্রম সম্পর্কে স্থানীয় গণমাধ্যম কর্মীদের কেউ জানার আগে এই কৌশিক কিন্তু জেনে যায়। কারণ, তার পুলিশ-ঘেঁষা অবস্থান। অথচ পুলিশ সেই কৌশিকের মোটরসাইকেল জব্দ ও ১শ’ ৮০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করে তাকে অতি সম্প্রতি ব্যাপক আলোচনার বিষয়ে পরিণত করেছে। পুলিশ অপরাধী যেই হোক না কেন, তাকে যে ছাড়ে না উল্লেখিত ঘটনার মধ্য দিয়ে আবারো প্রমাণিত হলো।

চাঁদপুর কণ্ঠসহ চাঁদপুরের স্থানীয় ক’টি পত্রিকায় কৌশিককে নিয়ে পরিবেশিত সংবাদে লিখা হয়েছে, কথিত সাংবাদিক ফাহিম শাহরিন কৌশিকের মোটরসাইকেল থেকে ১শ’ ৮০ পিচ ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে। অবস্থা বেগতিক দেখে কৌশিক মোটরসাইকেল রেখে পালিয়েছে। ২৫ ফেব্রুয়ারি শনিবার চাঁদপুর সদর উপজেলার লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। ঐদিন বিকেলে কৌশিক তার সহযোগী ফরহাদ মৃধা ও হারুন শেখকে সাথে নিয়ে লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের লক্ষ্মীপুর বাজার সংলগ্ন কবিরাজ বাড়ির পাশে যায়। তাদের গতিবিধি সন্দেহজনক হলে স্থানীয় লোকজন জড় হয়ে তাদেরকে ঘেরাও করার চেষ্টা করে। লোকজনের উপস্থিতি টের পেয়ে কৌশিক তার নিজস্ব মোটরসাইকেল এবং মোটরসাইকেলে থাকা একটি হ্যান্ডব্যাগ ও হারুন শেখকে রেখে ঘটনাস্থল থেকে ফরহাদসহ পালিয়ে যায়। পরে স্থানীয়রা ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খানকে বিষয়টি অবহিত করলে চেয়ারম্যান ঘটনাস্থলে এসে উত্তেজিত লোকজনকে নিবৃত্ত করেন এবং ফেলে যাওয়া মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডব্যাগটি ধরতে নিষেধ করেন। তখন ইউপি চেয়ারম্যান সেলিম খান চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মুহম্মদ আব্দুর রশিদকে বিষয়টি অবহিত করেন। মডেল থানার উপ-পরিদর্শক জাকির হোসেন ও পুরাণবাজার ফাঁড়ির এএসআই আমীরুল সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে মোটরসাইকেলটি জব্দ করে উপস্থিত সকলের সামনে এটিতে তল্লাশি করে। এ সময় মোটরসাইকেলে থাকা কৌশিকের হ্যান্ডব্যাগটি চেক করে তার ভেতর থেকে ১শ’ ৮০ পিচ ইয়াবা জব্দ করে।

ফাহিম শাহরিন কৌশিক পূর্ব জাফরাবাদ খান বাড়ির ফজলুল হক খানের ছেলে। অপরদিকে পশ্চিম শ্রীরামদি চালতা গাছ এলাকার মৃধা বাড়ির মৃত ছলেমান মৃধার ছেলে ফরহাদ মৃধা। স্থানীয়রা জানায়, এদের দুজনের বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় মাদক মামলা রয়েছে। এরা দুজন এর আগে মাদক মামলায় জেলও খেটেছে। এ বিষয়ে ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ সেলিম খান বলেন, স্থানীয় লোকজন তাদেরকে ধরলে একটি মোটরসাইকেল এবং একটি হ্যান্ডব্যাগ রেখে তিনজনের মধ্যে দুজন পালিয়ে যায়। আমি ঘটনাস্থলে এসে লোকজনকে নিবৃত্ত করি এবং মোটরসাইকেল ও হ্যান্ডব্যাগটি ধরতে নিষেধ করি। বিষয়টি তাৎক্ষণিক মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে অবহিত করলে তিনি দ্রুত ঘটনাস্থলে এসআই জাকির ও এএসআই আমিরুলকে সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে পাঠান। এ সময় পুলিশ মোটরসাইকেলটি জব্দ করে থানায় নিয়ে যায় এবং উপস্থিত সকলের সামনে হ্যান্ডব্যাগটি খুলে তার ভেতরে থাকা ১শ’ ৮০ পিচ ইয়াবা জব্দ করে। জানা যায়, কৌশিক এর আগে মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে মডেল থানা পুলিশের মামলায় জেল খেটেছে। তার বিরুদ্ধে কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে।

কৌশিক কি শুধু পুলিশ-ঘেঁষা?--মোটেও নয়। সে শাসকদলের জেলা পর্যায়ের শীর্ষ নেতাদেরও বিশেষ ২-৪ জনেরও বেশ ঘনিষ্ঠ। ওইসব নেতা নিজের অপরাধ আড়াল করতে কিংবা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে কৌশিককে অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে, যার স্পষ্ট নজির রয়েছে। সেজন্যে সে ধরাছোঁয়ার বাইরেই থাকে সবসময়। এবার সে পালানোর কারণে প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। দেখার বিষয়, পুলিশ তার বিরুদ্ধে কঠোর না নমনীয় ব্যবস্থা নেয়। একজন কথিত সাংবাদিকের অপতৎপরতার কারণে চাঁদপুরের পুরো সাংবাদিক সমাজ কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সেজন্যে কৌশিকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ বাঞ্ছনীয় বলে সুধী সমাজ মনে করছে।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়