সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩, ০০:০০

একুশ চির উন্নত শির
অনলাইন ডেস্ক

ভাষা মানুষের কেবল ভাবের বাহনই নয়, ভাষা মানুষের সংস্কৃতি এবং সাহিত্যেরও পরিচায়ক। ভাববৈচিত্র্য ও ঐতিহ্যের দিক থেকে বাংলা ভাষা পৃথিবীর উন্নত ও মধুর ভাষাগুলোর একটি। জনবাহুল্যের পরিসংখ্যানে বাংলা ভাষা পৃথিবীর মধ্যে অষ্টম হলেও জাতিসংঘে প্রদত্ত ভাষণের মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষা এক অনন্য নজির স্থাপন করেছে। ঊনিশশো চুয়াত্তরে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে বঙ্গবন্ধুর দেয়া বাংলা ভাষণ ছিলো সদ্য স্বাধীন কোনো একটা দেশের সরকার প্রধানের গৌরবদীপ্ত আত্মপ্রকাশ। পৃথিবীতে কেবল বাঙালিই একমাত্র জাতি যারা মাতৃভাষার অধিকার রক্ষায় যেমন রক্ত দিয়েছে, তেমনি দেশের স্বাধীনতা অর্জনেও রক্তগাঙের ধারায় সিক্ত হয়েছে।

চর্যাপদের সন্ধ্যা ভাষার মাধ্যমে যে বাংলার সূচনা, কালের পরিক্রমায় সেই বাংলাই আজ আধুনিক প্রযুক্তির সংক্ষিপ্ত বাংলায় রূপান্তরিত হয়েছে। ফলে ভাষাটি আজ যুগধর্মকে ধারণ করেছে। অনেক ভাষাই পৃথিবীতে কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে এবং যাবে। কিন্তু বাংলা ভাষার প্রতি মানুষের আগ্রহ ও অনুরাগ ক্রমশ বেড়ে চলেছে। এর ফলস্বরূপ আমরা কী বোর্ডে যেমন বাংলা ফন্ট পেয়েছি তেমনি গুগল ট্রান্সলেটরেও বাংলা সংযুক্ত হয়েছে। আবার বাংলায় দেয়া বঙ্গবন্ধুর সাত মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণও ইউনেস্কোর রেজিস্টার অব দ্য ওয়ার্ল্ড হেরিটেজে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। পাশাপাশি রবীন্দ্রনাথের প্রতি প্রেমে বিদেশিরা রবীন্দ্র সঙ্গীতকে ভালোবাসার কারণে তারাও বাংলা শেখায় আগ্রহী হয়ে উঠেছে। জাতিসংঘের শান্তিরক্ষী বাহিনীতে সুনামের সাথে বাংলাদেশের সৈন্যরা কাজ করার জন্যে আজ সিয়েরা লিওন, আইভরিকোস্টে বাংলা অফিসিয়াল ভাষার মর্যাদা পেয়েছে।

বায়ান্নর ভাষা শহিদেরা আমাদের যেমন রাষ্ট্রভাষার অধিকার দিয়ে গেছে, তেমনি নিরানব্বইয়ে রফিক-সালাম আমাদের দিয়ে গেছে আমাদের অমর একুশকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের সম্মান। আমরা সেই রক্তের উত্তরাধিকারে জেনেছি, একুশ মানে মাথা নত না করা। রফিক, সালাম, বরকত, জব্বার, শফিউরসহ সেদিন যারা শহিদ হয়েছিল তাঁদের প্রতি আমরা যেমন শ্রদ্ধায় অবনত হই, তেমনি আমরা চাঁদপুরের স্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদেরও সালাম জানাই। তাঁরা সেদিন ঊনিশশো বায়ান্নে অকুতোভয় ছিলেন বলেই আজ আমরা এ ভাষার উত্তরাধিকার পেয়েছি। চাঁদপুর কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার চত্বরে যদি স্থানীয় ভাষা সংগ্রামীদের নাম উৎকীর্ণ করা ফলক থাকতো মাঠের কোনো এক জায়গায়, তবে আগামী প্রজন্মের কাছে তাঁদের সংগ্রামের স্মৃতি নিয়ে আসতো অনুপ্রেরণার মশাল। আমরা এই শহিদ দিবসে সেই আহ্বান জানাই। পাশাপাশি ঊনিশশো বায়ান্নের ভাষা শহিদদের প্রকৃত তালিকাও শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে কোনো একটা শিলালিপিতে খোদাই করে রাখার আহ্বান জানাই।

শহিদ দিবস প্রতিবারের ন্যায় এবারও যেনো কেবল কাগজে-কলমে পালিত না হয় কেবল। এবারের শহিদ দিবস হোক আমাদের দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ বিনির্মাণের প্রকৃত অঙ্গীকার। একুশ মানে হোক ‘বল বীর চির উন্নত শির’, এই শপথের বাংলাদেশ। তবেই শহিদের আত্মত্যাগ হবে সফল ও সার্থক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়