সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৬ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ১৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০০:০০

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিজয় হোক অর্থবহ
অনলাইন ডেস্ক

১৬ ডিসেম্বর বীর বাঙালির মহান বিজয় দিবস। লাঞ্ছনা-বঞ্চনা আর ত্যাগের পরিমাপে সুদীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মধুর ফসল হলো বীর বাঙালির বিজয়। আজকের বাঙালি একদিনে এই অবস্থানে আসেনি। হাজার বছরের শত সংগ্রাম শেষে বাঙালি পেয়েছে তার স্বাধীন ভূ-খণ্ড আর লাল-সবুজের নিজস্ব পতাকা। হাজার বছরের পুরানো ঐতিহ্য চর্যাপদের আবিষ্কার যেমন আমাদের জাতি হিসেবে শেকড়ের সন্ধান এনে দেয়, তেমনি একজন শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মক্রন্দন আমাদের স্বপ্ন দেখায় পরাধীন শৃঙ্খল হতে মুক্তির। পলাশীতে পতন কিংবা শশাঙ্কের ব্যর্থতা মুছে গিয়ে আমরা পেয়ে যাই উত্তাল মার্চের মহাকাব্যিক ভাষণের অগ্নিস্ফুলিঙ্গ। সেই ভাষণের বজ্রকণ্ঠ আমাদের স্বাধীনতার তরী বেয়ে কূলে ভিড়িয়ে দেয় একাত্তরে। যে নাবিক তাঁর শত সংগ্রাম শেষে আমাদের পৌঁছে দিলেন নিজেদের স্বাধীন ভূমিতে, তিনিই রয়ে গেলেন পাকিস্তানে একাকী নিঃসঙ্গ। কেউ জানেনি, আদৌ তিনি বেঁচে আছেন কি না, কেউ জানেনি তিনি কোথায় আছেন, কেমন আছেন। তাই ডিসেম্বরের ষোল তারিখে অর্জিত বিজয় আমাদের শঙ্কাকে দূর করতে পারেনি। স্বাধীনতার মহান স্থপতি ব্যতীত আমাদের সেই বিজয় পূর্ণাঙ্গ উল্লাসে পরিণত হতে পারেনি। তবুও বাঙালি শত্রুমুক্ত হওয়ার আনন্দে নেমেছিলো রাজপথে, গলা ছেড়ে শামিল হয়েছিলো মুক্তির কলরবে। আজ সেই মুক্তির একান্ন বছর পূর্ণ হয়ে গেলো। আমরা এখন পদার্পণ করেছি বিজয়ের বাহান্ন বছরে। সেদিনের সদ্যমুক্ত স্বদেশ আজ রাহুমুক্ত আধুনিক বাংলাদেশ। কিন্তু ভূ-খণ্ডের মুক্তি হলেও স্বপ্নের কাঙ্ক্ষিত মুক্তি আমরা আজও পাইনি।

শোষণ ও বঞ্চনা থেকে মুক্তির এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনার বাংলাদেশ বিনির্মাণের যে স্বপ্ন নিয়ে বাঙালি নেমেছিলো যুদ্ধে, সে স্বপ্ন আজও বাস্তবায়িত হয়নি। নয়া চীনের বিপ্লব হতে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার যে স্বপ্নবীজ বঙ্গবন্ধু নিয়ে এসেছিলেন, তা আজও উপ্ত হয়নি বাংলাদেশের মননভূমে। আজও এখানে দুর্নীতিবাজের প্রতি আনুগত্য এবং সততার প্রতি উপহাস অনুরণিত হতে থাকে। যে অর্থনৈতিক বৈষম্যকে নির্মূল করতে চেয়েছিলো বাঙালি, সে অর্থনৈতিক বৈষম্য আরও প্রগাঢ় হয়েছে অস্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাহীনতায়। কিন্তু সুখী-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ বিনির্মাণে অর্থনৈতিক মুক্তি অতীব জরুরি। অর্জিত বিজয়কে সার্থক ও ফলপ্রসূ করে তুলতে হলে আমাদের সাংস্কৃতিক মুক্তিকেও অর্থবহ করে অর্জন করতে হবে। মুক্তবুদ্ধি ও মুক্ত মত যদি বাধাগ্রস্ত হয়, তবে আমরা কাঙ্ক্ষিত সোনার বাংলা বিনির্মাণে পিছিয়ে পড়বো, এ কথা দ্ব্যর্থহীনভাবে বলা যায়।

বিজয় মানে কেবল পতাকা নয়, বিজয় মানে কেবল দিবস উদযাপনসর্বস্ব অনুষ্ঠান নয়। বিজয় দিবস মানেই মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে লালন এবং মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্নের প্রকৃত মুক্তি। বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তীতে আমরা করোনা ভ্যাকসিনের সফল প্রয়োগে যেমন জাতিকে জীবাণুমুক্ত রাখার প্রত্যয়ে উদ্দীপ্ত ছিলাম, তেমনি সুবর্ণজয়ন্তী পার করে আজ আমরা শতবর্ষমুখি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর। আমাদের এই যাত্রায় বিজয় দিবস হোক অর্থবহ। বাংলাদেশের প্রতিটি গৃহে বিজয়ের সুফল পৌঁছে যাক কাঙ্ক্ষিত মাত্রায়, এ আমাদের অবিরাম প্রার্থনা। সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি প্রতিরোধ ও বৈষম্যহীন অর্থনীতির পাশাপাশি ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শ হয়ে উঠুক বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা। ‘তোমাদের যা বলার ছিল বলছে কি তা বাংলাদেশ?’ এ ধরনের কোনো প্রশ্ন আর আমরা শহিদদের কাছে করতে চাই না। বিজয়ের একান্ন বছরপূর্তি আমাদের জন্যে নিয়ে আসুক সত্যিকারের মুক্তির বারতা।

সবাইকে মহান বিজয় দিবসের শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন। জয় বাংলা। বাংলাদেশ চিরজীবী হোক।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়