প্রকাশ : ১৪ নভেম্বর ২০২২, ০০:০০

মনুষ্য সমাজে তুচ্ছ ঘটনায় কতো কীই না ঘটে। ঠুনকো ঘটনাকে কেন্দ্র করে কতো কিছুই না হয়। মানুষ মেজাজ, রাগ, উত্তেজনা নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে কার্যত অমানুষ হয়ে যায় এবং পাশবিক, অমানবিক ও পাষ-রূপী আচরণ করে। এর পরিণামও কম-বেশি ভোগ করে। হাতাহাতি, মারামারি, হামলা, সংঘর্ষ সহ নানারূপী অপ্রীতিকর ঘটনায় হত্যার ঘটনাও ঘটে। আবার লঘু পাপের জন্যে এক মানুষ আরেক মানুষকে গুরু দণ্ডেও দণ্ডিত করে। সালিস, মামলা, আদালত পর্যন্ত যাওয়ার ধৈর্যটুকুও ধারণ করে না। এই অধৈর্যের জন্যে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির নিজের জীবনের ক্ষতিটাই হয় বেশি, যতোটা না ক্ষতি হয় অধৈর্যের শিকার ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের। যেমন ক্ষতির শিকার হবে মতলব দক্ষিণের জনৈক লিটন। কেননা সে তার শার্টের পকেট থেকে ৫০ টাকা চুরির অভিযোগে জুবায়ের নামক এক কিশোরকে বেদম মারধর করে হত্যা করেছে।
গত ৬ নভেম্বর সকালে মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর ইউনিয়নের কালিকাপুর গ্রামের এনামুল হক বাচ্চুর কিশোর বয়সী ছেলে জুবায়ের ছাগল চরাতে গিয়ে পাশর্^বর্তী লক্ষ্মীপুর গ্রামের মুন্সি বাড়িতে যায় পানি পানের জন্যে। ফেরার পথে ওই বাড়ির আঃ সামাদের ছেলে মোঃ লিটন তার শার্টের পকেট থেকে পঞ্চাশ টাকা চুরির অভিযোগে জুবায়েরকে পাকড়াও করে। সেই টাকা জুবায়ের থেকে উদ্ধার করতে পেরেছে কিনা সেটা জানা না গেলেও জুবায়েরকে লিটন তার বসতঘরে নিয়ে দরজা বন্ধ করে বেদম মারধর করার বিষয়টি জানা গেছে। এতে জুবায়ের ক্ষুব্ধ হয়ে নিজ বাড়িতে গিয়ে বাবা-মা’র কাছে লিটনের বিরুদ্ধে দিতে পারতো অভিযোগ। কিন্তু সরল-সোজা জুবায়ের লজ্জা ও ভয় অনুভব করে নিজ বাড়ি না গিয়ে পাশর্^বর্তী তুলপাই গ্রামে নানার বাড়িতে গিয়ে আশ্রয় নেয়। রাতে সে প্রচণ্ড জ্বরাক্রান্ত হয় এবং পাতলা পায়খানা সহ বমি হয়। পর্যায়ক্রমে নারায়ণপুর ও মতলবের হাসপাতাল হয়ে চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে নেয়ার পথে জুবায়ের মারা যায়।
ঘটনার আকস্মিকতায় জুবায়েরের বাবা হতবিহ্বল হয়ে পড়েন। লাশের ময়না তদন্ত, জানাজা ও দাফনের ২দিন পর তিনি মতলব থানায় মামলা দায়ের করলে খুনি লিটনসহ অন্য আসামীরা পালিয়ে যায়। তবে এলাকাবাসীর মন থেকে পালিয়ে যায় নি তীব্র ক্ষোভ। সেজন্যে গত ১২ নভেম্বর দুপুরে কালিকাপুর আদর্শ দাখিল মাদ্রাসার সামনে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে খুনি লিটনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলের ফাঁসি দাবি করে।
আমাদের বিশ্বাস, মতলবের কালিকাপুরের কিশোর জুবায়ের হত্যার পর পালিয়ে যাওয়া খুনি লিটনসহ অন্যদের আটকে পুলিশের বিলম্ব হলেও পুলিশের জালে ওদের ধরা পড়তেই হবে। প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহার করে পুলিশ জুবায়েরের খুনিদের ধরতে পারাটা খুব কঠিন বলে আমরা মনে করি না। আমরা কিশোর জুবায়ের হত্যা মামলার দ্রুত অগ্রগতি চাই এবং শাস্তি হিসেবে খুনিদের ফাঁসি চাই।