প্রকাশ : ০১ আগস্ট ২০২১, ০০:০০
চাঁদপুর শহরের পশ্চিমাংশ জুড়ে রেলওয়ের বিপুল পরিমাণ জায়গা রয়েছে, যার অধিকাংশই পরিত্যক্ত। এ পরিত্যক্ত জায়গায় বিনা বাধায়, রেলওয়ের ভূমি সংক্রান্ত অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সাথে যোগসাজশে গড়ে উঠেছে বহু বসতঘর ও স্থাপনা। ঘিঞ্চি পরিবেশে এখানে বসবাসকারীদের একটা অংশ বিপথগামী হয়ে ভূমিদস্যুতা, মাদক ব্যবসা, দখলকৃত রেলভূমি বিক্রি, ভাড়া প্রদান, সন্ত্রাস, চুরি, ছিনতাই ইত্যাদি অপরাধ কর্মে জড়িয়ে পড়ে আইন অমান্য করার দুঃসাহস দেখায়। এরা রেল এলাকাতে অবস্থিত প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রাতের বেলা, এমনকি নির্জনাবস্থায় দিনের বেলাতেও তাদের অপরাধকর্মের পসরা বসায়। কেউ মাদক গ্রহণ করে, মাদক বিক্রি করে, জুয়া খেলে ইত্যাদি। উত্তর শ্রীরামদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আক্কাস আলী রেলওয়ে একাডেমী ও রেলওয়ে শিশু বিদ্যালয় (সাবেক রেলওয়ে কিন্ডারগার্টেন)-এর সুপরিসর মাঠকেই তারা তাদের অপরাধ কর্মের জন্যে বেশি পছন্দ করে। এ তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সীমানা দেয়াল থাকলেও অপরাধীরা মই ব্যবহার করে দেয়াল টপকিয়ে তাদের অপরাধ কর্ম নির্বিঘ্নে সম্পাদনের সুযোগ নেয়। এদের নিয়োজিত গোয়েন্দা হিসেবে কাজ করে কিছু দোকানদার কিংবা নির্দিষ্ট কিছু লোকজন, যারা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষের কাউকে দেখলে, আর পুলিশের আগমন টের পেলে অপরাধীদের মোবাইল ফোনে জানিয়ে দেয়, যাতে নিরাপদে-নির্বিঘ্নে সটকে পড়তে পারে। দেশের চলমান করোনা দুর্যোগেও এই অপরাধীরা বসে নেই, তারা উক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে তাদের অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেই।
শুধু কি তা-ই? কিছু অপরিণামদর্শী কিশোর-তরুণ-যুবক, এমনকি শিশুরাও করোনাকালীন কঠোর বিধি নিষেধ (লকডাউন) চলাকালে উক্ত তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে যে কোনোভাবে হোক ঢুকে ফুটবল, ক্রিকেটসহ অন্যান্য খেলাও খেলে থাকে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্রধানসহ অন্য কেউ এদেরকে বাধা দিলে অভিভাবক ও অপরাধী চক্রসহ তেড়ে আসে, হুমকি দেয়। সিভিল ড্রেসে পুলিশ সুপারসহ অন্যান্য পুলিশ কর্মকর্তা বিপুল সংখ্যক পুলিশ ফোর্স নিয়ে উক্ত তিনটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অন্যতম আক্কাস আলী রেলওয়ে একাডেমী মাঠে অভিযান চালায়। শুক্রবারের ঘটনা এটি। এ অভিযানে গিয়ে দেখা যায়, ওই মাঠে প্রায় শতাধিক লোক জড় হয়েছে এবং কিছু কিশোর-তরুণ-যুবক ফুটবল খেলছে। এদের মধ্যে ৪৪ জনকে আটক করা সম্ভব হয়। তাদেরকে চাঁদপুর মডেল থানায় নিলে তারা চলমান লকডাউনে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হবে না এবং খেলাধুলায় মগ্ন হবে না মর্মে মুচলেকা দেয়। যে কারণে রাতে তাদেরকে তাদের অভিভাবকদের জিম্মায় ছেড়ে দেয়া হয়।
৪৪ জন ফুটবল খেলোয়াড়কে মুচলেকা দিয়ে ছেড়ে দেয়ায় অনেকেই উষ্মা প্রকাশ করেছেন। তারপরও আমরা পুলিশ সুপারকে ধন্যবাদ জানাই এজন্যে যে, তিনি কোনো প্রকার গড়িমসি ছাড়াই একান্ত সদিচ্ছায় এদের নিরাপদ খেলার আস্তানায় হানা দিয়েছে এবং এদেরকে সময়োপযোগী শায়েস্তা করেছে। এতে চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানের মাঠে যারা করোনার মধ্যেও অবিবেচক ও অপরিণামদর্শীর মতো খেলতে যাবার কথা ভাববে, তারা অন্তত ভয় পাবে এবং ঘরে থাকার ও অপ্রয়োজনে ঘর থেকে না বেরুবার বিষয়ে মনস্থ করবে।