সোমবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৫  |   ২৮ °সে
জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয় অন্যান্য
ব্রেকিং নিউজ
  •   চাঁদপুর জেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ইউসুফ গাজী গ্রেফতার

প্রকাশ : ২৭ অক্টোবর ২০২২, ০০:০০

যেটি অস্বীকারের উপায় নেই-
অনলাইন ডেস্ক

২৪ অক্টোবর ২০২২ সোমবার চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসানের স্বাক্ষরে ‘জেলা প্রশাসন চাঁদপুর’ নামক ফেসবুক আইডিতে ‘জরুরি বিজ্ঞপ্তি’ শিরোনামে একটি বিজ্ঞপ্তি পোস্ট দেয়া হয়। এতে লিখা হয় “সর্বসাধারণের অবগতির জন্য জানানো যাচ্ছে যে, বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আগামীকাল (মঙ্গলবার) ভোর রাত সকাল নাগাদ বরিশাল, চট্টগ্রাম উপকূল অতিক্রম করতে পারে। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবের কারণে চাঁদপুর জেলাকে ০৭ নম্বর বিপদ সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে চাঁদপুর জেলার চরসমূহের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৫-৮ ফুট অধিক উচ্চতায় বায়ুতাড়িত জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে। চাঁদপুর জেলার সকল জেলেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হলো। চরাঞ্চলে বসবাসরত জনসাধারণকে নিরাপদ আশ্রয়ে অবস্থান গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করো হলো।’

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক কামরুল হাসান দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় কর্তৃক নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে বিজ্ঞপ্তি প্রচারের দিনই ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং মোকাবিলায় জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা ডাকেন এবং সভাপ্রধানের বক্তব্যে বলেন, ঘূর্ণিঝড় মোকাবিলায় জেলা প্রশাসনের পক্ষে সব ধরনের প্রস্তুতি গ্রহণ করা হয়েছে। যে কোনো ধরনের পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্ক অবস্থানে রয়েছে জেলা প্রশাসন। প্রত্যেকটি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে সতর্ক অবস্থানে থাকার জন্যে। জেলার মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ১২১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি শুকনো খাবারসহ জরুরি পণ্য মজুদ রেখেছে। সিত্রাং মোকাবিলায় চাঁদপুর সদর, হাইমচর ও মতলব চরাঞ্চলের পরিবারগুলাকে নিরাপদ স্থানে অবস্থান নেয়ার জন্যে আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেও আশ্রয় কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করার ব্যবস্থাগ্রহণসহ জেলার চরাঞ্চল ও নদী বন্দর এলাকায় মাইকিং ও আবহাওয়ার সর্বশেষ তথ্য প্রচার করা হচ্ছে।

২৩ অক্টোবর সকাল থেকেই সারাদেশের অধিকাংশ স্থানে আকাশ গুমোট এবং সারাদিন ও সারারাত গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হওয়ার মধ্যে কাটলেও দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের টনক নড়েনি। জেলা প্রশাসকগণ নির্দেশপ্রাপ্ত হয়ে হাতে সময় রেখে সিত্রাং মোকাবিলায় প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারেন নি। পরদিন ২৪ অক্টোবর দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেই প্রস্তুতি গ্রহণ করতে করতে ওইদিন (সোমবার) বিকেল থেকে সিত্রাং দেশের উপকূলীয় জেলাগুলোতে আঘাত হানতে শুরু করে। যার ফলে যথার্থ প্রস্তুতি পুরোপুরি গ্রহণের আগেই সিত্রাংয়ের আঘাতে প্রাণহানি কম হলেও ব্যাপক সম্পদহানি হয়েছে, ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে, বিদ্যুৎ সঞ্চালন ব্যবস্থা লণ্ডভণ্ড হয়েছে, জলোচ্ছ্বাসে নদী তীরবর্তী আবাসিক এলাকা ও ব্যবসায়িক এলাকায় বিবিধ মালামালের ধারণাতীত ক্ষতিসাধন হয়েছে।

সিত্রাংয়ের পূর্বাভাস প্রচারের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের অবশ্যই ঘাটতি ছিলো, আর ভুল তো ছিলোই এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের আগাম প্রস্তুতি গ্রহণে ধীরগতি ছিলো-এটা অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। প্রেস ব্রিফিং করে বাক্চাতুর্যে দোষ ঢাকার চেষ্টা করা যায়, কিন্তু সত্য ঢাকা যায় না সিত্রাংয়ে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকেই সরকারের সংশ্লিষ্ট সকল দপ্তরের ভূমিকায় ভীষণ ক্ষুব্ধ। তাই আমরা মনে করি, আগামী নভেম্বর/ডিসেম্বরসহ ভবিষ্যতে অন্য যেসব ঘূর্ণিঝড় হতে পারে, তার অনেক আগে থেকেই পূর্বাভাস প্রচার এবং সম্ভাব্য সকল ব্যবস্থাগ্রহণই হতে পারে সিত্রাং কেন্দ্রিক ভুল এবং ক্ষতিগ্রস্তদের মনঃপীড়া দূর হবার অন্যতম উপায়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়