প্রকাশ : ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২, ০০:০০
যে কোনো সরকারি হাসপাতালের চারপাশে ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠা মানে দালাল গড়ে ওঠার সুযোগ তৈরি করে দেয়া। এ সুযোগ তৈরিতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জনের কার্যালয়ের ২-৪ জন অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী অবিবেচকের মতো মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। এরা জেনে-শুনে-বুঝেই সরকারি হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায় ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে ওঠার জন্যে লাইসেন্স প্রদানে সব ধরনের সহযোগিতা করে থাকেন। যেমনটি করেছেন ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখস্থ ও নিকটস্থ এলাকায় কিছু ডায়াগনস্টিক সেন্টার গড়ে তুলতে। এগুলোর নিয়োজিত দালালদের দৌরাত্ম্যে হাসপাতালে কিছু চিকিৎসক লোভী না হয়ে পারে না। প্রতিদিন আউটডোরে টিকেট কেটে হাসপাতালের চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হওয়া অসহায় ও দরিদ্র রোগীদের অপ্রয়োজনীয় টেস্ট দেয়ার ক্ষেত্রে এসব দালালই সবচে’ বড় ভূমিকা পালন করে। হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক সহ তাঁর অধঃস্তন কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এসব দালাল ঠেকাতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয়। তবে আউটসোসিং প্রক্রিয়ায় নিয়োগপ্রাপ্ত ২-৪ জন বেসরকারি কর্মচারী এসব দালালের দোসর হিসেবে কাজ করার দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা যায়। হাসপাতালে নেই পুলিশ/আনসার। সেজন্যে দালাল প্রতিহতকরণে ডাক-দোহাই দেয়া ছাড়া হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের আর কিছুই করার থাকে না। এমন বাস্তব চিত্র নিয়ে চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণ্যমাধ্যমে দীর্ঘদিন ধরে সংবাদ প্রকাশিত হয়ে আসছিলো, কিন্তু ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোর লাইসেন্স প্রদানকারী কর্তৃপক্ষ জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো টনক নড়ছিলো না।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক (ডিজি)-এর নির্দেশে সারাদেশে ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও প্রাইভেট ক্লিনিকে চলমান অভিযানের অংশ হিসেবে চাঁদপুর জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ গত ২২ সেপ্টেম্বর বৃহস্পতিবার ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখস্থ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে সাঁড়াশি অভিযান চালায়। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ও পুলিশের সহযোগিতা নিয়ে স্বয়ং সিভিল সার্জন ডাঃ মোহাম্মদ শাহাদাৎ হোসেনের নেতৃত্বে পরিচালিত এ অভিযানে চারটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে তালা মেরে সীলগালা করে বন্ধ করা হয়েছে। বন্ধকৃত ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে মানসম্পন্ন টেকনেশিয়ান না থাকা, লাইসেন্স নবায়ন না করা, কাগজপত্র ঠিক না থাকা, টিনশেড ঘরে এক্স-রে করা, চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ ও অব্যবস্থাপনার অনিয়মগুলো প্রত্যক্ষ করেই এই কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সিভিল সার্জন এসব ডায়াগনস্টিক সেন্টারের লাইসেন্স বাতিল করার সুপারিশ করা হতে পারে বলে জানিয়েছেন।
চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালের সম্মুখস্থ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ তথা সিভিল সার্জনের কার্যালয় থেকে এতোদিন অভিযান না চালানোটা ছিলো ‘দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া, ঘর হইতে দুই পা ফেলিয়া’-এর মতো। কেননা এ ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো সিভিল সার্জন কার্যালয়ের পূর্ব দিকে চাঁদপুর কালেক্টরেট সমজিদের আড়ালে অবস্থিত। তারপরও ‘বেটার লেট দ্যান নেভার’ প্রবাদের আলোকে বলতে হয়, উক্ত সেন্টারগুলোতে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের বিলম্বিত অভিযান ও কঠোর ব্যবস্থাগ্রহণ সচেতন মানুষকে আশাবাদীই করেছে। এজন্যে আমরা জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের প্রধান সিভিল সার্জনসহ সংশ্লিষ্ট অন্য সকলকে ধন্যবাদ জানাই।