শনিবার, ৩০ নভেম্বর, ২০২৪  |   ২৪ °সে
আজকের পত্রিকা জাতীয়আন্তর্জাতিকরাজনীতিখেলাধুলাবিনোদনঅর্থনীতিশিক্ষাস্বাস্থ্যসারাদেশ ফিচার সম্পাদকীয়
ব্রেকিং নিউজ
  •   ফরিদগঞ্জে সংবাদকর্মীর কন্যাকে অপহরণ চেষ্টায় অভিযুক্তদের অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি ফরিদগঞ্জ প্রেসক্লাবসহ বিভিন্ন সংগঠনের
  •   লক্ষ্মীপুরে মাদকসহ বাবা ও দুই ছেলে আটক
  •   চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশের অভিযানে বিভিন্ন মামলার ৮ আসামী আটক
  •   ফরিদগঞ্জ পাকহানাদার মুক্ত দিবস পালন
  •   যৌথ অভিযানে কচুয়া থানার লুণ্ঠিত পিস্তলের ৮ রাউন্ড গুলি উদ্ধার

প্রকাশ : ৩১ আগস্ট ২০২২, ০০:০০

সৎ-মায়ের চরম নিঠুরতা!
অনলাইন ডেস্ক

শিশুরা যে কতোভাবে অনিরাপদ, অসহায় থাকে সেটা বোধকরি বলে শেষ করা যাবে না। নিঃসন্তান নারীর কাছে কোনো মায়ের গর্ভজাত শিশু সন্তান তুলনামূলকভাবে যতোটা নিরাপদ থাকে, এক বা একাধিক সন্তান আছে এমন মায়ের কাছে অন্য মায়ের শিশু সন্তান সাধারণত ততোটা নিরাপদ থাকে না। বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর বিখ্যাত ছোটগল্প ‘ছুটি’তে মামার বাড়িতে ভাগ্নের প্রতি মামীর অসদাচরণের মাধ্যমে অনিরাপদ, অত্যাচারিত যে জীবনচিত্র এবং পরিণতিতে মৃত্যুর যে ঘটনা তুলে ধরেছেন, তাতে মানব সমাজের একটা সাধারণ রূপই ফুটে উঠেছে। নারীরা নিজের গর্ভজাত সন্তান ছাড়া অন্য নারীর সন্তানকে তার সংসারে খুব কমই স্বাভাবিকভাবে নেয়। নানা কারণে বাবা-মায়ের অকাল মৃত্যু, বাবা ও মায়ের মধ্যে সম্পর্কের অবনতি, বিচ্ছেদ, মায়ের বিদেশ গমন সহ অনিবার্য কারণে অন্যত্র অবস্থানে শিশুরা যখন দাদী, নানী, খালার কাছে কিংবা নিঃসন্তান নারীর কাছে থাকতে হয়, তখন তুলনামূলকভাবে গর্ভধারিণী মায়ের আদর-যত্নের কাছাকাছি কিংবা তারচে’ বেশি আদর-যত্ন পায়। আর যদি সৎ-মায়ের কাছে কোনো শিশুর অগত্যা ঠাঁই হয়, তাহলে শতকরা ৯৯ ভাগ এমন শিশুর কপালে নিগ্রহ, নানারূপী নির্যাতন ছাড়া ভালো কিছু জোটে না। যেমনটি জুটেছে হাজীগঞ্জের তিনবছর বয়সী শিশু আহমেদের জীবনে। শেষ পর্যন্ত আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা সৎ-মা কোহিনুর তার গর্ভের সন্তানের পৃথিবীতে আসার আগেই সৎ-পুত্র আহমেদকে চিরতরে বিদায় করে দেয়ার ফন্দি আঁটলেন। রাতের অন্ধকারে মেরে বসতঘরের মেঝেতে কবরস্থ করে ফেললেন।

গা শিউরে ওঠা এমন ঘটনাই ঘটেছে চাঁদপুরের সীমান্তবর্তী জেলা লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জের এক গ্রামে। চাঁদপুর কণ্ঠসহ বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, তিন বছরের শিশু আহমেদ হোসেন বাবার অবর্তমানে থাকতো সৎ-মা কোহিনুর বেগমের সাথে বাবার বাড়ি হাজীগঞ্জের জিয়ানগর এলাকায়। গত সপ্তাহে কোহিনুর তার সৎ-পুত্রকে নিয়ে বেড়াতে যান তার বাবার বাড়ি লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ উপজেলার দরবেশপুরে। সেখানে গত শুক্রবার রাতের কোনো এক সময় আহমেদকে হত্যা করে বাবার বসতঘরে মাটিচাপা দিয়ে হাজীগঞ্জস্থ স্বামীর বাড়িতে চলে আসেন। একা আসায় কোহিনুর প্রশ্নবিদ্ধ হন ও চাপের মধ্যে পড়েন। এমতাবস্থায় কোহিনুর তার সৎ-পুত্র আহমেদ পুকুরে গোসল করতে গিয়ে নিখোঁজ হবার গল্প বানায়। এর সত্যতা নির্ণয়ে স্বামীর বাড়ির একটি পুকুরে ডুবুরি দিয়ে তল্লাশি চালানো হয়। কিন্তু আহমেদের লাশ না পাওয়ায় থানাকে অবহিত করা হয়। রোববার রাতে কোহিনূরকে নিয়ে যাওয়া হয় হাজীগঞ্জ থানায়। ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদের পর সোমবার দুপুরে আহমেদকে হত্যা ও বাবার বাড়িতে কবরস্থ করার বিষয়টি স্বীকার করে। সেমতে রামগঞ্জে কোহিনুরের বাবার বাড়ির বসতঘরের মাটি খুঁড়ে পুলিশ উদ্ধার করে আহমেদের লাশ। এ হত্যাকাণ্ডের সাথে কোহিনুরের বাবা-মা, বোন, স্বামী বা অন্য কারো সংশ্লিষ্টতা আছে কিনা সেটা পুলিশ খতিয়ে দেখছে।

সৎ-মা কোহিনুরের চরম নিষ্ঠুরতায় তিন বছর বয়সী সৎ-পুত্রকে হত্যা এবং লাশ গুমের ঘটনায় সংবেদনশীল মানুষমাত্রের হৃদয়েই কমণ্ডবেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে। সৎ-পুত্রকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়ে গর্ভে থাকা সন্তানের জন্যে আগামীর পৃথিবীকে নিষ্কণ্টক করতে রাক্ষুসী কোহিনুরের স্বপ্ন নিঃসন্দেহে জেলের কুঠুরিতে মাথা ঠুকে মরবে এবং হত্যার বদলে সম্ভাব্য মৃত্যুদণ্ডের আশঙ্কায় প্রতিনিয়ত কোহিনুর ভুগবে, যদি মামলার বাদী হিসেবে কোহিনুরের স্বামী শাহমিরান নির্দয় আপসকামিতায় নিজেকে সমর্পণ না করে। এ হৃদয়বিদারক ঘটনার আলোকে আমাদের অভিমত হচ্ছে, সৎ-মায়ের কাছে সৎ-সন্তানকে রাখার চেয়ে কোনো সেফহোম, শিশু পরিবার, এতিমখানা বা অন্য কোথাও রাখা উত্তম বা নিরাপদ। এ ব্যাপারে নিরূপায় বাবাদের তীক্ষ্ম সচেতনতা কাম্য, কোনোভাবেই আহমেদের মতো আর কোনো শিশুর সৎ-মায়ের যূপকাষ্ঠে নির্মম বলি কাম্য নয়।

  • সর্বশেষ
  • পাঠক প্রিয়