প্রকাশ : ২০ আগস্ট ২০২২, ০০:০০
ডিমের জন্যে যতো আহাজারি
পুষ্টিগতভাবে অধিকাংশ ডিম প্রোটিন ও কোলিনের উৎকৃষ্ট উৎস। বিভিন্ন প্রাণীর ডিমের মধ্যে মুরগির ডিম অত্যন্ত জনপ্রিয়। হাজার হাজার বছর ধরে মানুষ মুরগির ডিম খেয়ে আসছে। সম্পূর্ণ সেদ্ধ করা একটি ডিমের প্রতি ১০০ গ্রামে প্রোটিন ১২.৬ গ্রাম, স্নেহ পদার্থ ( ফ্যাট) ১০.৬ গ্রাম, শর্করা ১.১২ গ্রাম, ভিটামিন 'এ' ১৪০ মাইক্রোগ্রাম, খনিজ পদার্থের মধ্যে ক্যালসিয়াম ৫০ মিলিগ্রাম, লৌহ ১.২ মিলিগ্রাম ও ম্যাগনেসিয়াম ১০ মিলিগ্রাম, অন্যান্য উপাদানের মধ্যে পানি ৭৫ গ্রাম, ক্লোরিন ২২৫ মিলিগ্রাম, কোরেস্টেরল ৪২৪ মিলিগ্রাম সহ সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্মভাবে আরো অনেক কিছুই রয়েছে। স্রষ্টার পক্ষ থেকে ডিম তাঁর সেরা সৃষ্টি মানুষের জন্যে এতো বড়ো নিয়ামত, যা অন্তত ১৫টি রোগ সারাতে কার্যকর ভূমিকা রাখে।
|আরো খবর
শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি, হাড় শক্ত করতে ও মেধার বিকাশে ডিম খুব কার্যকর। ডিমে ভিটামিন 'এ' থাকায় দৃষ্টিশক্তি বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে। ডিমের কুসুমে থাকা ভিটামিন 'ডি' হাড়ের জন্যে ভালো। বিভিন্ন গবেষণায় স্পষ্ট হয়েছে যে, অপুষ্টি, রক্তাল্পতা ও ডায়াবেটিসের সমস্যা কমাতে প্রতিদিন একটি করে ডিম খাওয়া উত্তম। ডিম নিয়ে একটি বিভ্রান্তি বহুল প্রচলিত যে, এটি খেলে মানবদেহে কোলেস্টেরলের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। সত্য হলো, ডিমে থাকা 'ওমেগা ৩' খারাপ কোলেস্টেরলের পরিমাণ কমায় এবং ভালো কোলেস্টেরল (এইচডিএল)-এর মাত্রা বাড়ায় ১০ শতাংশ। ডিম লিপিড প্রোফাইল নিয়ন্ত্রণে রাখে এবং রক্তকণিকা বাড়ায়।
ডিমের এতো ভালো দিকের কারণে ডিমের প্রতি শিশু থেকে বৃদ্ধ পর্যন্ত সকল বয়সী মানুষের দুর্বলতা যেন স্বভাবগত ও অভ্যাসগত। সুস্বাদু হবার কারণে ডিমের রান্না প্রণালী বহুবিধ। ডিম পছন্দ করে না এমন মানুষের সংখ্যা এতোটা কম যে, সে সংখ্যা দেখতে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের প্রয়োজন হয়। প্রধান খাদ্য ভাত-রুটি গলাধঃকরণে ডিম হচ্ছে দ্রুত রান্না করা যায় এমন একটি খাদ্য উপকরণ। কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ ও লবণ দিয়ে তেলে ডিম ভেজে কিংবা মরিচণ্ডপিঁয়াজ ছাড়া শুধু লবণ দিয়ে তেলে ভেজে কিংবা সিদ্ধ করে ডিম খেতে সবারই পছন্দ। নাস্তায় ফাইভ স্টার হোটেল থেকে শুরু করে ধনী, উচ্চ মধ্যবিত্ত, মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্তের টেবিলে ডিমের দেখা পাওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির অজুহাতে দেশে বিদ্যমান অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কারসাজিতে ডিমের মূল্য ক্রমশ অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাওয়ায় ডিম এখন ধনীর নাস্তার টেবিল ছাড়া অন্যান্য টেবিল থেকে অনেকটা উধাও হয়ে গেছে। সেজন্যে ডিমের জন্যে চলছে যতো আহাজারি।
প্রতিদিন ডিম ছাড়া নাস্তা চলে না এমন শিশু এখন পরিবারের অসামর্থ্যহেতু ডিম খেতে না পেরে রীতিমত ক্ষুব্ধ ও ব্যথিত। একটি শিশুকে ১০ টাকায় একটি পরোটা কিনে খাবার জন্যে হোটেলে ১০ টাকার নোট দিয়ে পাঠালে অসুবিধা হয় না। কিন্তু ২০ টাকা বা ৫০ টাকার নোট দিয়ে পাঠালেই হলো, শিশু ডিম খাবার ইচ্ছাটিই পূরণ করে বাসায় ফিরে। এমতাবস্থায় সে বকা, এমনকি শাস্তির মুখোমুখিও হয়।
বিবাহিত-অবিবাহিত পেশাজীবী ও অপেশাজীবীদের মধ্যে যারা মেসের বাসিন্দা কিংবা একাকী থাকেন অর্থাৎ সিঙ্গেল লাইফ লীড করেন এবং উচ্চ মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত বা গরিব শ্রেণীর, তারা খরচ ও ঝামেলা বাঁচাতে, বিশেষ করে নিজেরা রান্না করে খেলে দুপুর ও রাতের খাবারে প্রধানত আলু ভর্তা ও ডাল বেশি খান। মাঝে মধ্যে সুস্বাদু ডিম খান। ডিমের দাম অস্বাভাবিক বেড়ে যাওয়ায় সে সুযোগ থেকে দেশের এই নাগরিকশ্রেণি বঞ্চিত। সেজন্যে তাদের হা-হুতাশ এখন ক্ষোভে পরিণত হতে যাচ্ছে।
পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও ভোজ্য তেলের দাম বৃদ্ধিতে সাধারণ মানুষকে যতোটা নাখোশ হতে দেখা গেছে, ডিমের অস্বাভাবিক দাম বৃদ্ধিতে তারচে' অনেক বেশি নাখোশ হবার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এর কারণ, পিঁয়াজ, কাঁচা মরিচ ও ভোজ্য তেল কিংবা অন্য কোনো খাদ্যদ্রব্যের চেয়ে সার্বজনীন গ্রহণযোগ্যতা বা জনপ্রিয়তায় ডিম অনেক এগিয়ে। এ বিষয়টি সব সুস্থ মানুষ তো বটেই, বোধকরি পাগলও ভালো বুঝে। অতএব, ডিমের বাজার নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে পরিস্থিতি যে বিভিন্ন আঙ্গিকে ভয়াবহ আকার ধারণ করবে না-সেটা হলফ করে বলার কারোই সুযোগ নেই, যতোই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ডিম বর্জনের পোস্ট দেয়া হোক না কেনো।