প্রকাশ : ১১ মে ২০২২, ০০:০০
আমাদের দেশে অধিকাংশ স্বেচ্ছাসেবামূলক কিংবা সমাজসেবা সংগঠনগুলো হুজুগে গড়ে উঠে। সমমনা কিছু তরুণ-যুবক সাধারণত এসব সংগঠন গড়ার উদ্যোক্তা। সংগঠনের সদস্য, শুভাকাক্সক্ষী কিংবা অন্য কারো নিকট থেকে সংগৃহীত চাঁদার অর্থে ও সরকারি-বেসরকারি সংস্থার অনুদানে এবং স্বেচ্ছাশ্রমে চলে এসব সংগঠনের কল্যাণধর্মী কার্যক্রম। এমন সংগঠনের নেতা যদি সৎ ও ন্যায়পরায়ণ হন, সাংগঠনিক দক্ষতাসম্পন্ন হন তাহলে তাদের কার্যক্রমে থাকে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা। অন্যথায় এসব সংগঠন আপাত ধারাবাহিক কার্যক্রমে চমক সৃষ্টি করতে পারলেও টেকসই হয় না। অনেকটা দপ করে জ¦লে দ্রুত নিভে যায়।
চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন স্থানে এমন কিছু সংগঠন সম্পর্কে জানা যায়, যেগুলো স্বল্প সময়ে ব্যতিক্রমধর্মী কর্মকাণ্ডে ব্যাপক চমক/আলোড়ন সৃষ্টি করতে পারলেও নেতৃত্বের কোন্দল ও আর্থিক অস্বচ্ছতাহেতু নিজেদের অস্তিত্ব পাঁচ বছরও টেকাতে পারেনি। এমন বাস্তবতায় যখন ২-৪টি সংগঠনকে পাঁচ বছরেরও বেশি সময় ধরে ধারাবাহিক কল্যাণকর কর্মকাণ্ডে সক্রিয় থাকতে দেখা যায়, তখন থমকে দাঁড়াতে হয়, ভাবতে হয় এবং বিস্ময়ও প্রকাশ করতে হয়।
গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে এমন একটি সংগঠন নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, যার নাম ‘সময়ের বাতিঘর ফাউন্ডেশন’। এ প্রতিবেদনে প্রতিবেদক শামীম হাসান লিখেছেন, ফরিদগঞ্জে দুঃস্থ ও অসহায় মানুষের আশার প্রদীপ হয়ে আলো ছড়াচ্ছে সামাজিক ও মানবিক সংগঠন ‘সময়ের বাতিঘর ফাউন্ডেশন’। ২০১৬ সালে প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটি করোনাকালসহ বিভিন্ন সময়ে ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের নিম্ন আয়ের, অসহায় ও দুঃস্থ মানুষের পাশে থেকে সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে বার বার। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সংগঠনটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবীরা ফরিদগঞ্জ উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে ছুটে গিয়ে ৬ শতাধিক মানুষের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ, এক নারী ও কিশোরের জটিল অপারেশন ব্যয়, করোনা রোগীদের বছরব্যাপী অক্সিজেন সিলিন্ডার সেবা, গেল রমজানে ৬৮ জন গরিব মানুষকে গোপনে ইফতারের প্যাকেজ (প্রতিটি প্যাকেজের মূল্য ৫ হাজার টাকা) প্রদানসহ নানা কাজ করে আসছে। সংগঠনের আহ্বায়ক কাজী আবু জাফর ও সদস্য সচিব নাজমুল হাসান লিটন জানান, আমাদের সামর্থ্যানুযায়ী সমাজের সুবিধাবঞ্চিত মানুষগুলোর কষ্টগুলোকে কিছুটা কমিয়ে নিয়ে আসার লক্ষ্যে আমরা সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেছি। আমরা চাই চিকিৎসা বঞ্চিত মানুষগুলোর চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে এবং সময়োপযোগী মানবিক কার্যক্রমের মাধ্যমে মানুষের পাশে দাঁড়াতে।
ফরিদগঞ্জে ‘সময়ের বাতিঘর ফাউন্ডেশনে’র মানবিক কার্যক্রমগুলোকে নিতান্তই লোকদেখানো বলার কোনো অবকাশ নেই বলে আমরা মনে করি। ব্যয়বহুল এমন কার্যক্রমের জন্যে প্রয়োজনীয় তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানা না গেলেও এটা ধারণা করা যায় যে, আপাতত সদস্যদের ব্যক্তিগত অনুদানে ও স্বেচ্ছাশ্রমে চলছে উক্ত কার্যক্রম। কথা হলো, এভাবে কতোদিন? আমরা মনে করি, সরকারি-বেসরকারি সংস্থা, চিত্তবান বিত্তবান ব্যক্তিসহ আগ্রহী অন্যদের ‘সময়ের বাতিঘর ফাউন্ডেশনে’র পাশে দাঁড়ানো দরকার কিংবা এটির তহবিল গঠনের প্রক্রিয়া নিয়ে ভাবা দরকার। অন্যথায় এটি মুখ থুবড়ে পড়তে পারে।