প্রকাশ : ২৫ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
একদিন তাহলে সেখানেও সেতু হবে?
বর্তমান চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরির স্থানে ভবিষ্যতে একদিন টানেল বা সেতু হবে-এমনটি গত ২-৩ বছর আগেও যারা বলাবলি করেছে, তাদেরকে অনেকে পাগল বলে বিদ্রƒপ করেছে। এজন্যে যারা মানববন্ধন করেছে, তাদেরকে অনেকে পরিহাস করে কটু কথা বলেছে। গতকাল চাঁদপুর কণ্ঠে ‘চাঁদপুর-শরীয়তপুর সেতু নির্মাণে চলছে সম্ভাব্যতা সমীক্ষার কাজ’ এমন ব্যানার হেডিং সম্বলিত সংবাদ দেখে অনেকে বিস্ময়জড়িত কণ্ঠে বলেছে, একদিন তাহলে সেখানেও সেতু হবে?
|আরো খবর
আজ থেকে এক বছর সময়েরও আগে ৭ এপ্রিল ২০২১ বিভিন্ন গণমাধ্যমে চাঁদপুর-শরীয়তপুর সংযোগকারী মেঘনা সেতু নির্মাণে পরামর্শক নিয়োগ সংক্রান্ত সংবাদ দেখে কেউ কেউ বলেছে, মাত্র পরামর্শকই না নিয়োগ হলো, কিন্তু কাজ কবে শুরু হবে, তার কোনো ঠিক-ঠিকানা থাকবে না। ওই সংবাদে লিখা হয়েছিল, মেঘনা নদীর ওপর চাঁদপুর-শরীয়তপুর এবং গজারিয়া-মুন্সিগঞ্জ সড়কে সেতু নির্মাণে সম্ভাব্যতা সমীক্ষা পরিচালনা এবং মাস্টার প্ল্যান প্রণয়নে ২৪৩ কোটি ১৮ লাখ ৫৯ হাজার ৫৬৩ টাকা ব্যয়ে ছয়টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিয়েছে সরকার। ওইদিন (৭ এপ্রিল ২০২১ বুধবার) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সভাপতিত্বে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির ভার্চুয়াল সভায় উপরোক্ত নিয়োগের বিষয়টি অনুমোদন দেয়া হয়। বস্তুত সে অনুমোদনের আলোকেই নিয়োগপ্রাপ্ত পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো চলতি এপ্রিল মাসে শরীয়তপুর ও চাঁদপুরে মেঘনা নদীর ৯টি পয়েন্টে সেতুর সম্ভাব্যতা যাচাইতে সমীক্ষা কাজ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে শরীয়তপুর জেলার আলুরবাজার এলাকার ৪টি পয়েন্টে কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী জুন মাসের মধ্যে বাকি ৫টি পয়েন্টের কাজ সমাপ্ত হবে।
গত ২২ এপ্রিল শুক্রবার শরীয়তপুরের কৃতী সন্তান, এককালের তুখোড় ছাত্রনেতা, বর্তমানে সরকারের পানিসম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীম শরীয়তপুরে সেতুর সম্ভাব্য স্থান আলুরবাজার সংলগ্ন মেঘনা নদী পরিদর্শন করেছেন। তারপর তিনি তাঁর ফেসবুক আইডিতে একটা পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ধন্যবাদ এবং অশেষ কৃতজ্ঞতা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা.....পদ্মা সেতু হয়ে গেল মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সাহসী সিদ্ধান্তের কারণে। এখন শুধু উদ্বোধনের অপেক্ষায়। মেঘনায় সেতুও আমাদের প্রাণের দাবি। শরীয়তপুর-চাঁদপুর মেঘনা সেতুও করার প্রক্রিয়া চালু করেছেন বঙ্গবন্ধু কন্যা। চলছে সমীক্ষার কাজ। স্পেনের একটি প্রতিষ্ঠান সমীক্ষা চালাচ্ছে। শরীয়তপুরে ৩টি, চাঁদপুরে ৩টি এবং মেঘনা নদীতে ৩টিসহ সর্বমোট ৯টি স্থানে সমীক্ষা শেষ হবে আশা করা যায় জুনের ৩০ তারিখের মধ্যেই। এ বছরেই সমীক্ষা শেষ করে ডিজাইন শুরু করা যাবে বলে আশা করি। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরেই পদ্মা সেতুর পর নির্মিত হবে মেঘনা সেতু। আর মেঘনা সেতু নির্মিত হয়ে গেলেই সমৃদ্ধ হবে আমাদের অর্থনীতি। বাংলাদেশের সাথে এগিয়ে যাবে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি শরীয়তপুর। আমার পরম সৌভাগ্য যে, আমি নির্বাচিত সংসদ সদস্য এবং উপমন্ত্রী হয়েই ২০১৯ সালের ১০ মার্চ মহান জাতীয় সংসদের প্রথম অধিবেশনে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার নিকট মেঘনা সেতুর দাবি করেছিলাম। আজ (শুক্রবার) পরিদর্শনে গিয়েছিলাম মেঘনা সেতুর সমীক্ষা স্থলে। গিয়ে সত্যিই অন্যরকম অনুভূতি হচ্ছিল। অচিরেই মেঘনা সেতু বাস্তবায়িত হয়ে শরীয়তবাসীর স্বপ্ন পূরণ হবে ইনশাল্লাহ.....জয় বাংলা।
পানি সম্পদ উপমন্ত্রী একেএম এনামুল হক শামীমের আনন্দানুভূতির সাথে আমরা কেনো, সমগ্র চাঁদপুরবাসীও একাত্ম। দেশের সুন্দর ভৌগোলিক অবস্থানে এবং সড়ক মানচিত্রে বহুমুখী সম্ভাবনায় চাঁদপুরের অনিবার্য গুরুত্ব নিয়ে আমরা এ সম্পাদকীয় নিবন্ধে অনেকবার লিখেছি। আমরা আশাবাদী ছিলাম, দেশের পূর্বাঞ্চলীয় বিভাগ চট্টগ্রাম ও সিলেটের সাথে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় জেলাগুলোর সংক্ষিপ্ত যোগাযোগ স্থাপনে চাঁদপুর ও শরীয়তপুরের মধ্যে একদিন ফেরি চালু হবেই। কেননা আমাদের মাঝে আশির দশকেই এ আশার সঞ্চার করেছিলেন তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মিজানুর রহমান চৌধুরী। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রথম মেয়াদে ক্ষমতায় থাকার শেষ দিকে (২০০০ সালের ২৫ এপ্রিল) এ ফেরির উদ্বোধন করে যান, যা খুব দ্রুত বাস্তবতায় উপনীত হয়। আজ সে ফেরির কারণেই মেঘনা সেতু হতে যাচ্ছে, তা নিঃসন্দেহে অপরিমেয় আনন্দের। আমরা এজন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নিকট অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।