প্রকাশ : ২১ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
এবার হবেই আধুনিক নৌ টার্মিনাল
চাঁদপুর থেকে ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন রূটে পাকিস্তান আমলে এবং স্বাধীনতার পর প্রায় দেড় থেকে দুদশক ধরে কাঠ দ্বারা নির্মিত মানে কাঠ বডির লঞ্চগুলোর প্রাধান্য ছিলো। এক সময় চাঁদপুর বড় স্টেশন লাগোয়া ডাকাতিয়া নদীর তীরে স্টিমার ঘাট থাকলেও কোনো লঞ্চ ঘাট ছিলো না। লঞ্চগুলো এসে ডাকাতিয়া নদীতে নোঙ্গর করতো এবং যাত্রীরা লঞ্চ থেকে নৌকায় নেমে তীরে পৌঁছতো। পাকিস্তানের স্বৈরশাসক আইউব খানের শাসনামলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটে তৈরি হয় মোটামুটি সুদৃশ্য টার্মিনাল। এ টার্মিনালে যাত্রীদের প্রতীক্ষা কক্ষ (ওয়েটিং রুম), টয়লেট, নামাজের জায়গা, পুলিশ ফাঁড়ি, বিআইডব্লিউটিএ’র কর্মকর্তাদের অফিস, মালামাল রাখার গোডাউন, রেস্টুরেন্ট, বেশ কিছু দোকান, ছাউনিবিশিষ্ট গ্যাংওয়ে ও দীর্ঘ পন্টুন ছিলো। ২০০০ সালে হঠাৎ ডাকাতিয়ার ভাঙ্গনে এই টার্মিনালটি ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত ও ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়ে। তারপর পূর্বদিকে কয়েকশ’ গজ দূরে কয়লাঘাট নামক স্থানে ছোট্ট পরিসরের একটি টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। পাশাপাশি বড়স্টেশন থেকে আধা কি.মি. দূরে মেঘনার তীরে বিরাট পরিসরে অস্থায়ী স্থাপনায় বিকল্প লঞ্চ টার্মিনাল নির্মাণ করা হয়। উদ্দেশ্যে ছিলো ভর বর্ষায় চাঁদপুর বড়স্টেশন মোলহেড সংলগ্ন মেঘনা ও ডাকাতিয়া নদীর মিলনস্থলের প্রচণ্ড ঘূর্ণাবর্ত (আটলান্টিকের বারমুডা ট্রায়াঙ্গেলের ন্যায়) এড়াতে এবং অতীতের ন্যায় ভয়াবহ লঞ্চডুবি থেকে রক্ষা পেতে নিরাপদে লঞ্চ ভিড়ানো এবং নির্দিষ্ট রূটে নির্বিঘেœ চলাচল নিশ্চিত করা।
|আরো খবর
এভাবেই ক’বছর ধরে কয়লা ঘাট টার্মিনাল থেকে বছরের ৬-৭ মাস এবং বিকল্প টার্মিনাল থেকে ৪-৫ মাস লঞ্চ চলাচল করতো। কিন্তু চাঁদপুর-ঢাকা রূটে ও অন্যান্য রূটে স্টিল বডির বড় বড় লঞ্চ ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকায় কয়লা ঘাটের ছোট্ট টার্মিনালে স্থান সঙ্কুলান হচ্ছিলো না এবং ফাল্গুন-চৈত্রে ডাকাতিয়ায় নাব্যতা সঙ্কটহেতু লঞ্চ ঘোরাতে সমস্যা হচ্ছিলো। এমতাবস্থায় কয়লাঘাট হতে বিকল্প লঞ্চ টার্মিনালের অস্থায়ী স্থাপনায় স্থায়ীভাবে অর্থাৎ বছরের পুরো সময়ের জন্যে টার্মিনাল স্থানান্তরিত হয়। এর পেছনে কয়লাঘাটের টার্মিনাল অভিমুখী সংযোগ সড়কগুলোর অপ্রশস্ততা, বিশেষ করে স্ট্র্যান্ড রোডে রড-সিমেন্ট ব্যবসায়ীদের ট্রাক, পিকআপের কারণে অন্যান্য যান চলাচলে সৃষ্ট অচলাবস্থা এড়ানোর উদ্দেশ্যও কাজ করেছে।
বিকল্প নৌ টার্মিনালে স্থানান্তরিত বর্তমান স্থায়ী লঞ্চঘাটের সামনে রয়েছে বিশাল চত্বর, অনেকটা ফুটবল খেলার মাঠের মতোই। এর ফলে রিকশা, অটোবাইক, সিএনজি অটোরিকশা, প্রাইভেট কার, মাইক্রোবাস ইত্যাদি ছোট ছোট যানবাহনের পার্কিংয়ে ব্যাপক সুুবিধা সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু যাত্রীদের অতি প্রয়োজনীয় সুবিধাদি মোটেও নিশ্চিত হয়নি। লঞ্চ ভিড়ার পন্টুন থেকে কয়েকশ’ গজ দূরবর্তী স্থানে টয়লেটবিহীন নিম্নমানের যাত্রী ছাউনি এবং ছাউনিবিহীন জোড়াতালি মার্কা গ্যাংওয়ের কারণে এই টার্মিনাল দিয়ে যাত্রী চলাচল ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। খাড়া কাঠের সিঁড়ি দিয়ে পন্টুনে ওঠানামা করতে গিয়ে প্রায়শই যাত্রীরা ছোট-বড় দুর্ঘটনার শিকার হয়। এমতাবস্থায় একটি আধুনিক নৌ টার্মিনাল নির্মাণের জন্যে ভুক্তভোগী যাত্রীদের পক্ষ থেকে জোরালো দাবি উঠে। সেমতে চাঁদপুর সদর আসনের এমপি ডাঃ দীপু মনির ঐকান্তিক চেষ্টায় ২০১৬ সালের ১০ নভেম্বর ‘চাঁদপুরে আধুনিক নৌ-টার্মিনাল প্রকল্প’ নামে একটি প্রকল্প অনুমোদন লাভ করে। বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৬৫ থেকে ৭০ কোটি টাকা। কিন্তু নানা কারণে এ প্রকল্প বাস্তবায়নে দীর্ঘসূত্রিতা তৈরি হয়। এর ফলে ভুক্তভোগী যাত্রীরা হতাশাগ্রস্ত হয়।
গত ১৯ এপ্রিল শিক্ষামন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপি ২০১৯ হতে বর্তমান সময় পর্যন্ত চাঁদপুর জেলায় বাস্তবায়িত ও বাস্তবায়নাধীন প্রকল্প নিয়ে চাঁদপুর সার্কিট হাউজে পর্যালোচনা সভায় বসলে জানা যায় যে, চাঁদপুর আধুনিক নৌ-টার্মিনাল নির্মাণে টেন্ডার কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। চলতি বছরের অক্টোবর-নভেম্বরে কাজ শুরু হবে। চাঁদপুর নদী বন্দর কর্মকর্তা জানান, ঢাকার সদরঘাটস্থ নৌ টার্মিনালে যেসব সুবিধা রয়েছে, চাঁদপুরে নির্মিতব্য আধুনিক নৌ-টার্মিনালে সেসব সুবিধা ভোগ করতে পারবে লঞ্চযাত্রীরা। বিআইডব্লিউটিএ’র অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী ফরহাদুজ্জামান জানিয়েছেন, যেহেতু টেন্ডার প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে, আশা করি দ্রুত দৃশ্যমান কাজে হাত দেয়া হবে। কাজ শেষ হলে চাঁদপুর লঞ্চঘাটের চেহারাই পাল্টে যাবে। তাঁর এমন বক্তব্যে চাঁদপুরবাসীসহ যাত্রীদের মনে আস্থা জন্মেছে এবং তারা বলছেন, আশা করি এবার চাঁদপুরে হবেই আধুনিক নৌ-টার্মিনাল। আমরাও তেমনটি মনে করছি।