প্রকাশ : ০৩ এপ্রিল ২০২২, ০০:০০
চৈত্রের খরতাপে উত্তপ্ত ধরণীতে এবার শুভাগমন ঘটলো পবিত্র মাহে রমজানের। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের উত্তাপ, ভোজ্যতেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় বিভিন্ন পণ্যের ঊর্ধ্বগতির উত্তাপে বিশে^র মুসলমানদের মাঝে রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের বারতা নিয়ে এলো এই রমজান। রমজান হলো ইসলামী বর্ষপঞ্জিকা অনুসারে নবম মাস, যে মাসে সারা বিশে^র মুসলমানগণ রোজা পালন করে থাকে। এই রোজা হলো ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তৃতীয়।
‘রমজান’ শব্দটির অর্থ ‘তাপমাত্রা’ বা ‘শুষ্কতা’। রোজা বা সিয়াম সাধনায় এই রমজানে মুসলমানদের পাপ পঙ্কিলতা যেনো সব জ¦লে যায়, পুড়ে ছারখার হয়ে যায়। সেজন্যে প্রত্যেক প্রাপ্ত বয়স্ক মুসলমানের জন্যে রোজা পালন ফরজ বা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহপাকের এরশাদ হচ্ছে, হে মুমিনগণ! তোমাদের জন্যে রোজা (সিয়াম) ফরজ করা হয়েছে, যেমনটি তোমাদের পূর্ববর্তীদের জন্যেও করা হয়েছিলো, যাতে তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহ ভীরুতা অবলম্বন করতে পারো। একই সুরার ১৮৪ নম্বর আয়াতের শেষে বলা হয়েছে, আর সিয়াম পালন করাই তোমাদের জন্যে অধিকতর কল্যাণকর, যদি তোমরা জানতে। ১৮৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, রমজান মাস, এ মাসেই মানুষের জন্যে আলোর দিশা এবং সৎপথের স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যমিথ্যার পার্থক্যকারীরূপে কোরআন অবতীর্ণ হয়েছে। সুতরাং তোমাদের মধ্যে যারা এ মাস পাবে তারা যেন এ মাসে সিয়াম (রোজা) পালন করে।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদিসে জানা যায়, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি পরিপূর্ণ বিশ্বাস ও পর্যালোচনাসহ রমজান মাসের সিয়াম পালন করবে, তার পূর্ববর্তী ও পরবর্তী গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে। (সহীহ বুখারী : ৩৮, সহীহ মুসলিম : ৭৬০)। প্রশ্ন হলো, কতোজন মুসলমান যথানিয়মে রোজাকে সাধনারূপে পালন করে। অধিকাংশজনই রমজানের শুরুতে কাক্সিক্ষত সাধনায় কমণ্ডবেশি লিপ্ত হলেও রহমতের এক দশক না যেতেই আসন্ন ঈদ পালনের জন্যে তারা সর্বোচ্চ সামর্থ্য ব্যয় করে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়। আবার অনেকে রোজা না রেখেও ঈদ পালনের জন্যে বৈধ-অবৈধ পন্থায় নানা পদক্ষেপ নেয়। এজন্যে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভাষ্য মতে, রমজানে অপরাধ প্রবণতা তুলনামূলকভাবে অন্য মাসের চেয়ে অনেক বেড়ে যায়।
রমজান প্রকৃত অর্থে মুসলমানদের জন্যে একটি প্রশিক্ষণের মাস। সাহরী, সারাদিন উপবাসব্রত, ইফতার ও তারাবীহ নামাজ এবং বহুবিধ ইবাদতের মধ্য দিয়ে মুসলমানরা কঠোর নিয়মশৃঙ্খলা শেখার প্রশিক্ষণ পায় এই মাসে। এই প্রশিক্ষণ নেয়ার চেয়ে যারা শুধু রোজা রাখার প্রদর্শনেচ্ছা করে ঈদের আনন্দকে মুখ্য ভাবে, তারা অবশ্যই দুর্ভাগা। এই দুর্ভাগাদেরকে করতে হবে সচেতন, যাতে তারা রোজার সুফলকে আয়ত্ত করতে পারে। এজন্যে যার যার অবস্থান থেকে দায়িত্বপালনের গুরুত্বকে অস্বীকার করা যায় না। মহান আল্লাহ এমন দায়িত্বপালনের তৌফিক দান করুন। আমিন।