প্রকাশ : ২৫ মার্চ ২০২২, ০০:০০
চাঁদপুর জেলার বিভিন্ন স্থানে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের অনুমোদন ও ছাড়পত্র না নিয়ে মিনি ড্রেজার দিয়ে ডাকাতিয়া নদীসহ অন্যান্য ছোট-বড় জলাশয়, এমনকি ফসলি জমি থেকে মাটি/বালু উত্তোলন দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছিলো। এটা ছিলো অনেকটা অনিয়ন্ত্রিত। কিন্তু চাঁদপুরের বর্তমান জেলা প্রশাসক এ বিষয়টি কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রণের উদ্যোগ নেন, যার ফলে আগের মতো কেউ প্রকাশ্যে বেপরোয়াভাবে মিনি ড্রেজার ব্যবহারের সাহস দেখাচ্ছে না। জেলা প্রশাসক বর্তমানে মেঘনা নদীতে অবৈধভাবে ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। তাঁর আবেদনের প্রেক্ষিতে জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের উচ্চ পর্যায়ের এক সভা অনুষ্ঠিত হয় গত সোমবার। কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে এ সভায় মেঘনা থেকে বালু উত্তোলন সংক্রান্ত সকল কাগজপত্র এবং উচ্চ আদালতের নির্দেশনার বিষয়সহ সকল কিছু যাচাই ও বিস্তারিত পর্যালোচনা করা হয়।
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী চাঁদপুর কণ্ঠকে বলেন, নদীতে বর্তমানে যে ড্রেজিং করা হচ্ছে তা আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী করা হচ্ছে না। ড্রেজিং বলতে যা বোঝায় সেভাবে করা হচ্ছে না। নির্দিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে যেসব মৌজায় ড্রেজিংয়ের অনুমতি দেয়া হয়েছে, সেসব মৌজার অধিকাংশ ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়ে গেছে। অতএব, এখন যেসব ড্রেজিং চলছে তা সম্পূর্ণ অবৈধ। এসব অবৈধ ড্রেজিংয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আমি জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে চাঁদপুরের প্রশাসনকে নির্দেশ দিয়েছি। অবৈধ সব ড্রেজার এমনকি বালুবাহী বাল্কহেড আটক করারও নির্দেশ দিয়েছি। কারণ, আদালত এবং কর্তৃপক্ষ নদীর নাব্যতা রক্ষার্থে ড্রেজিংয়ের মাধ্যমে ডুবোচর অপসারণের অনুমতি ও আদেশ দিয়েছে। বালু বিক্রি করতে বলেনি। তাই অবৈধভাবে বালু উত্তোলনের পাশাপাশি বালু বিক্রিও অবৈধ।
ইতোমধ্যে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক অঞ্জনা খান মজলিশ জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের প্রাগুক্ত সভার রেজুলেশন পেয়েছেন এবং সেমতে বসে করণীয় নির্ধারণ করবেন বলে গণমাধ্যমকে জানিয়েছেন। তিনি আশ^স্ত করেছেন, আমরা জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে যা যা করণীয় তা-ই করবো। এদিকে মেঘনা নদী থেকে যথাযথ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন এবং নিয়ম মেনেই ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনের দাবি করেছে মেসার্স সেলিম এন্টারপ্রাইজ। তারা অবৈধ ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনে ব্যবস্থাগ্রহণের দাবি জানিয়েছে। এমতাবস্থায় জেলা প্রশাসন অ্যাকশনে গেলে অবৈধ ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনের বিষয়টি ক্রমশ দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট হবে বলে আমাদের বিশ^াস। ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনে কার বৈধতা আছে কার বৈধতা নেই সেটি প্রমাণ করাটাই এখন সময়ের দাবি। কেননা এ বিষয়টি নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক লেখালেখি চলছে। ইতোমধ্যে সংক্ষুব্ধ ব্যক্তির মামলা খারিজ হয়েছে এবং লিগ্যাল নোটিস জারি হয়েছে। আমরা মনে করি, এর মধ্য দিয়েও সংশ্লিষ্টদের নিজস্ব অবস্থান পরিষ্কার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে।
চাঁদপুরে মেঘনা, পদ্মা, ডাকাতিয়া ও ধনাগোদা নদী যেহেতু আছে, এগুলোর নাব্যতা রক্ষার নামে বৈধ-অবৈধ ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনের বিষয়টি প্রায় দু দশক ধরেই চলমান আছে। এতোটা দীর্ঘ সময়ে এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন উদ্যোগ না নিলেও গত দু-আড়াই মাসে বেশ সোচ্চার হয়েছে। সেটাকে জনগণ স্বাগত জানিয়েছে। কেননা এর ফলে নদীগুলোতে বিশেষ করে মেঘনায় অবৈধ ও অপরিকল্পিত ড্রেজিং অন্তত বন্ধ হবে এবং অনেকের চাপা ক্ষোভ নিরসন হবে। আমরা নাব্যতা রক্ষায় নদীতে ড্রেজিং ও বালু উত্তোলনের বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ’র ভূমিকা সম্পর্কে নৌ মন্ত্রণালয়ের সুস্পষ্ট বক্তব্য প্রত্যাশা করছি। এর ফলে কিছু প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমাদের ধারণা।